রোহিঙ্গা শিবিরে আরসার চিকিৎসক দলের কমান্ডারসহ গ্রেপ্তার ৫
2023.01.30
ঢাকা ও কক্সবাজার
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়ে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) এক কমান্ডারসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এপিবিএনের হাতে গ্রেপ্তারকৃতরা সংগঠনে ‘চিকিৎসা সেবার’ কাজে নেতৃত্ব দিতেন।
র্যাব ১৫-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিনিয়র সহকারী পরিচালক) আবু সালাম চৌধুরী সোমবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রোববার রাতের যৌথ অভিযানে আটক আরসা সদস্যরা হলেন; আরসা কমান্ডার ডাঃ রফিক (৫৪), সদস্য মোহাম্মদ রফিক (২০), নুরুল আমিন (৩৪), মোহাম্মদ রফিক (২১), খায়রুল আমিন (৩২)। তাঁরা সবাই উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা বলেও জানান তিনি।
“রোববার গভীর রাতে সন্ত্রাসীদের অবস্থানের খবরে এপিবিএন ও জেলা পুলিশসহ আমরা (র্যাব) যৌথভাবে উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান পরিচালনা করি। এতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরসা’র কমান্ডারসহ পাঁচ সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হই,” বলেন সালাম চৌধুরী।
তিনি জানান, আটকদের মধ্যে গ্রেপ্তার ডাঃ রফিক আরসা সংগঠনের একটি গ্রুপের কমান্ডার এবং বাকিরা দলের চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। এদের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ও পুলিশকে লাঞ্ছিত করাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান সালাম চৌধুরী।
আরসার মেডিকেল টিম!
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক নেতা বেনারকে বলেন, “ডাঃ রফিক মূলত আরসার চিকিৎসা কাজে নেতৃত্ব দিতেন। তাঁর দলে যারা আটক হয়েছে তাঁরা সবাই ওষুধ সরবরাহকারী ছিলেন। তাঁরা নার্স হিসেবে কমান্ডারের কাজে সহায়তা করতেন।”
তিনি জানান, অভ্যন্তরীণ সংঘাত বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কেউ আহত হলে চিকিৎসা দেওয়ার মূল দায়িত্ব ছিল এই দলের।
“ক্যাম্পে কোনো সংঘাতের পর ডাক পড়ত এই দলের। তাঁরা পাহাড়ের গোপন স্থানে আবার কখনো ক্যাম্পের ভেতরে নিজেদের জন্য নিরাপদ জায়গায় নানা ধরনের অপারেশনসহ চিকিৎসা কাজ চালাতেন,” জানান তিনি।
সাধারণত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আরসার উপস্থিতি সম্পর্কে সরাসরি কোনো বক্তব্য না দিলেও এবারের অভিযানে আটকদেরকে সরাসরি আরসার কমান্ডার ও সদস্য বলে জানানো হয়েছে।
মিয়ানমারে নিষিদ্ধ আরসা সংগঠন হিসেবে কত বড়ো বা তাদের নেটওয়ার্ক কতটা বিস্তৃত, এ বিষয়ে কারো কাছেই পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় না।
এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা 'ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ' বলছে, সংগঠনটি (আরসা) মূলত: গড়ে উঠেছে সৌদি আরবে চলে যাওয়া রোহিঙ্গাদের দ্বারা। মক্কা শহরে বসবাস করা ২০ জন নেতৃস্থানীয় রোহিঙ্গা এই সংগঠনটি গড়ে তোলেন। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতে এদের যোগাযোগ রয়েছে।
পুলিশ, এপিবিএনসহ বিভিন্ন দপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে ১২৬ জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছেন। এর মধ্য রোহিঙ্গা ‘সন্ত্রাসী গ্রুপের’ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ২২ জন ‘কথিত আরসা’ সদস্য মারা যান।
এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের জনপ্রিয় নেতা মুহিব উল্লাহ হত্যার পর বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ৪১৮ জন ‘কথিত আরসা’ সদস্যকে বিভিন্ন অভিযানে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে আরসা সদস্যদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের নজিব উল্লাহ মাঝি (নেতা) বেনারকে বলেন, “কমান্ডারসহ আরসার সদস্যদের আটকের বিষয়টি সাধারণ শরণার্থীদের জন্য স্বস্তির খবর। কিন্তু আমাদের অনুরোধ, যাতে কোনো নিরীহ শরণার্থী হয়রানির শিকার না হন।”
গত ১৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডাব্লিউ) এক প্রতিবেদনে এমন কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে দেখা গেছে— অনেক নিরপরাধ ব্যক্তিকেও রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরসার সদস্য বানিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
তুমব্রুতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের তথ্য সংগ্রহ
গত ১৮ জানুয়ারি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির শূন্য রেখায় গোলাগুলি-অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর বসতঘর হারিয়ে তুমব্রু বাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই চলমান রয়েছে।
সংঘর্ষের সময় শূন্যরেখা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের তথ্যসংগ্রহ ও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) নেতৃত্বে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, কক্সবাজার জেলা পুলিশ, বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি একটি কমিটি গঠন করা হয়।
এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সোমবার বেনারকে বলেন, “শূন্যরেখা শিবির থেকে এসে তুমব্রুতে আশ্রয় নেয়া এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে কমিটি পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সুপারিশ করবে।”
তুমব্রু আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নুর হাশিম বেনারকে বলেন, “আজ (সোমবার) এখানে সরকারের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমাদের অন্য জায়গায় সরিয়ে নেবে বলে শুনেছি।”