ভারতে চিকিৎসা করতে গিয়ে নিখোঁজ বাংলাদেশের সংসদ সদস্য
2024.05.20
ঢাকা
ভারতে চিকিৎসা করতে গিয়ে সাতদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার।
গত ১২ মে স্থলপথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যাবার পর ১৪ মে থেকে নিখোঁজ সংসদ সদস্যের বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের পুলিশ কাজ করলেও সোমবার পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সংবাদ পাওয়া যায়নি।
আনোয়ারুল আজিমের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ সোমবার সন্ধ্যায় (স্থানীয় সময়) বেনারকে বলেন, “আমরা বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি, কিন্তু আমরা এমন কোনো খবর পাইনি যা আমাদের আশাবাদী করতে পারে।”
সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্যরা এখন ভারতে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “বিদেশের মাটিতে গিয়ে তিনবারের নির্বাচিত একজন এমপির এমন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা খুবই উদ্বেগের।”
কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন উপ-দূতাবাসের প্রেস সচিব রঞ্জন সেন।
টেলিফোনে তিনি বেনারকে বলেন, “কলকাতা পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তারা যেসব তথ্য পাচ্ছে তার সবই বিশ্লেষণ করে দেখছে।”
বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হবার পর নিখোঁজ
কলকাতার উত্তর শহরতলি বরাহনগর এলাকার সিঁথিতে স্থানীয় ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আনোয়ার।
আনোয়ারুল আজিমের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাঁর মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করেছে বলে জানানো হয় সোমবার বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে।
ভারতীয় পুলিশের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আনোয়ারুল আজিমের মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তাঁর ফোন “কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারের কোনো জায়গায়।”
গোপাল বিবিসিকে জানিয়েছেন, ১৩ মে তাঁর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যে ভাড়া করা গাড়িতে উঠেছিলেন আনোয়ার আজিম, সেটির চালকের সন্ধান পেয়েছে বলেই স্থানীয় পুলিশের তরফে তাঁকে জানানো হয়েছে।
“পুলিশের কাছে আমি নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলাম। তাঁরা ওই গাড়িটিকে খুঁজে বের করে চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ওই চালক নাকি পুলিশকে জানিয়েছেন যে সংসদ সদস্যের সঙ্গে একজন বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন। এদের দুজনকে তিনি কলকাতা সংলগ্ন নিউ টাউন এলাকায় ছেড়ে দেন ১৩ মে,” বিবিসিকে বলেন গোপাল।
উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
রোববার ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন সংসদ সদস্য আনোয়ার আজিমের স্ত্রী ও মেয়েরা।
পরে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, তিনি (আনোয়ার) একটি বাংলাদেশি সিম এবং একটি ভারতীয় সিম ভারতে ব্যবহার করেছেন।
“দুটি নম্বর কখনও বন্ধ এবং কখনও চালু পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গেও কথা হচ্ছে। আনোয়ার আজিমের কী হয়েছে তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ,” বলেন হারুন।
তিনি জানান, ১৬ মে সকালে আজিমের ফোন থেকে তাঁর এপিএস ও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার কাছে ফোন করা হয়। কিন্তু কেউ ফোন ধরেননি। ওই সময় তাঁর অবস্থান মুজাফফরাবাদে শনাক্ত করা হয়েছে।
তাঁরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন এবং ভারতীয় পুলিশের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন বলে জানান হারুন অর রশীদ।
রোববার ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, সংসদ সদস্যকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, আনোয়ার আজিম “ফিরে আসবেন।”
“আমাদের এনএসআই (জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা) কাজ করছে। ভারতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানো হয়েছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই,” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
যা বলা হয়েছে নিখোঁজ ডায়েরিতে
এমপি আনোয়ার আজিম নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গত ১৮ মে ভারতের বরাহনগর থানায় মিসিং ডায়েরি করেছেন তাঁর বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। ওই ডায়েরির একটি কপি বেনারের হাতে এসেছে। সেখানে গোপাল বিশ্বাস উল্লেখ করেছেন– গত ১২ মে আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন আনোয়ার।
আনোয়ার চিকিৎসার প্রয়োজনে গোপালের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন উল্লেখ করে ডায়েরিতে বলা হয়, “পরের দিন দুপুর ১.৪১ মিনিটে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে আমার বাড়ি থেকে রওনা হয়ে যান। যাওয়ার সময় বলে যান আমি দুপুরে খাব না। সন্ধ্যেবেলা ফিরে আসব।”
বের হবার সময় আনোয়ার নিজে গাড়ি ডেকে বিধান পার্ক কলকাতা পুলিশ স্কুলের সামনে থেকে গাড়িতে ওঠেন বলে জানানো হয় ডায়েরিতে।
এতে বলা হয়, “উনি সন্ধ্যে বেলা না ফিরে হোয়াটসঅ্যাপ এ ম্যাসেজ করে জানায় আমি বিশেষ কাজে দিল্লিতে চলে যাচ্ছি এবং পৌঁছে ফোন করব, তোমাদের ফোন করার দরকার নেই।”
ডায়েরিতে গোপাল বলেন, “গত ১৫ মে সকাল ১১:২১ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজ করে জানায় আমি দিল্লি পৌঁছালাম, আমার সাথে ভিআইপিরা আছে। ফোন করার দরকার নেই, এই একই ম্যাসেজ নিজের বাড়িতে এবং পিএ-কে (এমপির ব্যক্তিগত সহকারী) ফরোয়ার্ড করে।”
গত ১৬ মে সকালে আনোয়ার তাঁর পিএকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করতে পারেনি জানিয়ে ডায়েরিতে বলা হয়, পরে যখন রিং ব্যাক করে তখন আর আনোয়ারের ফোনে কোনো যোগাযোগ করা যায়নি।
গত ১৭ মে আনোয়ারের মেয়ে গোপালকে ফোন করে জানান তাঁর বাবার সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারছে না।
“তারপর থেকে আমি ওনার যাবতীয় পরিচিতদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করি এবং সবাই তারপর থেকে ওনাকে (এমপি) ফোন করে কিন্তু কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ১৮ মে বাধ্য হয়ে বরাহনগর থানায় এসে মিসিং ডায়েরি নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি,” যোগ করেন গোপাল।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কোনো সংসদ সদস্যের এভাবে নিখোঁজ হবার ঘটনা এটিই প্রথম।