সোমালিয় জলদস্যুদের কবলে বাংলাদেশি জাহাজ, ২৩ ক্রু জিম্মি

রিয়াদ হোসেন
2024.03.12
ঢাকা
সোমালিয় জলদস্যুদের কবলে বাংলাদেশি জাহাজ, ২৩ ক্রু জিম্মি জলদস্যুতা ও জাহাজ ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে এডেন উপসাগরে সোমালিয়ার মেরিটাইম পুলিশের টহল। ২৬ নভেম্বর ২০২৩।
[এপি]

বাংলাদেশি একটি জাহাজ মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের ছিনতাইর শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালিকপক্ষ। জাহাজটির ২৩ জন বাংলাদেশি ক্রু বর্তমানে জিম্মি হয়ে আছেন।

ছিনতাইর শিকার এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটির মালিক চট্টগ্রামের এসআর শিপিং লিমিটেড।

আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাবার পথে জাহাজটি বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে বলে বেনারকে জানিয়েছেন মালিকপক্ষ।

জাহাজের ২৩ জন ক্রু দস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে আছেন এবং তাঁরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক বলে বেনারকে জানান এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন করিম।

তিনি বলেন, ক্রুরা নিরাপদে আছেন। তাঁরা জাহাজের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছেন এবং সবাই তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

“আমাদের কাছে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে খবর এসেছে, জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে,” বলেন তিনি।

জাহাজে কর্মরত অফিসারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী বেনারকে বলেন, “দুপুরে জাহাজের একজন কর্মকর্তা হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েছেন যে, জাহাজটি সোমালিয়ার জলদস্যুরা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। জাহাজে উঠেই তারা সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়, মোবাইল ফোন-ল্যাপটপ নিয়ে নেয়। যে কারণে এখন আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।”

“জাহাজটি জলদস্যুরা তাঁদের নিয়ন্ত্রিত বন্দরে নিয়ে গেছে,” যোগ করেন তিনি।

এদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইউনাইটেড কিংডম মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন্স এর ওয়েবসাইটে বলা হয়, জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে অবস্থান করছে। সংস্থাটি এই ঘটনাটি অনুসন্ধান করছে বলেও জানানো হয় এতে।

জাহাজটিতে অন্তত ২০ জন অস্ত্রধারী রয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানায় বার্তাসংস্থা রয়টার্স। তবে দস্যুরা কোন দেশের নাগরিক তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেও জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।

দস্যুদের সঠিক সংখ্যাও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে বেনারকে জানান নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম।

বেনারের পক্ষ থেকে পাঠানো মেইলের জবাবে আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থা পক্ষ থেকে বলা হয়, “বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি এবং আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।”

ead52988-e68f-403d-ac6d-411d0d356a65.jpg
২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকসহ ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ছবিটি ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে তোলা। [বেনারনিউজ]

এখনো উদ্দেশ্য নিশ্চিত নয়

ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি জাহাজটি ছিনতাইর উদ্দেশ্য এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে বেনারকে জানিয়েছেন জাহাজের মালিকপক্ষ ও সরকারের নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

“আমাদের নাবিক ছাড়া সোমালিয়া বা দস্যুদের পক্ষ থেকে এখনো কেউ যোগাযোগ করেননি,” বেনারকে বলেন মেহেরুন করিম।

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি জাহাজেই মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নম্বর দেওয়া থাকে জানিয়ে মো. আনাম চৌধুরী বলেন, “আমরা আশা করছি, শিগগির তারা জাহাজের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।”

তবে জাহাজ মালিকদের মতে, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে অর্থের জন্যই জাহাজটি জিম্মি করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শিপার্স কাউন্সিল অব বাংলাদেশের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মনির হোসেন বেনারকে বলেন, “জিম্মিকারীরা হয়তো চাপ দিয়ে ডলার আদায় করতে চাচ্ছে। আরও পরে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে।”

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক রুটে বাংলাদেশের ১০০টি জাহাজ চলাচল করে, যার মধ্যে কবির গ্রুপেরই সবচেয়ে বেশি সমুদ্রগামী জাহাজ রয়েছে। গ্রুপটির সহযোগী সংস্থা এস আর শিপিং লিমিটেড এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি পরিচালনা করছে।

জিম্মি ক্রুদের উদ্ধারে মালিকপক্ষের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারও যোগাযোগ শুরু করেছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল বেনারকে বলেন, “সমুদ্রের যে অংশে জাহাজটি জিম্মি করা হয়েছে, সেটি আমাদের নৌ বাহিনীর আওতার বাইরে। ওই জলসীমায় যেতে পারে ভারতের নৌ বাহিনী। দিল্লিভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা যোগাযোগ করছি, যাতে ভারতের নৌ বাহিনীর সহায়তা পাওয়া যায়।”

বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের দ্বিতীয় ঘটনা

এটি বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের দ্বিতীয় ঘটনা। ২০১০ সালের শেষের দিকে ইন্দোনেশিয়া থেকে আকরিক লোহা নিয়ে গ্রিসে যাওয়ার পথে একই কোম্পানির আরেকটি জাহাজ জাহান মনি সোমালিয়ার জলদস্যুরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। জিম্মি হয়েছিলেন ২৬ জন; তিন মাসেরও বেশি সময় পর তাঁদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অ্যান্টি-পাইরেসি অপারেশনের মেরিটাইম সিকিউরিটি সেন্টারের তথ্যমতে গত নভেম্বর থেকে এডেন উপসাগর ও সোমালিয়া উপকূলে অন্তত বিশটি জাহাজ ছিনতাই বা ছিনতাই চেষ্টা সংগঠিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ জলপথে সোমালিয়ার জলদস্যুরা ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রচণ্ড গোলযোগ তৈরি করে বলে এক প্রতিবেদনে জানায় বার্তাসংস্থা রয়টার্স। তবে গত বছরের শেষ দিক পর্যন্ত কিছুটা নীরব থেকে জলদস্যুরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলেও জানানো হয় এতে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।