দুবাইয়ে পলাতক পুলিশ হত্যা মামলার আসামি ধরতে ইন্টারপোলের নোটিশ

আহম্মদ ফয়েজ
2023.03.24
ঢাকা
দুবাইয়ে পলাতক পুলিশ হত্যা মামলার আসামি ধরতে ইন্টারপোলের নোটিশ ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে রেড নোটিশের তালিকায় পুলিশ কর্মকর্তা খুনের মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের নাম।
[ছবি: ইন্টারপোল ওয়েবসাইটের স্ক্রিনশট]

বাংলাদেশের এক পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের নাম উঠেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন বা ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায়।

সম্প্রতি দুবাইয়ে তাঁর জুয়েলারি শপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানসহ একাধিক জনপ্রিয় ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানোর পরে আলোচনায় আসেন দীর্ঘদিন পলাতক হত্যা মামলার আসামি রবিউল।

বাংলাদেশ পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে রেড নোটিশের তালিকায় প্রকাশিত হয় রবিউলের নাম। সঙ্গে রয়েছে রবিউলের ছবি, জন্মস্থান, জন্ম তারিখ, বয়স, জাতীয়তা ও তাঁর বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের তথ্য।

রেড নোটিশে রবিউলকে একজন বাংলাদেশি হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ রয়েছে। ইন্টারপোলের তালিকায় ৬৩ তম বাংলাদেশি তিনি।

দুবাইয়ে নজরদারিতে রবিউল

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রবিউলকে আইনের আওতায় আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বাংলাদেশ মিশন কাজ করছে।

সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন সাংবাদিকদের জানান, রবিউল দুবাইয়ে নজরদারিতে রয়েছেন।

এর আগে গত ২০ মার্চ বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ খুনের আসামি দুবাইয়ের আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো রেড নোটিশ ইন্টারপোল গ্রহণ করেছে।

রবিউলের নাম আলোচনায় আসার পর থেকেই স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জোর আলোচনা শুরু হয়। অনেকই বলছেন, রবিউলের এই সম্পদের পেছনে বাংলাদেশের বেশ ক্ষমতাধর কারো হাত থাকতে পারে। যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রবিউল বলে আসছেন, তিনি সোনার ব্যবসা করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

দেশের বাইরে থাকা কয়েকজন সাংবাদিক বিভিন্ন মাধ্যমে দাবি করেছেন, রবিউলের সঙ্গে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন বেনজীর। নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, “আরাভ ওরফে রবিউল ওরফে হৃদয় নামে আমি কাউকে চিনি না। আমার সাথে তার এমনকি প্রাথমিক পরিচয়ও নেই।”

“আমি আমার ল’এনফোর্সমেন্ট ক্যারিয়ার এর পুরোটা সময় খুনি, সন্ত্রাসী, ড্রাগ ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, ভেজালকারি ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি কখনোই সখ্যতা নয়,” লিখেছেন বেনজীর।

পুলিশের সাবেক কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রবিউলের পেছনে আছেন কি না জানতে চাইলে আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আরাভের সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা আছে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।”

রবিউল নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেনজীর আহমেদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (খিলগাঁও জোন) অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তৎকালীন পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলাটি তদন্ত করে রবিউলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

২০১৮ সালের ৭ জুলাই মামুন এমরান খানকে হত্যার পরপরই রবিউল ভারতে পালিয়ে যান। ২০২০ সালে তিনি আরাভ খান হিসেবে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করে সেখান থেকে দুবাইয়ে চলে যান। ২০২৪ সাল পর্যন্ত দুবাইয়ে রবিউলের রেসিডেন্স পারমিট রয়েছে।

‘রবিউলকে দেশে ফেরানো সহজ হবে না’

বাংলাদেশ, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্পৃক্ত হয়ে পড়ায় হত্যা মামলার আসামি রবিউলকে দেশে ফেরানো খুব একটা সহজ কাজ হবে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা।

পুলিশের সাবেক প্রধান এ কে এম শহীদুল হক বেনারকে বলেন, “ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আইনিভাবে দুবাই পুলিশকে এগোতে হবে। দুবাই পুলিশ আরাভের অবস্থান চিহ্নিত করতে পারলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশ পুলিশকে জানাবে।”

যেহেতু আসামি ইতোমধ্যে আরাভ নামে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন, তাই বিষয়টি নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে জানান তিনি।

এদিকে “আরাভের ঘটনা তিনটি দেশ সম্পৃক্ত হওয়ায় তাঁকে দেশে ফেরানোর কাজটি জটিল হয়ে যেতে পারে,” বলে বেনারকে জানান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুন-অর-রশীদ।

তিনি বলেন, অভিযুক্ত রবিউলকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে গেলে বাংলাদেশেকে কূটনৈতিক চ্যানেলে আরব আমিরাত ও ভারতের সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।

“ভারতের পাসপোর্ট বাতিল করা গেলে হয়তো তাঁকে সরাসরি দুবাই থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে, অন্যথায় ভারতের আইনি বিষয় শেষ হলে আনতে হবে,” বলেন তিনি।

“ভারতের পাসপোর্ট থেকে গেলে আরাভকে প্রথমে ভারতে পাঠাবে দুবাই। সেখানে প্রতারণার মাধ্যমে পাসপোর্ট নেওয়ার কারণে তাকে বিচারের মুখোমুখি হয়ে সাজা শেষ করে দেশে ফিরতে হবে,” যোগ করেন এই আইনজীবী।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।