পুলিশের জন্য রাশিয়া থেকে হেলিকপ্টার কিনছে সরকার
2021.10.06
ঢাকা
দেশে প্রথমবারের মতো পুলিশের জন্য পরিবহন ও সামরিক সুবিধাযুক্ত হেলিকপ্টার কিনছে সরকার। সরকারি পর্যায়ে রাশিয়া থেকে ৪২৮ কোটি টাকার সমপরিমাণ ৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এম.আই সিরিজের দুটি হেলিকপ্টার কেনা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বুধবার অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম. মুস্তাফা কামালের সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় হেলিকপ্টার দুটি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয় বলে সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন।
এই নিয়ে গত বছর নভেম্বরের পর রাশিয়া থেকে মোট চারটি হেলিকপ্টার কিনল সরকার। ২০২০ সালের নভেম্বরে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর জন্য দুটি এম.আই-১৭১ সিরিজের হেলিকপ্টার সংযোজন করা হয়েছিল।
তবে নতুন দুটি হেলিকপ্টার কবে সরবরাহ করা হবে সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছু জানানো হয়নি।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জেএসসি হেলিকপ্টার এই দুটি হেলিকপ্টার সরবরাহ করবে। সরকারি পর্যায়ে ক্রয় হবে বিধায় এগুলো কেনার জন্য কোনো দরপত্র আহ্বান করা হবে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
পুলিশের সক্ষমতা বাড়বে
সংশ্লিষ্টদের মতে, হেলিকপ্টার দুটির মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ.কে.এম. শহিদুল হক বুধবার বেনারকে বলেন, “এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত। পুলিশের হেলিকপ্টার দরকার। র্যাবের দুটি ছোট হেলিকপ্টার ছিল; পুলিশের ছিল না।”
“দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পুলিশ পাঠাতে হেলিকপ্টারের প্রয়োজন। যেমন সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম, বিভিন্ন চরাঞ্চলে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য হেলিকপ্টার ছাড়া উপায় থাকে না,” বলেন তিনি।
শহিদুল হক বলেন, “এ ছাড়া, অনেক সময় জঙ্গি অপারেশন পরিচালনা করতে অথবা আহত কোনো পুলিশ সদস্যকে দ্রুত চিকিৎসা দিতেও হেলিকপ্টার প্রয়োজন হয়।”
“সব মিলিয়ে হেলিকপ্টার পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। পৃথিবীর সব উন্নত পুলিশ বাহিনীর হেলিকপ্টার রয়েছে,” বলেন শহিদুল হক।
পুলিশের জন্য যে হেলিকপ্টার কেনা হচ্ছে সেগুলো এর আগে বিজিবির জন্য কেনা ‘এমআই সিরিজের’ জানিয়ে নিরাপত্তা বিশ্নেষক ও অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমডোর ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বুধবার বেনারকে বলেন, “এগুলো রাশিয়ায় তৈরি হয়।”
“এম.আই সিরিজের হেলিকপ্টারগুলো মূলত পরিবহন হেলিকপ্টার। তবে এগুলোতে মিসাইল, অস্ত্র, বিস্ফোরক পরিবহন করা যায়। সেই ব্যবস্থা রয়েছে। প্রয়োজনে এগুলোকে সামরিক কাজেও ব্যবহার করা যায়,” বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে রাশিয়ার হেলিকপ্টার এবং বিমান রয়েছে। রাশিয়ার বিমান ও হেলিকপ্টারের মান বেশ ভালো। রাশিয়া ছাড়াও আমাদের বিমান বাহিনীতে আমেরিকান এবং ইটালির হেলিকপ্টার রয়েছে।”
“তবে আমেরিকার হেলিকপ্টার এবং রাশিয়া ও চীনা হেলিকপ্টারের মধ্যে তুলনা চলে না। আমেরিকায় তৈরি হেলিকপ্টার ও বিমানের মেটালার্জি এবং ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি রাশিয়া ও চীনের চেয়ে অনেক ভালো। কিন্তু রাশিয়া ও চীনে তৈরি সামগ্রী তেমন টেকসই হয় না,” বলেন তিনি।
তাঁর মতে, “আমেরিকা এখন বাংলাদেশের কাছে সামরিক বিমান হেলিকপ্টার বিক্রি করতে আগ্রহী। আমাদের এই সুযোগ নেয়া উচিত।”
রাশিয়ার আভিয়া হেলিকপ্টার কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইটে জানায়, এম.আই-১৭১ হেলিকপ্টার আগের এম-৮ সিরিজের হেলিকপ্টারের আধুনিক সংস্করণ।
কোম্পানিটি এ পর্যন্ত মোট ১১ হাজার এম.আই-১৭১ সিরিজের হেলিকপ্টার তৈরি করেছে এবং সেগুলো বিশ্বের ৮০টি দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলোকে মাল্টিপারপাস হেলিকপ্টার বলে অভিহিত করা হয়েছে ওয়েবসাইটে।
এই হেলিকপ্টার বরফ এবং তীব্র তাপের মধ্যেও সমান কাজ করে জনিয়ে এতে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতিসংঘ মিশনে এই হেলিকপ্টার ব্যবহৃত হয়।