বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর ক্ষমতাসীনদের হামলা
2023.06.12
ঢাকা
ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর হামলা, দু’পক্ষের মধ্যে সংঘাত-উত্তেজনা, এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ এবং ফলাফল প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ।
একইদিন অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। সেখানে কোনো সহিংসতা কিংবা উত্তেজনার খবর পাওয়া যায়নি।
প্রধান রাজনৈতিক বিরোধীদল বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে দুই সিটি নির্বাচনেই ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন হাত পাখা মার্কা নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের বেসরকারি ফলাফল অনুসারে বরিশালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুপাতো ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সৈয়দ ফয়জুল করিম পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট।
খুলনায় আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক পেয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৫২ ভোট এবং তাঁর নিকটতম প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল আউয়াল পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট।
অনিয়ম এবং আক্রমণের প্রতিবাদে দু’টি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে চলতি মাসে অনুষ্ঠেয় রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
তিনি সৈয়দ ফয়জুল করিমের ওপর আক্রমণের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা লাঠি, কিরিচসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে বরিশাল শহরে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের তৎপরতায় দু’পক্ষের উত্তেজনা সংঘাতে রূপ নিতে পারেনি।
লাঠিসোঁটাসহ ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মহড়ার ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়।
মেয়র প্রার্থীর ওপর আক্রমণ
হাতপাখা মার্কা নিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল সাংবাদিকদের বলেন, তিনি তাঁর নেতা-কর্মীদের নিয়ে সাবেরা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ছিলেন। সম্ভাব্য সংঘর্ষ ঠেকাতে তিনি তাঁর নেতা-কর্মীদের সরিয়ে নিচ্ছিলেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের এই ঘটনার জন্য দায়ী করে ফয়জুল করিম বলেন, “হঠাৎ করেই দেখি আমার ওপর আক্রমণ করছে। তবে আমি আমার নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের বলেছি, তাঁরা যেন ভোটকেন্দ্র থেকে সরে না আসে। ভোট সুষ্ঠু হলে আমি আমার জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত।”
নির্বাচন কমিশন সূত্র অনুসারে বরিশালে মোট আটটি কেন্দ্রে গোলযোগ হয়েছে।
এই আক্রমণের পর ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের বাধার মুখে তারা ব্যর্থ হয় বলে সাংবাদিকদের জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান।
সৈয়দ ফয়জুল করিমের ওপর আক্রমণের পরও নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ বলা যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, “পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল।”
“আমরা শুনেছি হাত পাখার প্রার্থীকে পেছন থেকে একজন ঘুষি মেরেছে। ঘটনা জানার পর আমরা সঙ্গে সঙ্গে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা সামলাতে আমাদের প্রস্তুতি আছে,” বলেন হাবিবুল আউয়াল।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের কাছে টেলিভিশন ফুটেজ রয়েছে। আমরা ফুটেজ দেখে দেখব কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
বরিশাল ও খুলনায় সকাল ৮টা থেকে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিরতি ছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, বরিশাল সিটি করপোরেশনে মোট দুই লাখ ৭৬ হাজারের বেশি ভোটের মধ্যে মোট ভোট পড়েছে এক লাখ ৪২ হাজারের কিছু বেশি বা ৫১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
অন্যদিকে খুলনা সিটির মোট পাঁচ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি ভোটের মধ্যে প্রথম ছয় ঘণ্টায় ৪২-৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন।
ভোট দিতে কোনো প্রকার বাধার মুখে পড়েননি বলে জানিয়েছেন ভোটাররা। ধীরগতি সম্পন্ন ইভিএমের কারণে ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করেন অনেক ভোটার।
মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরদিন অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মতো শান্তিপূর্ণ ও বাধাহীনভাবে সম্পন্ন হলো না বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন।
তবে নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত ২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারেন এবং করেছেন এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেন।
এর পরদিন ২৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কোনো প্রকার সহিংসতা, সংঘর্ষ, ভোটারদের বাধা প্রদান অথবা ভয়-ভীতি প্রদর্শন ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয় এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী আজমত উল্লা খান সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের মা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের কাছে হেরে যান।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোটারদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি দেখা গেছে যা গত এক দশকে দেখা যায়নি।
বিরোধী দলের সদস্যদের অভিযোগ, মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষমতাসীন দল এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন পুলিশ, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে কোনো প্রকার অবস্থান নেননি।