মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাশিয়ান জাহাজকে ঢুকতে দেয়নি বাংলাদেশ

আহম্মদ ফয়েজ
2022.12.29
ঢাকা
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাশিয়ান জাহাজকে ঢুকতে দেয়নি বাংলাদেশ পাবনার ইশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি অংশ। ১৯ অক্টোবর ২০২২।
[সৌজন্যে: বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা]

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মালামাল নিয়ে আসা একটি জাহাজে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বেনারকে জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার কথা গোপন করে জাহাজটি নাম ও রঙ পরিবর্তন করে গত ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে নোঙর করার চেষ্টা করছিল। তবে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে পারায় সম্ভব্য কূটনৈতিক জটিলতা এড়াতে জাহাজটিকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

জাহাজটির বর্তমান অবস্থান কোথায় তা না জানিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বেনারকে বলেন, “জাহাজ থেকে মালামাল অন্য একটি জাহাজে করে খালাস করা হবে। এর ফলে প্রকল্প কাজে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে না।”

“রাশিয়া বাংলাদেশকে জানিয়েছে যে, তারা ভুলবশত নিষেধাজ্ঞা থাকা জাহাজ দিয়ে পণ্য পাঠিয়েছে,” যোগ করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার আওতায় জাহাজটি আছে—বিষয়টি জানা ছিল না। এখন যেহেতু নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানা হয়েছে, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”

জাহাজ আটকে দেওয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকায় মার্কিন ও রাশিয়ান দূতাবাস এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) বাংলাদেশের মুখপাত্র ফরহাদ কামাল বেনারকে বলেন, “জাহাজ আটকে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, তবে এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশে রাশিয়ান দূতাবাস দেখভাল করছে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ ‘উরসা মেজর’ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিভিন্ন পণ্য নিয়ে মোংলা বন্দরে ২৪ ডিসেম্বর পৌঁছাতে পারে এটা মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়ে ২০ ডিসেম্বর জানিয়েছে মার্কিন দূতাবাস।

মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উরসা মেজর নাম দেওয়া হলেও ওই জাহাজটির নাম মূলত স্পার্টা-৩ যেটি নাম বদলের পাশাপাশি রঙও পরিবর্তন করেছে, জানান এই কর্মকর্তা।

“মার্কিন দূতাবাস আমাদেরকে জানায়, যদিও বাংলাদেশের দিকে আসতে থাকা জাহাজটির নাম উরসা মেজর দেওয়া হয়েছে, তবে আন্তর্জাতিক মেরিন অর্গানাইজেশন (আইএমও) সার্টিফিকেট নম্বর স্পার্টা-৩ এর সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। তারপরই জাহাজটিকে আটকে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ,” বলেন এই কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, মার্কিন দূতাবাসের ওই চিঠিতে বলা হয়, জাহাজটি থেকে পণ্য খালাস করা এবং জাহাজের নাবিকদের জ্বালানি বা যে কোনো ধরনের সহায়তা প্রদান করলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বা বড়ো আর্থিক জরিমানা হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে ওই জাহাজটি প্রবেশ করতে না দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। বাংলাদেশে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার ভিমান্টিটস্কি। তিনি বলেন, ঢাকায় রাশিয়ান দূতাবাস ২০ ও ২২ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুটি চিঠি দিয়ে রাশিয়ান জাহাজটিকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানায়।

এই কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) মো. খুরশেদ আলমের কার্যালয়ে তলব করা হয় রাশিয়ান রাষ্ট্রদূতকে।

ওই বৈঠকে বাংলাদেশ রাশিয়াকে পরিষ্কার জানিয়ে দেয় যে, কোনো অবস্থাতেই নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজকে বাংলাদেশে নোঙর করতে দেওয়া হবে না,” বলেন ওই কর্মকর্তা।

রাশিয়ার জাহাজ নিয়ে ত্রি-পাক্ষিক এই টানাপোড়েন এমন সময়ে ঘটলো যখন সম্প্রতি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করে আসছিল।

বেনারনিউজের পক্ষ থেকে গুগল ম্যাপের মেরিন ট্রাফিক এর মাধ্যমে ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া এগারোটার দিকে জাহাজটির অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণে পাওয়া যায়।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বেনারকে জানিয়েছেন, রাশিয়ান জাহাজটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার বাইরে চলে গেছে।

ship-location.JPG
বাংলাদেশের দক্ষিণে রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ ‘উরসা মেজর’ এর সর্বশেষ অবস্থান। ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, স্থানীয় সময় সকাল ১১:১২। [গুগল ম্যাপের মেরিন ট্রাফিক এর মাধ্যমে পাওয়া]

উৎপাদন পিছিয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের

রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মিতব্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি আগামী ডিসেম্বরে উৎপাদনে যাওয়ার কথা থাকলেও ২০২৪ সালের শেষের দিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বৃহস্পতিবার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কাজ বিলম্বিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনেও বিলম্ব হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সার্বিক অগ্রগতি সন্তোষজনক এবং প্রথম ইউনিটের কাজ ৮৭ শতাংশ শেষ হয়েছে।

অক্টোবরে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি উদ্বোধনকালে ইয়াফেস ওসমান বলেন, প্রথম ইউনিটটি আগামী বছরের মধ্যে উৎপাদনে যাবে।

রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থা বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানী ও প্রকল্প পরিচালক মো. সৈকত আকবর জানান, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিলম্ব হচ্ছে কি না জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সব কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে কাজ এগিয়ে চলছে।”

পাবনা জেলায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট ব্যয়ের ৯০ শতাংশ নির্মাণের পাশাপাশি অর্থায়ন করছে রাশিয়া।

২০১৭ সালের শেষের দিকে, রাশিয়ান পারমাণবিক শক্তি সংস্থা রোসাটম প্ল্যান্টটি নির্মাণ শুরু করেছে, যার মূল্য প্রায় ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এটি ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছিল।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।