সহিংসতা পরিহারের আহ্বান: সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শর্তহীন সংলাপ চায় যুক্তরাষ্ট্র
2023.11.13
ঢাকা
বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে চলমান সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোকে কোনো ধরনের পূর্বশর্ত ছাড়াই সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই লক্ষ্যে প্রধান তিন রাজনৈতিক দল—ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয়া হচ্ছে মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে।
সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু-এর লেখা এই চিঠি দলগুলোকে পৌঁছে দিতে শুরু করেছেন।
মার্কিন দূতাবাসের একজন মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিন দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের চিঠি গ্রহণ করেছেন বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বেনারকে নিশ্চিত করেছেন যে, তাঁর দলও মার্কিন দূতাবাসের চিঠি পেয়েছে।
“আপাতত শুধু এটুকু বলতে পারব যে, আমরা চিঠি পেয়েছি। এর বাইরে এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না,” বলেন রিজভী।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চিঠি পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন দলটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ।
তিনি বলেন, “আমরা এখনো এ রকম কোনো চিঠি পাইনি।”

যা আছে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠিতে
মার্কিন সরকারের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ উপায়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার করে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে।
“যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে পূর্বশর্ত ছাড়াই সংলাপে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানায়,” বলা হয় চিঠিতে।
যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করে তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র তার নীতি কার্যকর করতে থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক শেষে পিটার হাস দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিকারীদের জন্য চলতি বছরের ২৪ মে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
চলতি সপ্তাহেই নির্বাচনের তফসিল
বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এমন সময় তৎপরতা দেখাচ্ছে, যখন আগামী বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহেই সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
আগামী মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে দর্শনার্থী হিসেবে সাধারণ মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন।
সোমবার বিকেলে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করে ইসি সচিবালয়।
নির্বাচন কমিশন যখন তফসিল ঘোষণার জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন দেশের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী কারাবন্দি।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের সঙ্গে বিএনপির কর্মীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জের ধরে সোমবার পর্যন্ত দলটির প্রায় সাড়ে ১১ হাজার নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিএনপি।
গত ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর একদিন হরতাল এবং পরবর্তীতে চার দফায় দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।
সোমবার চতুর্থ দফায় অবরোধ শেষ হলে পঞ্চম দফায় আরও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ডেকেছে বিএনপি ও সমমনা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট আইনবিদ শাহদীন মালিক বেনারকে বলেন, “আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে, আরেকটি একতরফা নির্বাচনের দিকে হাঁটছে সরকার। এটা দেশের গণতন্ত্রের জন্য খুবই খারাপ কথা।”
এখনো সবগুলো দলের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানের পথ খোঁজার সুযোগ আছে মত দিয়ে তিনি বলেন, “আলোচনার পথ বন্ধ করে দেওয়া কোনো পক্ষের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।”