ভোটারশূন্য নির্বাচনে হিরো আলমের ওপর হামলা

আহম্মদ ফয়েজ
2023.07.17
ঢাকা
ভোটারশূন্য নির্বাচনে হিরো আলমের ওপর হামলা ঢাকা-১৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রে হামলার শিকার হওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন ((মাঝখানে, সাদা পাঞ্জাবি)। ১৭ জুলাই ২০২৩।
[বেনারনিউজ]

বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের প্রায় ছয় মাস আগে ঢাকার এক সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের একদল কর্মীর বিরুদ্ধে।

প্রধান বিরোধী দল বয়কট করায় গুরুত্বহীন ও প্রায় ভোটারশূন্য হয়ে পড়েছিল ওই নির্বাচন। তবে একজন প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় নির্বাচনটি ঘিরে নতুনভাবে সমালোচনা সৃষ্টি হয়।

সোমবার ঢাকা-১৭ সংসদীয় উপনির্বাচনে বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দল অংশ নেয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচিত চরিত্র ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমই হয়ে ওঠেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।

রাজধানীর গুলশান-বনানীর অভিজাত এলাকার বাসিন্দারা এই ভোটে খুব একটা সাড়া দেননি, যার ফলে রাত ৯টার দিকে ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, এই উপনির্বাচনে ভোট পড়ার হার মাত্র ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ।

ঢাকা–১৭ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন। বেসরকারি ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৬০৯ ভোট।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিকদার আনিসুর রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ৩২৮ ভোট।

ঢাকার গুলশান, বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১৭ আসনের এই উপনির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন আটজন। গত ১৫ মে চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) মারা যাওয়ার পর ঢাকা-১৭ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।

হিরো আলমের ফল প্রত্যাখ্যান

মোহাম্মদ আলী আরাফাত গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগের হয়ে নানা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত ছিলেন। গত ডিসেম্বরে প্রথমবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হন। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে দলকে প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। সুচিন্তা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন গড়ে সরকারে পক্ষে আলোচনা, সেমিনার ও গবেষণার মাধ্যমে আলোচনায় আসেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আরাফাত।

অন্যদিকে হিরো আলম কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর লাখ লাখ ফলোয়ার রয়েছে। এ ছাড়া তিনি অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত। সরকারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি পরিচিত পান।

গতকাল হামলার শিকার হলে হিরো আলমকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাজধানীর একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়া যাবে না।” ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন হিরো আলম।

সোমবার সকাল আটটায় ভোট শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল চারটায়। সারাদিন কোথাও কোনো সংঘাত বা সহিংসতার খবর না পাওয়া গেলেও বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বনানী এলাকায় বনানী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রের বাইরে ধাওয়া করে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয় হিরো আলমকে।

ওই হামলার ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে দেখা যায়, হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাতের ব্যাজ পরা ছিলেন।

বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে করে বেরিয়ে আসার পর ভোটকেন্দ্রের সামনে আগে থেকেই অবস্থান নিয়ে থাকা একদল যুবক তাঁর ওপর হামলা চালায়।

হিরো আলম বলেছেন, “যারা আমার ওপর হামলা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হবে।”

হিরো আলমের ওপর হামলা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো: আলমগীর বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর কিছু যুবক হামলা করেছে। এই বিষয়ে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে মামলা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই ঘটনাটি খুবই খারাপ হয়েছে।”

অপরদিকে এই হামলা সম্পর্কে আরাফাত সাংবাদিকদের বলেন, “একজন প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা আমিও শুনেছি। এটি খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। নির্বাচন সারাদিন খুব সুন্দরভাবে চলছিল, শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে এ রকম কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার কোনো প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি না। এর মধ্য দিয়ে কেউ কেউ নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে বলে আমার মনে হয়।”

20230717112058_132A9594.JPG
ঢাকা–১৭ আসনের উপনির্বাচনে গুলশান মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর গণমাধ্যমের ক্যামেরায় বিজয়সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত (মাঝখানে, সাদা পাঞ্জাবি)। ১৭ জুলাই ২০২৩। [বেনারনিউজ]

সরকার রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া: মির্জা ফখরুল

খুলনায় একটি জনসভায় সোমবার বক্তব্য দেয়ার সময় হিরো আলমের ওপর হামলা প্রসঙ্গে কথা বলেন দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “সরকার এখন রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়েছে গেছে। তারা এখন হিরো আলমেও ভীত। হিরো আলম ভোটকেন্দ্রে গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে বের করে দিয়ে মাটিতে ফেলে মারধর করে। এরাই চিৎকার করে বলে গণতন্ত্র নাকি তাদের হাতেই নিরাপদ।”

সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল ভোটকেন্দ্রের সামনে একদল যুবক অতর্কিতে প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলা চালায়।

ওই বার্তায় এই হামলার ঘটনাকে ভোট কেন্দ্রের বাইরের ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, “ঘটনাটি পুরোপুরি ভোটকেন্দ্রের বাইরে ঘটেছে এবং এতে কেন্দ্রের ভেতরে ভোট গ্রহণে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সাথে ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে দ্রুততম সময়ে ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করে। ঘটনায় জড়িত বাকিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিনোদনমূলক কন্টেন্ট তৈরি করে আলোচনায় আসা হিরো আলম এর আগে বগুড়ায় একাধিক নির্বাচনে অংশ নিলেও কোনোটিতে জয়ের দেখা পাননি।

উপনির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, প্রধান বিরোধী দল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া এমন একটি নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর অকারণ হামলা প্রমাণ করে দেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।

“মানুষ ভোট দিতে আসেনি। কয়েক মাসের জন্য এই নির্বাচন নিয়ে কারো কোনো আগ্রহ নেই। তবুও এসব অনিয়ম থেকে ধারণা করা যায়, সামনের জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে?” যোগ করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।