মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশি ট্রলারে গুলি, যোগাযোগহীন সেন্ট মার্টিনে খাদ্য সংকট
2024.06.11
কক্সবাজার ও ঢাকা

মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের দিকে গুলি চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে গত সাত দিন ধরে মূল ভূ-খণ্ডের সাথে দেশের একমাত্র কোরাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এর ফলে খাবার ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটে পড়েছেন দ্বীপটির প্রায় দশ হাজার বাসিন্দা।
তবে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌ রুটে চলাচলের বিকল্প রুট খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার দুপুরেও সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফগামী দুটি ট্রলার ও কয়েকটি স্পিডবোট লক্ষ্য করে মিয়ানমারের দিক থেকে গুলি চালানো হয়। এর আগে গত বুধবার ও শনিবারে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বাংলাদেশি ট্রলারকে লক্ষ্য করে দুই দফায় গুলি চালানো হয়েছে।
মিয়ানমারের বর্ডার পুলিশ (বিজিপি) নাকি সেখানকার বিদ্রোহী কোনো গোষ্ঠী গুলি চালিয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বেনারকে বলেন, “আপৎকালীন রুট হিসেবে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমে জেটি ঘাট ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটি হলে নতুন রুটে নৌযান চলবে।”
অস্থায়ী জেটি তৈরি করে বিশেষ ব্যবস্থায় নৌ চলাচল শুরু করা গেলে সংকট কেটে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।
আজও মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গুলি চালানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি আসলে এই গুলি বর্ষণের ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে। মিয়ানমার বর্ডার পুলিশ করছে নাকি বিদ্রোহী আরাকান আর্মি করছে তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।”
আপাতত স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে ওই এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। “পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের জরুরি ভিত্তিতে কীভাবে খাবার সরবরাহ করা যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে,” বলেন আদনান চৌধুরী।
প্রাণ ভয়ে দ্বীপবাসী
গত কয়েক দিনে দুই-তিনটি নৌকায় মিয়ানমার থেকে গুলি চালানো হয়েছে জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, নৌযান চলাচল বন্ধের কারণে খাবার ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বেনারকে বলেন, “আজকে পাঁচ দিন ধরে সেন্ট মার্টিনে খাবারের সংকট। এ রকম হলে ১০ হাজার মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “জরুরি ওষুধ নেই এখন। সেন্ট মার্টিনে দোকান-ফার্মেসি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসাও বন্ধ। নাফ নদীতে মিয়ানমার বাহিনী টহল দিচ্ছে, সে পথ দিয়ে এলে গুলি করে। বিকল্প কোনো নৌ রুট নেই।”
এভাবে চলতে থাকলে সামনে আরও কঠিন পরিস্থিতি হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাব, এটি দ্রুত সমাধান করা হোক।”
এদিকে ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় টেকনাফ থেকে কোনো ধরনের প্রয়োজনীয় পণ্য আনতে পারেননি বলে বেনারকে জানান দ্বীপের মুদি দোকানি মোহাম্মদ ইসলাম।
তিনি বলেন, “দোকানে থাকা সব কিছু শেষের পথে। চাল ছাড়া কিছু নেই বললেই চলে। এভাবে চলতে থাকলে দ্বীপের মানুষদের না খেয়ে থাকতে হবে।”
বেনারের সঙ্গে আলাপকালে সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
সেন্ট মার্টিন বোট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বেনারকে বলেন, “বোটে প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখে মানুষ ভয় পেয়েছে। ওই পথ ছাড়া সেন্ট মার্টিনে আসার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা বা রুট নেই।”
প্রতিদিন সেন্ট মার্টিন-টেকনাফ নৌ রুটে ছয় থেকে সাতটি বোটের মাধ্যমে শতাধিক মানুষ আসা-যাওয়া করেন। এছাড়া এই রুটে খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বহন করা হয় বলেও জানান তিনি।
‘করণীয় ভাবতে হবে’
মিয়ানমার এলাকা থেকে বাংলাদেশে মিয়ানমার বর্ডার পুলিশ (বিজিপি) নাকি সেখানকার বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মি গুলিবর্ষণ করছে তা সরকারকে “দ্রুত নিশ্চিত হতে হবে” বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, “যদি বিজিপি করে থাকে, তাহলে এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আর বিদ্রোহী গ্রুপ হলে কী করণীয় তাও ভাবতে হবে।”
এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি বড়ো সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শুধু এখন নয়, ভবিষ্যতের জন্যও বাংলাদেশকে এই এলাকা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।”
এদিকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে গুলি বর্ষণের বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) সর্তক অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে বিজিবির টেকনাফের-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “সার্ভিস ট্রলারকে গুলিবর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বিজিপির কাছে প্রতিবাদ লিপি পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।”