পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

শরীফ খিয়াম
2019.11.20
ঢাকা
191120_transport_law_protest_1000.JPG নতুন সড়ক পরিবহন আইনের প্রতিবাদে ধর্মঘট চলাকালে রাস্তার মাঝখানে গাড়ি রেখে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় অবরোধ তৈরি করেন পরিবহন শ্রমিকরা। ২০ নভেম্বর ২০১৯।
[বেনারনিউজ]

নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে চলমান ঘর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। বুধবার দিবাগত রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে বৈঠক শেষে তাঁরা এই ঘোষণা দেন।

একই সাথে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের কিছু দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

নতুন আইনের প্রয়োগ ঠেকাতে দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে গত সোমবার শুরু হয় পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘট। পাশাপাশি বুধবার সকাল থেকে দেশজুড়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

এই সমস্যা সমাধানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ধানমন্ডির বাসায় বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দ্বিতীয় দিনের মতো বৈঠকে বসেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা।

প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠকের পর দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল সাংবাদিকদের জানান, “ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান মালিকরা যে নয়টি দাবি তুলেছেন, তা বিবেচনা করবে সরকার।”

“তাঁরা আইন সংশোধনের যে দাবি জানিয়েছেন সেটা বিবেচনার জন্য সুপারিশ আকারে আমরা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠাব,” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এরপরই ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক রুস্তম আলী খান।

এ সময় সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ও বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম তাজুসহ অন্যান্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতা এবং বিআরটিএ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস সনদসহ কিছু বিষয় হালনাগাদ করার জন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সময় দেয়া হয়েছে। এর আগ পর্যন্ত তাঁরা আগের মতোই গাড়ি চালাবেন।

দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে সোমবার শুরু হওয়া পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘটে রাজধানী ঢাকাসহ কমপক্ষে ৩২ জেলায় অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দেশ কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।

এর সাথে বুধবার থেকে শুরু হয় বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ধর্মঘট। এসময় বিভিন্ন এলাকায় সড়ক-মহাসড়ক আটকে সব ধরনের যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন পরিবহন শ্রমিকেরা।

ধর্মঘট সম্পর্কে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. রুস্তম আলী খান বলেন, “সড়ক পরিবহন আইনটি স্থগিত করে মালিক শ্রমিকদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জরিমানার বিধান ও দণ্ড উল্লেখ করে একটি যুগোপযোগী, বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক সঠিক আইন প্রণয়ন করতে হবে।”

নতুন আইনের প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর “কঠোর জরিমানা আর শাস্তির ভয়ে” শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ধর্মঘট শুরু করেন বলে বুধবার বেনারকে জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী।

শুরু থেকেই পরিবহন শ্রমিকদের এই আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে আসছেন বিএনপি নেতারা। বুধবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, সড়ক পরিবহন আইনটি বাস্তবসম্মত হয়নি।

তবে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বেনারকে বলেন, “এটা জনগণকে জিম্মি করে সরকারকে চাপ দেওয়া এবং নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার কৌশল। যেসব শ্রমিক এবং মালিক সংগঠনগুলো সরকারের কাছাকাছি থাকে, তারাই এটা বাস্তবায়ন করছে।”

তিনি বলেন, “ওই সব সংগঠনের নেতারা পরিবহন সেক্টরের সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। সরকারও মাঝে মাঝে তাঁদের সামনে অসহায় বোধ করে।”

“কোনোভাবেই এই আইন বাস্তবায়ন থেকে পিছিয়ে আসা যাবে না। কারণ পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য সরকারের অনেক উন্নয়নকে ম্লান করে দিচ্ছে,” যোগ করেন মোজাম্মেল হক।

গত ১৭ নভেম্বর থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন পুরোপুরি প্রয়োগ শুরু করে সরকার। এর আগে গত ১ নভেম্বর থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হয়। তবে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আইনটির প্রয়োগ এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়।

নাকাল সাধারণ মানুষ

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকার প্রধান তিনটি বাস টার্মিনাল; গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে দূরপাল্লার এবং আন্তজেলার বাস চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না যাত্রীরা।

“সব বাসই বন্ধ আছে। শুধুমাত্র যেসব গাড়ি ভুলে এসে পড়েছে, সেগুলোই ফিরে যাচ্ছে,” বেনারকে বলেন সূর্যমুখী পরিবহনের গাবতলী টার্মিনালের কাউন্টার মাস্টার মাসুদ রানা।

ভাতিজির বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বুধবার সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে যাওয়ার জন্য রওনা করেন কৃষিজীবী জাহিদ হোসেন। গণপরিবহন না পাওয়ায় সেখান থেকে বেশি ভাড়ায় রিকশায় করে গাবতলী এসে দেখেন সরাসরি যাওয়ার কোনো বাস নেই।

পরে তিনি ঝিনাইদহ পর্যন্ত যাওয়ার টিকিট পেয়েছেন। তবে জনপ্রতি দেড়শ টাকা বেশি ভাড়া দিয়ে।

“চারশ টাকার ভাড়া সাড়ে পাঁচশ টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে,” বেনারকে বলেন জাহিদের স্ত্রী নার্গিস বেগম।

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮।
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮।
[বেনারনিউজ]

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।