কারফিউ উপেক্ষা করে চলছে বিক্ষোভ, ঘটছে হতাহতের ঘটনা
2024.07.20
ঢাকা
কারফিউ জারির প্রথম দিন শনিবার সরকারি আদেশ অমান্য করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে, ঘটেছে হতাহতের ঘটনা।
গত এক সপ্তা ধরে চলা অস্থিরতা দমাতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারির পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে সরকার। শনিবার বিভিন্ন শহরের রাস্তায় সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখেছেন বেনারনিউজের সাংবাদিকেরা।
বাংলাদেশ থেকে আসা ভিডিও ফুটেজে রাস্তায় লোকজনকে চলাচল করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি, গাছ ফেলে অবরোধ করে রাখা সড়ক এবং রাস্তার পাশে পোড়া গাড়ি অন্যান্য আবর্জনার স্তূপ দেখা গেছে ভিডিওগুলোতে।
এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জনগণকে কারফিউ লঙ্ঘন না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, কেউ কারফিউ লঙ্ঘন করলে এক বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
তবে এর আগে শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমে বলেছিলেন, কারফিউ অমান্য করলে ‘দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ’ দেয়া হয়েছে।
নিহত অন্তত ২৫
শনিবার ঢাকাসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে দুইজন পুলিশসদস্যসহ অন্তত ২৫ নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র থেকে বেনারনিউজের পক্ষ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতদের বেশিরভাগই ঢাকায়।
এ নিয়ে এখন পর্যন্ত আন্দোলন ও বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৪।
শনিবারে ঢাকা মহানগর প্রায় ফাঁকা থাকলেও, মিরপুর, বাড্ডা, রামপুরা ও যাত্রাবাড়ীসহ কয়েক জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
“আমরা কারফিউ ভয় পাই না। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার পদত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব,” বেনারকে বলেন যাত্রাবাড়ী এলাকার এক বিক্ষোভকারী মোহাম্মদ আরাফাত হোসেন।
“কোটা বিরোধী আন্দোলন এখন “সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে” বলে বেনারের কাছে মন্তব্য করেন মিরপুর এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ আলম।
“একটি আন্দোলনে এত মৃত্যু খুবই মর্মান্তিক এবং দুঃখজনক,” উল্লেখ করে করে তিনি বলেন, “সবচে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে কারফিউ দেয়ার প্রথম দিনেও ঢাকায় শান্তি ফিরে আসেনি।”
রোববার আদালতের রায়
রোববার সকালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রয়েছে। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা থাকবে নাকি থাকবে না এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে আদালত। এই কোটা সংস্কারের দাবিতেই শুরু হয়েছিল আন্দোলন, যা পরবর্তীতে কোটা সংস্কারের দাবি ছাপিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মোড় নেয় এবং রক্তক্ষয়ী হয়ে ওঠে।
রোববার সকাল দশটা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে বলে জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ পরে পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া হবে। আগামী রবি ও সোমবার বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।

দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ
আন্দোলন, বিক্ষোভ ও কারফিউর কারণে ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের। এ প্রসঙ্গে মিরপুর এলাকার রিকশাচালক আব্দুল মান্নান বেনারকে বলেন, “গত চার দিন ধরে রিকশা চালাতে পারছি না। আমরা প্রতিদিন আয় করে প্রতিদিন খরচ করি। হাতে কোনো টাকা নেই। চালডাল নিয়ে বাসায় ফিরতে পারছি না।”
“এ অবস্থার শেষ হওয়া দরকার” বলে মনে করেন তিনি।
বিক্ষোভ ও কারফিউ পরিস্থিতিতে শুক্রবার থেকে সারা দেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দোকানপাটে জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে না, কিছু পাওয়া গেলেও অনেক দামে তা কিনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
শনিবার দুপুর বারোটা থেকে দুইটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করার সময় জিনিসপত্র কেনার জন্য দোকানপাটের সামনে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
এদিকে তৃতীয় দিনের মতো পুরো দেশ ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় ব্যাংকিংসহ নানা ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
মোবাইলে বার্তা দিয়ে গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছে ব্যাংকগুলো।
এছাড়া, গ্রাহকরা গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধসহ মোবাইল ফোনে টাকা রিচার্জ করতে পারছেন না।
ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসস-সহ প্রায় সব গণমাধ্যমের অনলাইন প্রকাশনা বন্ধ রয়েছে। এর আগে হামলা ও আগুন লাগার কারণে সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ টেলিভিশন।
তবে পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ না হয়ে আসা পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে সরকার।
গ্রেপ্তার কয়েক ডজন বিএনপি নেতাকর্মী
শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ দলের ৭০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুনুর রশিদ।
এছাড়া বিএনপির অন্য দুই কেন্দ্রীয় নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে তাঁর ঢাকার বাসা থেকে এবং নিপুণ রায় চৌধুরীকে কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বেনারকে জানান বিএনপি'র প্রেস উইং এর সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।
এর আগে শুক্রবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন যে, সরকার ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে ‘নির্মমভাবে’ দমন করার চেষ্টা করছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘অসত্য তথ্য” ছড়াচ্ছে বলে শনিবার ঢাকায় সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।