যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাথে বৈঠক, সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী

কামরান রেজা চৌধুরী
2023.10.06
ঢাকা
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাথে বৈঠক, সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে ঢাকার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৬ অক্টোবর ২০২৩।
[সৌজন্যে: তথ্য অধিদফতর]

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিষয়ে এই বৈঠকটি ‘গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।’

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে শুক্রবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে তিনি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ দিন থেকে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগ শুরু করেছে পশ্চিমা দেশটি।

এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র্যাব ও এর কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো কথা হয়নি

গত ২৩ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র এবং ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাজ্য সফর করেন শেখ হাসিনা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, “গত ২৭ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শনকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সভায় দুই দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে জোরদার করার বিষয়ে আমরা ঐকমত্য পোষণ করি।”

“জ্যাক সুলিভান নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সন্ত্রাস দমনের মতো ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের সরকারের অর্জনের প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিনি আবারও বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান,” বলেন তিনি।

বৈঠকে “আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও কথা হয়,” জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমার সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি।”

জ্যাক সুলিভানের বৈঠকে বিরোধী দলের দাবি অনুসারে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে কোনো আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোনো কথা হয়নি।”

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গত দু’টি সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে আগামী সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সরকার পতনের একদফা দাবিতে সমমনা দল ও জোট নিয়ে আগামী ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত সমাবেশ, মিছিল ও অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে দেশকে এনে দেশটা যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন হঠাৎ অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সবার এত মাতামাতি কেন? সন্দেহ হয় যে...আসল কথা নির্বাচনটাকে বানচাল করে দেওয়া।”

আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তাঁর সরকারের আমলে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা।

জ্যাক সুলিভানের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের ব্যাপারে জানতে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এবং হোয়াইট হাউসে বেনারের পক্ষ থেকে ই-মেইল পাঠানো হলেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জবাব পাওয়া যায়নি।

প্রধানমন্ত্রীর কথায় বিশ্বাস করার বাস্তব ভিত্তি নেই: বিএনপি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জ্যাক সুলিভানের বৈঠকের বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান জহির উদ্দিন স্বপন শুক্রবার বেনারকে বলেন, “শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন; এটি আসলে বিশ্বাস করা যায় না।”

তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগেও শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তাঁর সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগেও তিনি একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং আমরা তাঁকে বিশ্বাস করেছিলাম কিন্তু তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি রাখেননি।

“ওই দু’টি নির্বাচন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ নির্বাচন হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে উনি যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন; যা আমাদের বিশ্বাস করার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই,” বলেন স্বপন।

‘গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে জ্যাক সুলিভানের এই বৈঠক একটি “গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা,” বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমশের মবিন চৌধুরী।

শুক্রবার তিনি বেনারকে বলেন, “যদি সম্পর্ক ভালো না হতো, তাহলে জ্যাক সুলিভান বাংলাদেশ দূতাবাসে এসে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন না। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে।”

এছাড়া জাতিসংঘে সাধারণ অধিবেশন চলাকালে গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সাক্ষাতের বিষয় উল্লেখ করে শমশের মবিন বলেন, “ওয়াশিংটন ডিসি থেকে নিউইয়র্ক গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন উজরা জেয়া। ...এটিও একটি বড়ো ঘটনা।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।