বিনা পরোয়ানায় আটক বন্ধে পুলিশ কমিশনারকে বিএনপির অনুরোধ

আহম্মদ ফয়েজ
2023.03.23
ঢাকা
বিনা পরোয়ানায় আটক বন্ধে পুলিশ কমিশনারকে বিএনপির অনুরোধ রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমানকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ৭ ডিসেম্বর ২০২২।
[বেনারনিউজ]

বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি অভিযোগ করেছে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলের নেতা-কর্মীদের আটক করছে পুলিশ। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

সর্বশেষ গত রোববার ঢাকার একটি ক্লাব থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার ৫৪ জন নেতা-কর্মীকে আটক করে বনানী থানা পুলিশ।

বনানী থেকে একসঙ্গে ৫৪ নেতা-কর্মীকে আটকের পর বিষয়টি অনেকের নজরে এলেও এমন ঘটনা আরও আগে থেকেই চলছে—দাবি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামের।

বেনারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “প্রায় প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের কোনো না কোনো স্থান থেকে বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।”

তিনি বলেন, “পুলিশ বেছে বেছে বিএনপি’র গুরুত্বপূর্ণ কর্মী ও সংগঠকদের জেলে পাঠাচ্ছে।”

দলীয় নেতা-কর্মীদের আটক ঠেকাতে বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি’র একটি প্রতিনিধি দল। পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলে আব্দুস সালামও ছিলেন।

ওই বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বৈঠকে ঢাকা মহানগরে আমাদের নেতা-কর্মীদের বাসায় গিয়ে পুলিশি হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো ডিএমপি কমিশনারকে জানানোর পাশাপাশি কী কারণে গ্রেপ্তার হচ্ছে সেই বিষয়ে আলোচনা করেছি।”

তিনি বলেন, “পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে যাতে বিনা পরোয়ানায় কোনো নেতা-কর্মীকে ধরা না হয়।”

“বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল, আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি না যে কোনো বাড়িতে বা কোনো রেস্টুরেন্টে সভা করতে পারবে না। এটা আমরা ডিএমপি কমিশনারকে অবহিত করেছি। এভাবে যেন ধরা না হয়,” বলেন তিনি।

সালাম বলেন, পুলিশকে বলা হয়েছে গ্রেপ্তারের পর বলা হয়, তার বিরুদ্ধে ‘ওয়ারেন্ট’ ছিল। এটা সত্য কথা না।

পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, যার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে এবং তিনি বেশ কয়েকবার জেল খেটেছেন।

আমান বলেন, “ডিএমপি কমিশনার সাহেব গ্রেপ্তারের ব্যাপারে বলেছেন, আমরা শুনেছি, জেনেছি। দেখব ভবিষ্যতে যেন এমন না হয়।”

অভিযোগ সত্য নয়: ডিএমপি

কমিশনারের সাথে বিএনপি নেতাদের সাক্ষাতের বিষয়ে ডিএমপি’র মুখপাত্র ফারুক হোসেন বেনারকে বলেন, “বিএনপি’র প্রতিনিধি দল আমাদেরকে জানিয়েছেন পুরো রমজান মাসজুড়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ইফতার কেন্দ্রিক দলীয় কর্মসূচি থাকবে। তাতে যেন পুলিশ সহযোগিতা করে। আগে থেকেই অবগত করায় পুলিশ কমিশনার ওনাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন এবং সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”

বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, “পুলিশ বিনা পরোয়ানায় কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে না। এই ধরনের অভিযোগ সত্য নয়।”

বনানী থেকে ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মুন্সীগঞ্জ থেকে কিছু মানুষ বনানী ক্লাবে বসে একটি গোপন বৈঠক করছিল, এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁদের জননিরাপত্তার স্বার্থে আটক করে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে আদালতে প্রেরণ করে।”

রোববার ভোর একটায় বনানী ক্লাব থেকে ওই ৫৪ নেতা-কর্মীকে আটকের বিষয়ে এক বিবৃতিতে বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মমিন আলী ওমরা হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে যাওয়ার আগে দলীয় নেতা-কর্মীদের বনানী ক্লাবে নৈশভোজের দাওয়াত করেন। সেখান থেকে নেতা-কর্মীদের পুলিশ আটক করে এবং পরবর্তীতে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করে গ্রেপ্তার দেখায়।”

এসব গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে আমান বলেন, “আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার গণহারে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করেছে।”

আব্দুস সালাম বলেন, সরকার গণতন্ত্রের কথা বলছে, রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধার কথা বলছে। আর এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে কাবু করার জন্য নেতা ও সংগঠকদের বেছে বেছে গ্রেপ্তার করছে।

৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেনারকে বলেন, “সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে। আমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে এর প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। এর ফলে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন মামলার আসামি হচ্ছি আর গ্রেপ্তার হচ্ছি।”

দলের ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এক লাখেরও বেশি মামলা রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “সব মামলা মিথ্যা এবং হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ের করা হয়েছে।”

ফখরুল আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সচেতনভাবে গণতন্ত্রের জায়গা থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে সম্পূর্ণভাবে একটি স্বৈরতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে।”

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, “দেশে কোনো রাজনৈতিক সংকট নেই, বিএনপি’র মধ্যে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট চলছে।”

“বিএনপি’র অভ্যন্তরে ভয়াবহ সংকট চলছে কারণ তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পলাতক। দলের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব মানতে নারাজ। আবার অনেকেই আছেন যারা মির্জা ফখরুল সাহেবের নেতৃত্ব মানতে নারাজ। তাদের মধ্যে ভয়াবহ সংকট আছে,” বলেন হাছান মাহমুদ।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।