খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে বিএনপির সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি
2021.11.24
ঢাকা
গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেবার দাবিতে গণঅনশন, প্রতিবাদ সমাবেশের পর এবার সপ্তাহব্যাপী নতুন রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের যৌথ সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুবদল, কৃষকদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল ও অন্যান্য সংগঠনগুলো সারা দেশে একেক সংগঠনের ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন, মৌন মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। এ ছাড়া শুক্রবার মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে এই দফায় বুধবার বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হলো।
বিএনপির সিনিয়র নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বুধবার বেনারকে বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। তাঁকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে চিকিৎসা করতে না দিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবোই।”
খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিএনপির সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সকল প্রকার ছুটি বাতিল করে পুলিশকে ‘সতর্ক’ অবস্থায় রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত খালেদা জিয়া ইস্যুতে যে কোনো সময় রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। এই বিবেচনায় পুলিশকে সতর্ক রাখা হয়েছে।
তবে পুলিশ বলছে, জনগণের জান-মাল রক্ষায় অত্যাসন্ন একটি বিশেষ অভিযানের কারণে পুলিশকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।
“সামনে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান আছে, নির্বাচন রয়েছে। কেউ যেন জনগণের জান-মালের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে পুলিশ,” বুধবার বেনারকে বলেন পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান।
“এই বিষয়টি মাথায় রেখে পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে,” বলে জানান তিনি।
তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, এই বিশেষ অভিযানের নামে তাঁদের আন্দোলনকে দমন করতে পুলিশকে ব্যবহার করবে সরকার।
‘অবস্থা ক্রিটিক্যাল’
খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল’ আখ্যা দিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেনারকে বলেন, “খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো। এবং উনার কিছু হয়ে গেলে দায়দায়িত্ব সরকারের।”
তিনি বলেন, “খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়াচ্ছে। আপনারা গুজবে কান দেবেন না।”
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর থেকে কারারুদ্ধ থাকেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। এই মামলায় তাঁর ১০ বছর সাজা হয়।
অক্টোবর মাসে জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় তাঁর সাত বছর কারাদণ্ড হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা থাকলেও এখন পর্যন্ত দুটি মামলায় মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত খালেদা।
কারাগারে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ কারাগার থেকে শর্তসহ মুক্তি লাভ করেন খালেদা জিয়া।
শর্তের অন্যতম হলো, তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না এবং কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না।
২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন খালেদা। ১৭ এপ্রিল ভর্তি হন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে। সেখানে প্রায় দুই মাস চিকিৎসা নেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতালে ফলোআপ চিকিৎসা করাতে গেলে তাঁর বিভিন্ন জটিল শারীরিক সমস্যা ধরা পড়ে। আবারও ভর্তি হন হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই আছেন খালেদা।
মঙ্গলবার খালেদা জিয়াকে দেখতে যান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
বুধবার রাজধানীর নগর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া যেকোনো মুহূর্তে চলে যেতে পারেন। তাঁর অবস্থা অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল।”
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “আমি গতকাল গিয়ে দেখেছি বেগম জিয়াকে রক্ত দেয়া হচ্ছে। আমি ফাইলের প্রত্যেকটা লাইন দেখেছি, কারো মুখের কথায় কিছু বলছি না। সম্ভব হলে আজকে রাতেই ওনাকে বিদেশে পাঠানো উচিত। আর না হলে যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে।”
‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বুধবার বেনারকে বলেন, “বিএনপিপন্থী কিছু ডাক্তার বলে যাচ্ছেন খালেদা জিয়ার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। দেশের অন্যান্য ডাক্তাররা কিন্তু এমন কথা বলছেন না।”
তিনি বলেন, “প্রকৃতপক্ষে, এটি তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের একটি কৌশল। তারা যদি তাঁর মুক্তি চান তাহলে প্রথমে খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে গিয়ে সেখান থেকে আদালতে অনুমতি চাইতে হবে। সেটা তারা না করে পুরো দায় সরকারের ঘাড়ে দিচ্ছে।”
“বিএনপি যে প্রতিবাদ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করছে এগুলো দলীয় দাবি। এগুলোর সাথে জনগণের কোনো স্বার্থ নেই। আন্দোলনে নামছে দলীয় নেতা-কর্মীরা। সাধারণ মানুষ এগুলো নিয়ে চিন্তা করে না; তাঁরা রাস্তায় নামছে না,” বলেন শাজাহান খান।
সতর্ক থাকার কারণে আছে
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ.কে.এম. শহিদুল হক বুধবার বেনারকে বলেন রাজনৈতিক অথবা যে কোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে পুলিশের ছুটি বাতিল করা হয়।
তিনি বলেন, “বর্তমানে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে রাস্তায় উত্তেজনা চলছে। যেমন বাসের অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় আন্দোলন করছে। আজকে মিরপুরও কুড়িল এলাকায় তৈরি পোশাক কারখানায় দুজন শ্রমিক মারা গেছেন এমন গুজবকে কেন্দ্র করে রাস্তায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।”
“খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি কয়েকদিন ধরে রাস্তায় আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে। পুলিশকে প্রস্তুত থাকতে হয়, যদি খালেদা জিয়া মৃত্যুবরণ করেন তাহলে তাঁরা কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে,” বলেন শহীদুল হক।
বিএনপির কর্মসূচির কারণেই “সরকার পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় রেখেছে,” বলে বুধবার বেনারের কাছে মন্তব্য করেন দলটির সিনিয়র নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তবে শাজাহান খানের মতে, “সরকার পুলিশ দিয়ে আন্দোলন দমন করবে এই অভিযোগ রাজনৈতিক। তারা (বিএনপি) প্রেসক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছে। পুলিশ তাদের কিছু বলেনি। কিন্তু যদি তারা পুলিশকে আক্রমণ করে, জনগণের জান-মালের ক্ষতি সাধন করে তাহলে তো পুলিশ ব্যবস্থা নেবেই।”