সুষ্ঠু নির্বাচনে বাইডেনের আহ্বান: গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের

আহম্মদ ফয়েজ
2023.03.28
ঢাকা
সুষ্ঠু নির্বাচনে বাইডেনের আহ্বান: গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া সংসদীয় আসনগুলোর উপনির্বাচন চলাকালে বগুড়ার একটি ভোটগ্রহণ কক্ষে ভোটারের অপেক্ষায় নির্বাচনী কর্মকর্তারা ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। [বেনারনিউজ]
[বেনারনিউজ]

বাংলাদেশের ৫২তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তায় দেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে করা মন্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শেখ হাসিনা সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা থাকলেও ওই বার্তাগুলোতে নির্বাচন বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বক্তব্যকে নির্বাচনের বছর হওয়ায় ক্ষমতাসীনদের অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি চিঠি পাঠান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওই চিঠিতে তিনি গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছেন।

২১ মার্চ পাঠানো চিঠিটি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস গণমাধ্যমে শেয়ার করে ২৭ মার্চ।

বাইডেন তাঁর চিঠিতে লেখেন, “বাংলাদেশ যখন পরবর্তী নির্বাচনের কাছাকাছি, তখন আমি গণতন্ত্র, সমতা, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতি আমাদের উভয় দেশের জনগণের গভীর মূল্যবোধের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি।”

চিঠিতে আরো বলা হয়, “বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার মূল্য গভীরভাবে বোঝে কারণ তাঁরা ১৯৭১ সালে তাঁদের নিজেদের ভাগ্য বেছে নেওয়ার জন্য এবং নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য সাহসের সাথে লড়াই করেছিলেন।”

তিনি বলেন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সবচেয়ে বড়ো অবদানকারী হিসেবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রদর্শিত প্রতিশ্রুতিকে সাধুবাদ জানায়।

বাইডেন তাঁর চিঠিতে বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ সহানুভূতি ও উদারতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

“আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজে বের করার এবং নৃশংসতায় জড়িত অপরাধীদের জবাবদিহি করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি,” চিঠিতে বলেন বাইডেন।

অপরদিকে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেয়া শুভেচ্ছা বার্তায় ব্লিঙ্কেন বলেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

স্বাধীন বাংলাদেশের অর্জন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্ব তুলে ধরে বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সমর্থন করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র আশা করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে চলবে।

“আমরা সকলের জন্য উন্মুক্ত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করার জন্য আপনাদের সাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, সুশাসন, মানবাধিকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ যেসব কর্মকাণ্ড উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির মূল নির্দেশক— আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ তার বিশাল সম্ভাবনা অর্জন করবে,” বলেন ব্লিঙ্কেন।

মার্কিন নেতাদের বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ

চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ১২তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এমন সময়ে বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

“মার্কিন নেতাদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দেশটি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র দেখতে চায়। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ,” বেনারকে বলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলেই তারা নানা প্রক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলে যাচ্ছে। এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বেনারকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ বাংলাদেশ আগামী সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছে বলে চিঠির বক্তব্যগুলোকে হালকাভাবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই,“ বলেন তৌহিদ।

তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কিছু নেতা পশ্চিমাদের বক্তব্য নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করলেও তারা নিজেরাও পশ্চিমাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রচুর স্বার্থ রয়েছে, সুতরাং সরকার চাইবে না বা এমন কিছু করা উচিত হবেনা যাতে যুক্তরাষ্ট্র চটে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বেনারকে বলেন, “আমাদের গণমাধ্যম যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যকে যতটা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে এসব বক্তব্যের এতটা গুরুত্ব নেই আসলে।”

যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে নিচের লেভেল থেকে ব্রিফ হয় সেভাবেই মন্তব্য করে দাবি করে তিনি বলেন, “এখানে দেখার বিষয় হচ্ছে যেসব মানুষের মাধ্যমে তাঁরা ব্রিফ হচ্ছে, সেটা সঠিক হচ্ছে কিনা।”

যুক্তরাষ্ট্রের এসব বক্তব্য বাংলাদেশে বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে সুবিধা এনে দেয়, এটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরো ঝুঁকিতে ফেলে দাবি করে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এমন কোনো উদ্যোগ নেয়া যাতে করে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা বাড়ে। সেটাই হবে গণতন্ত্রের মঙ্গলের জন্য ইতিবাচক।”

এ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বেনারকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যা বলছে তা শেখ হাসিনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, তিনি (হাসিনা) নিজেই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান, যা বাংলাদেশের মানুষেরও চাওয়া।”

বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশ মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়ায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়টি অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয় নয়। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এসব বক্তব্য-বিবৃতি বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ।”

আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়েছে দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আওয়ামী লীগের উচিত হবে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।