স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেবে না আওয়ামী লীগ
2024.01.24
ঢাকা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি দলীয় সদস্যদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেওয়ার পর স্থানীয় সরকার নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ে যে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে, তা মেটাতে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
সামনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে কাউকে দলীয় প্রতীক দেওয়া হবে না বলে বেনারকে জানান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম।
“দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে না,” বলেন তিনি।
দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে নৌকা প্রতীক না দেওয়ার জন্য দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়। প্রথম কারণ; সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা এড়ানো। দ্বিতীয় কারণ; স্থানীয় নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক করা।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সব নেতা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় তৃণমূলে বিভেদ তৈরি হয়েছে। এখন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে একজনকে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দিলে অন্যরাও স্বতন্ত্র ভোট করবে। এতে বিভেদ আরও বাড়বে। তার চেয়ে বরং উন্মুক্ত করে দেওয়াই ভালো হবে।
বর্তমান সরকার ২০১৫ সালে আইন সংশোধন করে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সেসব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।
বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকেই দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিরোধিতা করে আসছিল। বিগত নির্বাচনগুলোতে দলের সিদ্ধান্ত ভেঙে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, ওই সব নেতাদের বহিষ্কারও করেছিল বিএনপি।
২৩৩টি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা
আগামী মার্চ ও এপ্রিলে বিভিন্ন ধাপে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন মনে করছে, দলীয় প্রতীক না দিলে স্থানীয় নির্বাচন আরও অংশগ্রহণমূলক হবে।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রথম পর্যায়ে স্থানীয় সরকারসহ ২৩৩টি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব জাহাংগীর আলম।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহাংগীর আলম বলেন, “দলীয় প্রতীক রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তের বিষয়। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে সত্যিকার অর্থে সবাই অংশগ্রহণ করে। দলীয় প্রতীক না থাকলে আরও বেশি অংশগ্রহণ হবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।”
এক সময় স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো নির্দলীয়ভাবে কোনো মার্কা ছাড়াই হতো জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শামসুল আলম বেনারকে বলেন, “সেখানে সব দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা দল-মত নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করতেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে দলীয় মার্কা দিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন শুরু করে।”
তিনি বলেন, “সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে নৌকা মার্কার পাশাপাশি দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ায় দেখা গেলো সহিংসতা ও কোন্দল সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। দলীয় কোন্দল ও বিভেদ মেটানোর জন্য দলীয় প্রতীক ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ফিরে যাওয়া হচ্ছে বলে মনে হয়।”
এটা আওয়ামী লীগের কৌশল: বিএনপি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের মতে, “বিএনপি নির্বাচনে আসে কি না দেখার জন্য” আওয়ামী লীগ স্থানীয় নির্বাচনে প্রতীক না দেবার “এই কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করা বিএনপির ভেতর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলেও বেনারকে জানান নজরুল ইসলাম খান
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২১ ও ২০২২ সালে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনও বর্জন করেছিল বিএনপি।
এদিকে মঙ্গলবার বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখানোর কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, নির্বাচনকে সর্বজনীন করার জন্যই দলীয় প্রতীক থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে উপজেলা পর্যায়ে সঠিক নেতৃত্ব উঠে আসবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান বেনারকে বলেন, “আমরা স্থানীয় নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিচ্ছি, যে ভালো প্রার্থী সে আমার দলেরও হতে পারে, দলের বাইরেরও হতে পারে।”
তিনি বলেন, “বিএনপি হয়তো নির্বাচন করবে না। সুতরাং নির্বাচন আমাদের নিজেদের মধ্যেই হবে। নিজেদের মধ্যে যে জনপ্রিয় সে নির্বাচিত হয়ে আসবেন। গত নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করতে গিয়ে আমরা দেখলাম দলের শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। নিজেরাই সংঘাত করছে। তাতে আমাদের দলের নৌকা প্রতীকের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বেনারকে বলেন, “দলের জায়গা থেকে এই সিদ্ধান্ত সঠিক। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছিল দলে সেটার ফলশ্রুতিতে সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য তারা হয়তো এটা করেছে।”