বিশ্লেষকদের মতে, একতরফা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ
2023.10.30
ঢাকা
বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতায় দুই দিনে অন্তত ছয়জনের মৃত্যু এবং বিরোধীদের শত শত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে ‘ভয়ঙ্কর লক্ষণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন বিশ্লেষকরা।
তাঁদের মতে, দেশ একতরফা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে এবং জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা এড়ানো যায় না।
গত শনিবারের সহিংসতা, রোববারের হরতাল ও এর সাথে রাজনৈতিক বিরোধীদের ধরপাকড়ের ঘটনা বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক বেনারকে বলেন, “গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহে যে বিষয়টা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে, সেটি হলো প্রথমত, নির্বাচন বর্তমান সংবিধানের অধীনেই হবে যা বিরোধীরা মানবে না।”
“দ্বিতীয়ত, ২৯ তারিখের হরতালের প্রতি দেশের বড়ো-ছোট প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সমর্থনে এটাও স্পষ্ট যে, তারা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। অর্থাৎ আগামী নির্বাচন হবে একতরফা,” বলেন শাহদীন মালিক।
বিরোধীদের সঙ্গে সরকারের আচরণকে কর্তৃত্ববাদী হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার তখনই বেকায়দায় পড়ে, যখন ওই সরকারগুলো অর্থনীতিকে সামাল দিতে পারে না। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক সংকটেও পড়তে পারে দেশ।”
“সরকার সকল রাজনৈতিক মত ও যুক্তিকে উপেক্ষা করে স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় এগিয়ে যাচ্ছে। এটা দেশের গণতন্ত্র ও অর্থনীতির জন্য ভয়ংকর ফল বয়ে আনতে পারে,” বেনারকে বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ।
তাঁর মতে, রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে এখন আওয়ামী লীগকেই প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে।
পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক অভিযানের মধ্যে যখন বিরোধী দলের মাঠ পর্যায়ের প্রধান নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েক হাজার নেতা-কর্মী গত কয়েকদিনে গ্রেপ্তার হয়েছেন অথবা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের জন্য সারাদেশে অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
শনিবার ঢাকায় পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ চলাকালে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে ঘোষিত একদিনের হরতাল কর্মসূচি পালন শেষে রোববার তিনদিনের এই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।
বিএনপি ও তাঁদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেয়া দলগুলোর ঘোষণার একদিন পর সোমবার সারা দেশে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত ইসলামীও।
হরতালের পরদিন রোববার সকালে পুলিশ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে তাঁর গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। আটকের প্রায় দশ ঘণ্টা পর সমাবেশের সময় বিএনপি কর্মীরা রাজধানীর কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে এমন অভিযোগে দায়ের করা নতুন একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলে পাঠানো হয়।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, শনিবারের সংঘাতের পর থেকে পুলিশ সারা দেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাসায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
গত শনি ও রোববার দুই দিনে তিন হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে বলে দলটির দাবি।
তবে ডিএমপির তথ্যমতে, গত দশ দিনে বিরোধীদলের প্রায় এক হাজার ৮০০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় আড়াইশ’ গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে রোববারে।
পুলিশ বলছে, পুরনো মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে যা নিয়মিত কাজের অংশ।