বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে টেলিটকের ফাইভজি প্রকল্প স্থগিত
2022.08.02
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশ্নের মুখে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটকের ৫জি ইন্টারনেট সেবা চালুর প্রকল্প সরকারের অনুমোদন পায়নি।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৫জি ইন্টারনেট সেবা চালুর প্রস্তাবটি স্থগিত হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ. মান্নান মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, এই প্রকল্প পাশ না হওয়ার কারণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা। এই প্রকল্প অনুমোদিত হলে প্রকল্পের ৮০ ভাগ খরচ বৈদেশিক মুদ্রায় করতে হতো বলে তিনি জানান।
মন্ত্রী মান্নান বলেন, একনেক সভায় টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হলে প্রধানমন্ত্রী সেটিও নাকচ করে দেন।
মূলত নোকিয়া এবং চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ের কারিগরি সহায়তায় গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ঢাকা শহরের কিছু অংশে সীমিতভাবে ৫জি সেবার ট্রায়াল রান পরিচালনা করেছিল টেলিটক।
সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমান মাস থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে ৫জি ইন্টারনেট সেবা চালুর প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠায় টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
ট্রায়াল রানের সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে সহসাই ৫জি সেবা চালু করা হবে, যা মঙ্গলবার স্থগিত হলো।
পরিকল্পনামন্ত্রী বেনারকে বলেন, “টেলিটকের বাণিজ্যিক ৫জি ইন্টারনেট সেবা চালুর প্রস্তাব আজকের বৈঠকে পাশ হয়নি। এই প্রস্তাবের ব্যাপারে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই প্রশ্ন তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সারাদেশে এখনও ৪জি সেবা চালু করা যায়নি। অনেক জায়গায় ৩জি সেবাই চলছে। আগে সারা দেশে ভালো করে ফোর-জি সেবা চালু হোক; পরে দেখা যাবে।”
প্রকল্পটি অনুমোদন না দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আজ অনুমোদিত হলে এই প্রকল্পের শতকরা ৮০ ভাগ ব্যয় বৈদেশিক মুদ্রায় করা হতো। আমাদের নীতি হলো বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন না করা।”
এম. এ. মান্নান বলেন, “৫জি অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি। কিন্তু আমার জেলার অনেক স্থানেই ৪জি সেবা চালু করা যায়নি। আবার আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেনি যে আমাদের এখনই ৫জি সেবা দরকার।”
তিনি বলেন, “বৈঠকে কিছু কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার না করে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা বললে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক ঋণ নিলেও অনেক শর্ত থাকে। আগে সেগুলো জানতে হবে। এরপর একনেকে আলোচনা করে সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে।”
৫জি সেবা চালুর মতো অবকাঠামো নেই
মোবাইল ফোন প্রযুক্তির মধ্যে সর্বাধুনিক হলো ৫জি সেবা। এই সেবার মাধ্যমে অনেক দ্রুত গতির ইন্টারনেট পাওয়া যায়। তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৫জি সেবা চালুকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে মনে করা হয়।
মূলত ২০১৭ সালে ৫জি ইন্টারনেট সেবা চালু হয়। দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বে প্রথম ৫জি সেবা চালু করে। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বিশ্বে ৭০টি দেশে ৫জি সেবা চালু করা হয়েছে।
বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতকে সামনে এগিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে ৫জি সেবা চালুর কথা ঘোষণা করা হয়।
তবে ব্যবহারকারীদের অনেকেই জানান, ৫জি সেবার মান তেমন নয়।
বর্তমানে ঢাকা শহরের যেসব এলাকায় টেলিটক ৫জি ট্রায়াল রান পরিচালনা করা হয়েছে, সেখানে কোনো ব্যবহারকারী ৫জি ব্যবহার করতে চাইলে তাঁকে টেলিটকের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। সেটি ব্যবহারের অনুমতি মিললে তবেই ৫জি সেবা ব্যবহার করা যায়।
আবার ৫জি সাধারণ স্মার্টফোন দিয়ে পাওয়া যায় না। মোবাইল ফোন অথবা যন্ত্রটি ৫জি সেবা দেয়ার উপযুক্ত হতে হবে।
টেলিযোগাযোগ গবেষক আবু সাঈদ খান বেনারকে বলেন, “সত্য কথা বলতে কি, বাংলাদেশে ৫জি সেবা চালু করার মতো কোনও অবকাঠামো নেই। কোন অপটিকাল ফাইবার নেটওয়ার্ক নেই।”
তিনি বলেন, “সেকারণেই বাংলাদেশে ৫জি ইন্টারনেট সেবা চালু করা সম্ভব নয়। টেলিটকের ৫জি সেবা চালু করার কোনো সক্ষমতা নেই। তারা এখনও ৩জি সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে তারা কীভাবে ৫জি সেবা দেবে সেটি আমার বোধগম্য হচ্ছে না।”
আবু সাঈদ খান বলেন, “ডিসেম্বরে টেলিটক ট্রায়াল করে বলেছে, ট্রায়াল সফল হয়েছে। বিষয়টিকে যদি সহজ করে বলা হয়, সেটি হলো নিজেই পরীক্ষা দিয়ে নিজেই বলেছে পাশ করেছে।”
তিনি বলেন, “সরকার টেলিটকের এই অবাস্তব প্রস্তাবনা অনুমোদন না দিয়ে সঠিক কাজ করেছে। এই প্রকল্প পাশ হলে রাষ্ট্রীয় কিছু বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হতো।”
টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাহাব উদ্দিন স্বীকার করেন যে ৫জি সেবা চালুর ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
তিনি মঙ্গলবার বেনারকে বলেন, “আসলে আমরা ফোর-জি সেবা চালু করতে পারিনি। টেলিটক মূলত ভয়েসের জন্য ২জি এবং ইন্টারনেট সেবার জন্য ৩জি সেবা প্রদান করে।”
ফোর-জি চালু না হওয়ার কারণ সম্পর্কে সাহাব উদ্দিন বলেন, “৪জি চালু করতে নিয়মিত বিনিয়োগ দরকার যেটি টেলিটকের ক্ষেত্রে হয় না। আমরা চেষ্টা করছি, খুব তাড়াতাড়ি সারাদেশে ৪জি সেবা চালু করার।”