ভারত মহাসাগরে জিম্মি ২৩ বাংলাদেশি নাবিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

রিয়াদ হোসেন
2024.03.13
ঢাকা
ভারত মহাসাগরে জিম্মি ২৩ বাংলাদেশি নাবিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহর শিশু কন্যারা মোবাইলে বাবার সাথে পারিবারিক ছবি দেখাচ্ছে। বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের নন্দনকাননের আতিক উল্লাহর বাসা থেকে তোলা। ১৩ মার্চ ২০২৪।
[মিনহাজ উদ্দিন/বেনারনিউজ]

ভারত মহাসাগরে ২৩ জন নাবিকসহ বাংলাদেশের পণ্যবাহী জাহাজ জিম্মি করার প্রায় ৩০ ঘণ্টা পার হলেও যোগাযোগ করেনি জলদস্যুরা। তবে জিম্মি একজন অডিও বার্তায় জানিয়েছেন, দস্যুরা মুক্তিপণ চায়।

এমভি আব্দুল্লাহ নামে ওই জাহাজের মালিকপক্ষ এসআর শিপিং লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল ইসলাম বুধবার রাত পৌনে ৮টায় বেনারকে বলেন, “আমরা জাহাজের অবস্থান জানতে পেরেছি। আশা করছি, বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ (বাংলাদেশ সময়) জাহাজটি জলদস্যুদের নির্ধারিত সীমানায় পৌঁছাবে এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে।”

এদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। তবে এখনো জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আমরা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে তথ্য পাঠানো হয়েছে।”

নাবিক ও ক্রুরা নিরাপদ ও সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানান, যে কোনো মূল্যে নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর।

জাহাজটি উদ্ধারে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

দস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজের ফায়ারম্যান মোশারফ হোসেন শাকিল (২৪) সর্বশেষ বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে তাঁর বড়ো ভাই আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তাঁদের বাড়ি চট্টগ্রামের মীরসরাই থানার করেরহাট ইউনিয়ন এলাকায়।

আবু বকর সিদ্দিক বেনারকে বলেন, “গত রাতে আমার ভাই আমার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বলেছে, আমাদের মোবাইল ফোন নিয়ে যাচ্ছে, দোয়া করবেন।”

“দস্যুরা তাদের সবাইকে এক জায়গায় বাসিয়ে রেখেছে,” ভাইর বরাত দিয়ে বলেন আবু বকর। তিনি জানান, প্রায় চার মাস আগে শাকিল এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে ফায়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন।

তিনি বলেন, “এসআর শিপিংয়ের মালিকপক্ষ আমাদের চট্টগ্রাম শহরে তাদের অফিসে ডেকেছিল। তারা আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছে, তারা সাধ্যমতো করে চেষ্টা করছেন।”

জাহাজের প্রধান প্রকৌশল কর্মকর্তা সাইদুজ্জামানের পাঠানো একটি অডিও বার্তা বেনারের হাতে এসেছে। এতে তিনি বলেছেন, “এই বার্তাটি সবাইকে পৌঁছে দিও, মুক্তিপণ না দিলে আমাদেরকে একজন একজন করে মেরে ফেলা হবে বলে তারা বলছে। এদের (জলদস্যু) যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, তত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেবে বলেছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের মোবাইল ফোন নিয়ে নিয়েছে। এটি শেষ সুযোগ যোগাযোগের।”

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনাম চৌধুরীর মতে, “আলোচনার মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্তির চেষ্টা সবচেয়ে ভালো উপায় হবে।”

তাঁরা বিষয়টি ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার নজরে এনেছেন বলেও বেনারকে জানান তিনি।

“জাহাজটি বীমার আওতায় থাকার কথা কিন্তু বিমা কোম্পানি অনেক ক্ষেত্রে সময় নেয়। তবে মালিকপক্ষের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে,” বলেন আনাম চৌধুরী।

দুশ্চিন্তার কারণ জাহাজের কয়লা

জাহাজটিতে কয়লা থাকায় অক্সিজেন কমে মিথেন গ্যাস তৈরি হয়ে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আনাম চৌধুরী।

তিনি বলেন, “আবদ্ধ জাহাজের মধ্যে কয়লা থেকে মিথেন গ্যাস তৈরি হলে তা থেকে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা থাকে। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় মিথেন গ্যাস ও অক্সিজেন লেভেল মাপতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় গেলে মিথেন গ্যাস বের করে দিতে হবে। এটি দস্যুদের জানার কথা না।”

জাহাজের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো অডিও বার্তায় চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খানও এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “জাহাজে ৫৫ হাজার টন কয়লা আছে, যেটি বিপজ্জনক। কারণ মিথেন গ্যাস থেকে অগ্নি দুর্ঘটনার সম্ভাবনা আছে।”

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) তথ্য অনুযায়ী বুধবার সন্ধ্যায় জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূল থেকে প্রায় ১৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল।

উল্লেখ্য, প্রায় ১৪ বছর আগে একই কোম্পানির মালিকানাধীন জাহান মনি নামে আরেকটি জাহাজ আকরিক লোহা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে গ্রিসে যাবার পথে ছিনতাইর শিকার হয়। সে সময় মুক্তিপণ দিয়ে ২৬ জন জিম্মিসহ জাহাজটিকে ছাড়িয়ে আনতে হয় এবং জিম্মি নাবিকরা সবাই নিরাপদে দেশে ফেরেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।