অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকারে আইনশৃঙ্খলা, অর্থনীতি ও বিচার

জেসমিন পাপড়ি
2024.08.09
ঢাকা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকারে আইনশৃঙ্খলা, অর্থনীতি ও বিচার ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ৩০ জুন ২০২৪।
[মো. হাসান/বেনারনিউজ]

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং সংকটাপন্ন অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা—শুরুতে এই তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেবে ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের মুখে দায়িত্ব নেওয়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

দায়িত্ব গ্রহণের পরেই শুক্রবার বেনারনিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তবে এই সরকারের মেয়াদকালের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা তিনি দেননি। রিজওয়ানা বলেছেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আগে প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার তাঁর সরকারের প্রধান লক্ষ্য। তারপরেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার কাজ করবেন তারা।

সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, “শুক্রবার সরকারের উপদেষ্টাদের প্রথম বৈঠকে বেশি সময় ধরে আলোচনা হয়েছে কীভাবে দ্রুত পুলিশকে কাজে ফেরানোসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কত দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়—সে বিষয়ে। কারণ, এর সাথে স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সম্পর্ক আছে। কোথাও কোথাও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ হচ্ছে সেটাও আলোচনায় ছিল।

“এছাড়া জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যাতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর বাংলাদেশে না ঘটে। দেশের মানুষের বড়ো অংশ যে এই সিস্টেমটা চায় না, তারা এ মুহূর্তে সংস্কার চায়, তারপর নির্বাচন চায়,” বলেন রিজওয়ানা হাসান।

সংস্কারের এজেন্ডাগুলো কী হবে, কবে সেগুলোর রূপরেখা চূড়ান্ত হবে তা পরে আলোচনা করে ঠিক করা হবে বলে জানান তিনি।

বর্তমানে “দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে” উল্লেখ করে রিজওয়ানা বলেন, ভেঙে পড়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে “ঢেলে সাজানো” তাঁর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার।

চ্যালেঞ্জ ‘পরিবর্তন বনাম ‘নির্বাচন

এই সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জগুলো কী—জানতে চাইলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য হচ্ছে একটা প্রগতিশীল, উন্মুক্ত, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। যেখানে সুশাসন, মানবাধিকার, সুশাসন ও বিচারব্যবস্থা প্রভাবমুক্ত থাকবে।”

তিনি বলেন, “এখন চ্যালেঞ্জটা হলো রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের জন্য চাপ দেবে। অন্যদিকে জনপ্রত্যাশা থাকবে পরিবর্তন করা।”

তাঁর মতে, একটা সময় কাঠামোর ভেতরে “পরিবর্তন এবং নির্বাচন”কে রেখে, জনমত যাচাই করে “একটা বিশদ সিস্টেম ডেভেলপ করা” এই মুহূর্তে ‘সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ।”

 “এছাড়া প্রশাসনের সকল স্তরে যে আস্থাহীনতা, দ্বিধা তৈরি হয়েছে সেটা দ্রুত ফেরত আনা, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের পজিটিভ ইমেজ তৈরি করার বিষয়েও কাজ করতে হবে,” মনে করেন রিজওয়ানা হাসান।

এই সরকারের মেয়াদ জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের মধ্যে এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই।”

“যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারের এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন করে আমরা নির্বাচন দেব। সেটা কত দ্রুত—সেটা নির্ভর করবে আমাদের কাছে সাধারণ মানুষের দাবির উপরে,” বলেন তিনি।

AP24221591163992.jpg
বঙ্গভবনের দরবার হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের শপথ পাঠক করাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন (ডানে)। ৮ আগস্ট ২০২৪। [এপি]

ভারতের সাথে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ

প্রতিবেশী ভারতের সাথে সম্পর্ক প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এদেশের মানুষের ধারণায় একটা বিষয় ঢুকে গেছে যে, বিগত বছরগুলোতে ভারত বাংলাদেশের অনেক কিছু, বিশেষ করে সরকারি বাহিনী পর্যায়েও নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের এটা একটা বড়ো ক্ষোভের জায়গা। সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কখনই সেটা মানবে না।”

“সিস্টেমের ভিতরে ঢুকে আমাদের জানতে হবে মানুষের এই ধারণাটা কতটা সঠিক ছিল। তবে আমরা প্রকাশ্যেও দেখেছি, বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াতে ভারত কথা বলেছে। যেভাবে বলেছে সেটা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না,” বলেন তিনি।

“প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক খারাপ করে থাকা যায় না”—উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, “ভারত নিশ্চয় নিশ্চয় বাংলাদেশের সাথে সৎ সম্পর্ক রাখতে চাইবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সহায়তাপ্রদানকারী দেশ হিসেবে, আমাদের তিন দিকে যাদের অবস্থান, সেই দেশের মানুষের সাথে আমাদের কোনো বৈরিতা নেই। সে হিসেবে আমরা ভারতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে জোর দেবো।”

ইচ্ছা, বাংলাদেশকে পলিথিনমুক্ত করা

নিজ দপ্তরের কাজের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, “আমার ইচ্ছে বাংলাদেশকে পলিথিনমুক্ত করা, অন্তত কয়েকটি এলাকাকে মাত্র একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকমুক্ত করা। মানুষের আচরণের মধ্যে, মনোজগতে এ পরিবর্তন আনা যে, আমাদেরকে সত্যিকারের প্লাস্টিকের বিকল্পের দিকে যেতে হবে।”

শিল্পদূষণ নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমরা সময় অত বেশি পাব না, তাই সব জায়গায় হাত দিতে পারব না। দখল হয়ে যাওয়া একটা বনও যদি ফেরত আনতে পারি সেটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

এছাড়া, পাহাড়ের ইকোসিস্টেম রক্ষা ও বেদখল হয়ে যাওয়া নদী উদ্ধার, বনের সীমানা নির্ধারণ করে দখলদারদের উচ্ছেদ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা তাঁর অন্যতম লক্ষ্য বলে জানান তিনি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য কাজ করা অনেকটা সহজ উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট যা করতে পারে না। আমাদের তা পারা উচিত। কারণ, এই সরকার একটা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এসেছে। কাজেই প্রথাগত সীমাবদ্ধতাকে যদি আমি মেনে নিই তাহলে আমি কোনো সমাধানে পৌছাতে পারব না।”

“তবে আমাদেরকে এটাও মনে রাখতে হবে যে, এই চ্যালেঞ্জ কিন্তু অনেক বড়ো,” বলেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।