এক যুগ আগের নাশকতা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ৮ বিএনপি নেতার সাজা

কামরান রেজা চৌধুরী
2023.12.28
ঢাকা
এক যুগ আগের নাশকতা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ৮ বিএনপি নেতার সাজা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে ঢাকার মেট্রোপলিটন মাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করছে পুলিশ। ৫ ডিসেম্বর ২০২৩।
[জীবন আহমেদ/বেনারনিউজ]

এক যুগেরও বেশি আগের একটি নাশকতার মামলায় বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও পানি সম্পদমন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ আটজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। সাবেক দুই মন্ত্রীই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বিচারক রাজেশ চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তবে “এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মামলা” বলে বৃহস্পতিবার বেনারের কাছে মন্তব্য করেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। নির্বাচনের তিন মাস আগে থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পুরানো মামলার রায়ে এক হাজার ৫৬১ জন বিএনপি নেতা-কর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গুলশান থানায় দায়ের হওয়া ওই মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে আলতাফ হোসেন চৌধুরী কারাগারে রয়েছেন ও মেজর হাফিজ বর্তমানে ভারত সফরে রয়েছেন। বাকিরা পলাতক।

বয়স বিবেচনায় সাজা কম: আইনজীবী

আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু জানান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও বিএনপি নেতা মেজর (অব.) মো. হানিফকে ২১ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

এছাড়া এম.এ. আওয়াল খান, রাসেল, মইনুল ইসলাম, বাবুল হোসেন ও আলমগীর বিশ্বাসকে ৪২ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আব্দুল্লাহ আবু বলেন, “বয়স বিবেচনায় নিয়ে আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও মেজর হাফিজের শাস্তির মাত্রা কম করেছেন আদালত।”

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করতে সংবিধান সংশোধন বিল সংসদে ওঠার পর থেকে হরতাল শুরু করে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই বছরের ৪ জুন সন্ধ্যায় মহাখালী ওয়্যারলেস গেট পানির ট্যাংকের সামনে রাস্তার ওপর ‘অবৈধ সমাবেশ’ করেন আসামিরা। তাঁরা পুলিশের কাজে বাধা দেন এবং রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর করেন, আগুন ধরিয়ে দেন।

২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেন গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান তালুকদার। গত বছরের ২৫ এপ্রিল অভিযোগ গঠন করেছিলেন আদালত।

বিবাদীপক্ষের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “মেজর (অব.) হাফিজ চিকিৎসার জন্য ভারত গেছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাঁর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। এই অবস্থায় উনি ফিরবেন কি না, বা ফিরলেও কবে ফিরবেন সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।”

উল্লেখ্য, মেজর হাফিজ বিএনপি ছেড়ে নতুন দলে যোগ দেবেন মর্মে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বক্তব্য দেওয়ার পর গণমাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়। এরপর গত ৮ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে হাফিজ বলেন তিনি আজীবন বিএনপিতে থাকবেন।

গত ১২ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য ভারত যেতে চাইলে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৩ ডিসেম্বর তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করে ভারত যাওয়ার অনুমতি পান। ১৪ ডিসেম্বর তিনি ঢাকা ছাড়েন।

তৌহিদুল ইসলাম আরও বলেন, “আলতাফ হোসেন চৌধুরীর বয়স এখন ৮৩ বছর। ঘটনার দিনে তিনি ঢাকায় ছিলেন না, উনি তাঁর নির্বাচনী এলাকা পটুয়াখালীতে অবস্থান করছিলেন। এগুলোর পক্ষে আমরা স্থানীয় পত্রিকার প্রতিবেদনসহ আরও অনেক কাগজ আদালতে উপস্থাপন করেছি।”

তিনি বলেন, “আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে জেলা দায়রা জজ আদালতে আপিল করব।”

রায় নিয়ে যা বলছে বিএনপি

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন। যেসব ঘটনায় মামলাগুলো করা হয়েছে, সে ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এগুলোকে আমরা বলি গায়েবি মামলা।”

“দেশে অনেক চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার পড়ে আছে,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলোর বিচার শেষ করা হচ্ছে।”

এসব মামলায় অভিযুক্তরা বিএনপির নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের এবং দলের তৃণমূল রাজনীতিতে যাঁরা প্রভাব রাখেন এমন নেতা-কর্মী জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকার এই পুরানো মামলার রায়ের মাধ্যমে মাঠ ফাঁকা করে একতরফা নির্বাচন করতে চায়।”

“এই মামলাগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্দেশনা প্রদান করে কিছু কিছু বিচারিক আদালতকে ব্যবহার করছে সরকার,” অভিযোগ করেন কায়সার কামাল।

তাঁর মতে, “এসব মামলা নিষ্পত্তিকালে আইন রক্ষা করা হচ্ছে না। আইন অনুযায়ী কোনো মামলায় যদি আসামি উপস্থিত না হয়, আদালতে হাজির হওয়ার জন্য খবরের কাগজে প্রচার করতে হবে। এসব মামলায় সেটা করা হয়নি।”

“আবার দেখা গেছে, একটি মামলায় ৪০ জন সাক্ষী রয়েছে, যাঁদের মধ্যে পাঁচজন সাক্ষী পুলিশ কর্মকর্তা এবং বাকিরা সিভিলিয়ান। সিভিলিয়ান সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ না করে কেবলমাত্র পুলিশের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মামলার রায় দেওয়া হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।

সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই: আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন, “উনাদের যে অভিযোগ ‘আইন মন্ত্রণালয় আদালতকে নির্দেশনা দিচ্ছে’—এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা। উনাদের কোন মামলায় সাজা হয়েছে সেই মামলা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।”

তিনি বলেন, “যিনি অপরাধ করবেন, তাঁর বিচার হবে, সাজা হবে এটিই স্বাভাবিক। আদালত তাঁর নিজস্ব আইন-নিয়মে চলে। এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।