বাংলাদেশে কারফিউ জারি, নামছে সেনাবাহিনী
2024.07.19
ঢাকা

শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ চালু থাকবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের আক্রমণাত্মক প্রতিরোধের প্রেক্ষিতে গত কয়েক দিনে রক্তক্ষয়ী হয়ে ওঠে।
চলমান পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত প্রায় একশো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে শুধু শুক্রবারেই মারা গেছেন ৬৭ জন।
কারফিউ জারি ছাড়াও চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেনাবাহিনী পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেসামরিক প্রশাসনকে ‘সহায়তা’ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, কারফিউ চলাকালে প্রতিদিন দুপুর বারোটা থেকে দুইটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য কারফিউ শিথিল থাকবে।
তবে পরিস্থিতিতে কারফিউ জারি করার অর্থ কাউকে “গুলি করার আইনি সুরক্ষা” বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, “এটাকে আমি মূলত দেখা মাত্র গুলি করার লাইসেন্স বলে মনে করি। কারণ, এখন তারা (সরকার) বলবে, আমরা কারফিউ জারি করেছি, কিন্তু লোকজন বের হয়ে এসেছে।”
“তারা প্রত্যেককে জোর করে ঘরে ঢুকিয়ে রাস্তা খালি করতে চাচ্ছে,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “রাস্তায় সেনা মোতায়েনের অর্থ হচ্ছে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থ হয়েছে, তা স্বীকার করে নেয়া।”
শুক্রবার নিহত কমপক্ষে ৬৭
শুক্রবার ঢাকার রাস্তায় ‘অসংখ্য’ বিজিবি ও পুলিশ সদ্যদের দেখতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বেনারনিউজের সংবাদদাতারা, যারা বিক্ষোভ দমনে টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গান ছোড়া ছাড়াও গুলি করছিলেন বলে জানান তাঁরা।
বেনারনিউজের এক সাংবাদিক ঢাকায় তাঁর বাসার সামনে তিনজন তরুণকে বিজিবি সদস্যরা গুলি করতে দেখেছেন। তাঁর বাসার সামনেই ওই সময় বিক্ষোভকারীরা একটি সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন বলে জানান তিনি।
সহিংসতায় সারা দেশে শুক্রবার অন্তত ৬৭ জন নিহত ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র থেকে বেনারনিউজ নিশ্চিত করেছ। নিহতদের মধ্যে ৬৩ জন ঢাকায় এবং চার জন ঢাকার বাইরে মারা গেছেন।
শুক্রবার সিলেটে পুলিশ ও বিএনপি কর্মীদের সংঘাতের সময় স্থানীয় দৈনিক জালালাবাদীর ফটো সাংবাদিক তোরাব হোসেন গুলিতে নিহত হয়েছেন।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাভেদ ইমাম বেনারকে বলেন, “গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তোরাবকে হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণ পর মারা যান।”

দুই দিনে যা ঘটেছে
বিক্ষোভের সময় নরসিংদীতে জেলখানা ভাংচুর করে কয়েদিদের ছেড়ে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন জেল কর্মকর্তারা। এছাড়াও শুক্রবার ঢাকাসহ সারা দেশে বেশ কয়েকটি সরকারি ভবনে আগুন ধরানোর ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার থেকে বাংলাদেশে ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, মোবাইল সংযোগও খুবই ধীর গতির।
শুক্রবার ঢাকা থেকে সব ধরনের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ঢাকায় মোটরসাইকেল চলাচল ও সব ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি ‘সম্পূর্ণ সমর্থন’ রয়েছে বলে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে ঢাকা প্রেস ক্লাবের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ফোনে একটি বার্তায় সরকার নিজেদের সন্তানদেরকে নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরে রাখার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুলিশ সদরদপ্তরসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাকড হওয়ার ঘটনা ঘটে বৃহস্পতি ও শুক্রবার।

বেনারনিউজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায় শিক্ষার্থী হত্যা বন্ধ করো,” “এটি এখন আর প্রতিবাদ নয়, এটি এখন যুদ্ধ”- এরকম আন্দোলনের প্রতি সমর্থনসূচক ইংরেজিতে লেখা বার্তা রয়েছে হ্যাক হয়ে যাওয়া ওয়েবসাইটগুলোতে।
এদিকে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ২১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর পূর্বনির্ধারিত স্পেন সফর বাতিল করা হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সূত্র।