গ্রেপ্তার ও নানামুখী বাধার মধ্যেই ঘোষিত স্থানে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি
2023.10.27
ঢাকা
ক্ষমতাসীনদের পাল্টা সমাবেশ, অব্যাহত গ্রেপ্তার ও তল্লাশি, যান চলাচল বন্ধ করা এবং সহিংসতার আশঙ্কার মধ্যে সরকার পতনে একদফা দাবিতে রাজধানীতে শনিবার মহাসমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
সরকারি দল আওয়ামী লীগও শনিবার শান্তি সমাবেশ করবে। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের নেতা-কর্মীদের শনিবার সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, আমরা সরকারে আছি, আমরা কেন অশান্তি করব? বিএনপি অশান্তি করতে চায় বলেও তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ এবং আগামী সাধারণ নির্বাচন একটি দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবিতে বিএনপির পাশাপাশি গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্যান্য বিরোধী দল ও জোটও রাজধানীতে যুগপৎ ধারায় ঢাকায় সমাবেশ করবে। একই দাবিতে জামায়াতে ইসলামী পৃথকভাবে সমাবেশ করার ঘোষণা দিলেও পুলিশ অনুমতি দেয়নি নিবন্ধন হারানো এই দলটিকে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাছ থেকে বিকল্প স্থান চেয়ে চিঠি দিলেও দলগুলো নিজেদের পছন্দের স্থানে সমাবেশ করার বিষয়ে অটল থাকার প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কয়েকটি শর্ত দিয়ে তাদের নিজ নিজ পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে।
পুলিশ বিএনপিকে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং আওয়ামী লীগকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেইটে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে।
তবে জামায়াতকে নগরীতে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি পুলিশ।
গ্রেপ্তার, বাধা অব্যাহত
বিএনপির মহাসমাবেশকে সামনে রেখে গত পাঁচ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ প্রায় দেড় হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে বিএনপির অভিযোগ।
দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে এখন (শুক্রবার সকাল) পর্যন্ত মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৩০ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মিথ্যা মামলা হয়েছে ১৮টি।”
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, দলটির মহাসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে পুলিশ প্রতিদিনই গভীর রাতে নেতা-কর্মীদের বাসায় অভিযান করছে। নেতা-কর্মীদের না পাওয়া গেলে তাদের স্বজনদের গ্রেপ্তার করছে।
কয়েক মাস ধরে জেলে রয়েছেন এমন নেতার বাসাতেও পুলিশ অভিযান করছে দাবি করে, বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বেনারকে বলেন, “তিন মাস ধরে মিথ্যা মামলায় জেলে রয়েছে এমন নেতার বাসায়ও গভীর রাতে অভিযান করছে পুলিশ। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে পুলিশ আসলে তালিকা ধরে ধরে আমাদের নেতাদের বাসায় যাচ্ছে, ওয়ারেন্ট কোনো বিষয় না।”
তিনি বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে শুক্রবার দুপুর থেকে হঠাৎ করেই ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন মহাসড়কে বাস থামিয়ে লোকদের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে রাজনৈতিক পরিচয় চিহ্নিত করে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
বিএনপির সমাবেশ শনিবার হলেও শুক্রবার সকালের পর থেকে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েকশত নেতা-কর্মী জড়ো হতে থাকে। রাতে সেখানে কর্মীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেয়।
শুক্রবার বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকায় ৬০টির বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুন অর রশীদ এ তথ্য জানান।
“আগামীকালের সমাবেশে নিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং সমাবেশে যোগ দিতে পারেন এমন মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে,” বলেন তিনি।
ক্যামেরার ফুটেজ একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন মুখপাত্র বেনারকে বলেছেন, তারা নিয়মিত দায়িত্বের অংশ হিসেবেই অভিযান পরিচালনা করছে এবং কাউকে আইনের বাহিরে তল্লাশি করা হচ্ছে না।
মহাসমাবেশে বাধা দিলে দায় সরকারের: বিএনপি
শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, শনিবারের মহাসমাবেশে কোনো বাধা আসলে এর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, পুলিশের অনুমতি দেওয়ার কিছু নাই। সমাবেশ করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আমাদের সমাবেশ হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।
“মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা সরকারকে একটি বার্তা দিতে চাই। চাপ প্রয়োগ করে দাবি আদায় করতে চাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে,” বলেন ফখরুল।
সরকারকে বিদায় করতে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বানও জানান এই বিএনপি নেতা।
অপরদিকে এক ভিডিও বার্তায় দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সরকার পতন আন্দোলনে এটাই শেষের শুরু।
নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ আওয়ামী লীগের
শুক্রবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের নেতা-কর্মীদের শনিবার সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশ দেন।
“এদের (বিএনপি) দুরভিসন্ধি আছে। সাম্প্রদায়িক আরও দুই-একটি শক্তিকে নিয়ে তাদের অশুভ খেলার পরিকল্পনা নিচ্ছে। সার্বক্ষণিক সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। মিটিং শেষ, চলে গেলেই হবে না। কালকে (শনিবার) একটু দেখে শুনে যাবেন। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা,” বলেন কাদের।
নেতা কর্মীদের অবস্থা বুঝে দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে কাদের বলেন, সবাই নিজে নিজে দায়িত্ব নেবেন, সবার দায়িত্ব আছে। এই যুদ্ধ আমাদের সবার। এটা বাংলাদেশের আরেক মুক্তিযুদ্ধ। এটা মনে করেই মাঠে থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা শান্তি সমাবেশ করছি, আগামীকালও শান্তি সমাবেশ করব। আমরা অশান্তি করতে চাই না, আমরা সরকারে আছি, আমরা কেন অশান্তি করব? বিএনপি অশান্তি করতে চায়।
জামায়াত সমাবেশ করবেই
অনুমতি না মিললেও শনিবার মতিঝিল শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জামায়াত।
শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে জামায়াত জানায়, “শনিবার শাপলা চত্বরে ইতোমধ্যেই মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ঘোষিত কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে।
আরো যেসব দল-সংগঠন থাকছে বিএনপির সঙ্গে
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ ধারায় ও আলাদাভাবে সরকার পতন আন্দোলনে বেশ কিছু দল ও জোটও শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে মহাসমাবেশ করবে শনিবার।
এসব দল ও জোটের মধ্যে রয়েছে— গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণ ফোরাম ও পিপলস পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণ অধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া), লেবার পার্টি, এবি পার্টি, জনতার অধিকার পার্টি, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী পরিষদ।