সাঈদীকে নিয়ে প্রবাসী ছেলের ফেসবুক পোস্ট, দেশে গ্রেপ্তার মা
2023.08.22
ঢাকা
আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৩। ইস্টার্ন সময় সকাল ৯:১০
ফেসবুকে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনার কারণে বাংলাদেশে থাকা তাঁর মাকে পুলিশ জেলে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা এক বাংলাদেশি ছাত্র।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলেছে, খুলনায় জামায়াতের নাশকতা পরিকল্পনার একটি সভায় যোগদানের অভিযোগে ওই নারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, ছেলের ফেসবুক পোস্টের সাথে এই গ্রেপ্তারের কোনো সম্পর্ক নেই।
রোববার আনিছা সিদ্দিকা (৬০) নামের ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার তাঁকে জেলে পাঠায় পুলিশ এবং মঙ্গলবার খুলনা জেলার একটি আদালত তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে।
আনিছা সিদ্দিকার পুত্র তানজিলুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে পিএইচডি করছেন। ওই প্রবাসী শিক্ষার্থীর মাকে রোববার তাঁর ভাইর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে সাঈদীকে নিয়ে শুক্রবার তানজিল ফেসবুকে পোস্ট দেন।
পরে জামায়াতে ইসলামীর কারাবন্দি নেতাদের মুক্ত করার জন্য গোপন বৈঠকে অংশ নেওয়ার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা একটি মামলায় সোমবার আনিছাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম পান্না বেনারকে বলেন, বয়স ও লিঙ্গ বিবেচনা করে জামিনের আবেদন করলে মঙ্গলবার খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট তারিকুল ইসলাম আনিছার জামিন নামঞ্জুর করেন।
ছেলের পোস্টের জন্য মাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি: আইজিপি
ছেলের ফেসবুক পোস্টের জেরে মাকে গ্রেপ্তারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে কড়া সমালোচনা হয়।
তবে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ছেলের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের জন্য ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
“জামায়াতের নাশকতা পরিকল্পনার একটি সভায় যোগদানের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে,” বলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক।
খুলনায় জামায়াতের এক নায়েবে আমিরের বাসায় “নাশকতা এবং আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর একটি ষড়যন্ত্র চলছিল” জানিয়ে তিনি বলেন সে তথ্য পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে অভিযান চালায়।
“আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে অনেকে পালিয়ে যায়, পরে আমরা সেখান থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। আমাদের জানা ছিল না এ তিনজন কে বা কারা। আমরা যাদের গ্রেপ্তার করেছি তাঁদের মধ্যে একজন মহিলা ও দুইজন পুরুষ,” জানান আইজিপি।
তিনি বলেন, “গ্রেপ্তারের পর আমরা জানতে পেরেছি ওই নারীর প্রবাসে থাকা ছেলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। ওই নারীকে গ্রেপ্তারের সময় সেখান থেকে আমরা কিছু ডিজিটাল ডিভাইস ও নাশকতার আলামত পেয়েছি। দায়ের করা মামলায় এ সংক্রান্ত তথ্য উঠে এসেছে।”
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করা ছাড়া অভিযানের ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল না বলে জানান আইজিপি।
আমার পোস্টের কারণে মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে: তানজিল
এই বিষয়ে তানজিল বেনারকে বলেন, তাঁর মায়ের কোনো রাজনৈতিক পদ-পদবি নেই। তাই কোনো বৈঠকে অংশ নেওয়ার বক্তব্য হাস্যকর।
“হ্যাঁ, আমাদের পরিবারের সবাই জামায়াতের রাজনীতিকে সমর্থন করে এবং আমরা সবাই মাওলানা সাঈদীর ভক্ত। পুলিশ দাবি করেছে আমার মামা জামায়াতের স্থানীয় শাখার নায়েবে আমির এবং মামার বাড়ি থেকে মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসলে আমার মামা জামায়াত নেতা নন। পুলিশ এখন ইস্যুটি ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে,” বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “কোনো সন্দেহ নেই, আমার রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে করা আমার ফেসবুক পোস্টের কারণে আমার মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
শুক্রবারের স্ট্যাটাসে তানজিল লিখেছেন, “সুখরঞ্জন বালিকে আমি সাঈদীর সাহেবের মামলা চলাকালীন সময়ে ২০১৩-১৪ সালের দিকে ইউটিউব ভিডিওতে দেখেছি। একদম সহজ-সরল গ্রামের কারো সাতেপাঁচে না থাকা স্বল্পশিক্ষিত মানুষ বুঝা যায় তাকে। অন্যদের মতো সুখরঞ্জন বালি সরকারি চাপে মিথ্যা সাক্ষী দিতে পারতেন, কিংবা কোনো কিছু না বলে চুপ থাকতে পারতেন। সেখানে এত রিস্ক নিয়ে সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষী দিতে যাওয়ার হিম্মত তিনি কীভাবে দেখালেন, এটা আমাকে বরাবরই আশ্চর্য করে।”
মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাঈদী গত ১৪ আগস্ট বন্দি অবস্থায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মারা যান।
৮৩-বছর বয়সী জামায়াতের সাবেক এই আমির ইসলামি বক্তা হিসেবে বাংলাদেশে জনপ্রিয় ছিলেন। তবে তাঁর বক্তৃতায় ধর্মান্ধতা এবং নারী বিদ্বেষ প্রকাশ পেত, যা নিয়ে বেশ সমালোচনাও আছে।
জামায়াতের এই নেতার মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করায় মঙ্গলবার পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ভিন্নমত দমনের চেষ্টা
ছেলের ফেসবুক পোস্টের জন্য মাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী নুর খান লিটন বেনারকে বলেন, বিদেশে থেকে দেশ সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টির জন্য এই ধরনের ঘটনা ধারাবাহিকভাবেই ঘটানো হচ্ছে।
“যদিও পুলিশ এখন জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে ভিন্ন কথা বলছে, তবে মানুষ কর্তৃপক্ষের চরিত্র সম্পর্কে অনেক সচেতন। এই ঘটনার মাধ্যমে পুলিশ একটি গুরুতর অপরাধ করেছে এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করেছে,” বলেন লিটন।
তিনি বলেন, এর আগে পুলিশ নির্বাসিত বাংলাদেশি সাংবাদিক কনক সারওয়ারের বোনকে গ্রেপ্তার করেছিল এবং নির্বাসিত সাংবাদিক তাসনিম খলিল ও জুলকারনাইন সায়ের খানের পরিবারকেও পুলিশ ও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের দ্বারা হয়রানি করেছিল।
“পুলিশের বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষের উচিত দায়িত্ব পালনের সময় দেশীয় আইন এবং মানবাধিকার বিষয়গুলোর মান অনুসরণ করা,” বলেন এই মানবাধিকারকর্মী।
……………………………
আপডেট: মামার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বিষয়ক তানজিলের বক্তব্য সংশোধন করা হয়েছে।