বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ শুরু করল যুক্তরাষ্ট্র

আহম্মদ ফয়েজ
2023.09.22
ঢাকা
বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ শুরু করল যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আসন্ন সংসদ নির্বাচন করার দাবিতে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির বিক্ষোভের সময় ঢাকায় দলটির এক সমর্থককে পেটাচ্ছেন একদল পুলিশ সদস্য। ২৯ জুলাই ২০২৩।
[এএফপি]

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা ব্যক্তিদের ওপর শুক্রবার থেকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

গত মে মাসে বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণার পর এর বাস্তবায়ন এমন সময় শুরু হলো যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন এবং তাঁর পদত্যাগের দাবিতে দেশের রাজপথে আন্দোলন জোরদার করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।

শুক্রবার পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেছেন, “আজ পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাদানে দায়ী এবং তাতে সহযোগিতাকারী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নিচ্ছে।”

এসব ব্যক্তির মধ্যে বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা রয়েছেন বলে জানানো হয়।

এতে বলা হয়, “এসব ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অন্য ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির আওতায় ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন।”

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে “শান্তিপূর্ণ উপায়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,” বলে জানান ম্যাথিউ মিলার।

“আমাদের এসব পদক্ষেপ শান্তিপূর্ণভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের যে লক্ষ্য রয়েছে, তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এছাড়া এর মধ্য দিয়ে যারা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায়, তাদের প্রতি সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তারও প্রতিফলন ঘটছে,” বলা হয় বিবৃতিতে।

এর আগে গত ২৪ মে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র।

বেনারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা হলে শুক্রবার থেকেই এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়।

তবে মোট কতজনের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং তাঁদের পরিচয় কী- জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ব্যক্তিদের ভিসা রেকর্ড “গোপনীয় হিসেবে গণ্য” হওয়ায় “এর আওতায় কারা আছেন, অথবা কারা এর আওতাভুক্ত হবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো সম্ভব নয়,” বলে এক ইমেইল বার্তায় জানান পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র।

তবে “যাদের ভিসা প্রত্যাহার করা হয়েছে, অথবা যারা এই নীতির আওতায় পড়েছেন, আমরা তাঁদেরকে তা জানিয়ে দেবো,” জানান তিনি।

মুখপাত্র বলেন, এই নীতি সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, সরকারী দলের সমর্থক ও বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর সমানভাবে প্রযোজ্য।

নিষেধাজ্ঞার সংখ্যাটি বড়ো নয়: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

শুক্রবার মার্কিন ভিসা নীতি কার্যকর করার ঘোষণা আসার পর ঢাকায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

তিনি জানিয়েছেন, এই ঘোষণা সম্পর্কে তাঁদেরকে দুই দিন আগেই জানিয়েছে ওয়াশিংটন এবং যুক্তরাষ্ট্রে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে পারেন এমন ব্যক্তিদের তালিকা সম্পর্কে সরকার অবগত কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার বলেন, “আমাদেরকে একটা সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। … তবে সংখ্যাটি বড়ো নয়।”

তালিকায় কারা আছেন সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।

এই নীতির ফলে সরকারের সার্বিক কর্মকাণ্ডে কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভিসা সংক্রান্ত বিধি-নিষেধের জন্য আমাদের কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো সমস্যা হলে আমরা বিষয়টি ওয়াশিংটনের কাছে তুলে ধরব।”

আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যখন মে মাসে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল, তখন যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, এখনো তাই সরকারের অবস্থান।

“আমরা আশা করি, আমেরিকা নির্বিচারে এটি প্রয়োগ করবে না,” যোগ করেন তিনি।

সামনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা বলে দিয়েছি, নির্বাচনের আগে এখন খুব স্পর্শকাতর সময়। এ সময়; নির্বাচনের আগে এমন কোনো কর্মকাণ্ড অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে বিবেচিত হবে।”

বাংলাদেশিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু করা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বেনারকে বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, “এখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যা ঘটছে তার ওপর দৃষ্টি রাখছে যুক্তরাষ্ট্র।”

এদিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন, সেটা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া।

শুক্রবার ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে উজরা জেয়া এ কথা বলেন।

বৈঠকে তাঁরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র গোটা বিশ্বে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের উন্নয়নের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বন্ধু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে জনগণের প্রতি শেখ হাসিনার আহ্বানকে সমর্থন করে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।