বিতর্কের মধ্যেই সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিচালক নির্বাচিত

বেনারনিউজ স্টাফ
2023.11.01
ওয়াশিংটন ডিসি
বিতর্কের মধ্যেই সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিচালক নির্বাচিত ভারতের নয়া দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৬তম অধিবেশন চলাকালে সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিচালক পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেপালের শম্ভু প্রসাদ আচার্যের (বামে) সাথে সায়মা ওয়াজেদের সেলফি। ৩০ অক্টোবর ২০২৩।
[X/@drSaimaWazed]

যোগ্যতায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে পিছিয়ে থাকার বিতর্কের মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ।

ডব্লিওএইচও বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সায়মা ওয়াজেদ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরবর্তী আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

ডব্লিওএইচও আঞ্চলিক কমিটির ৭৬তম অধিবেশনে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সদস্য রাষ্ট্রগুলো সায়মা ওয়াজেদের পক্ষে ভোট দিয়েছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আগামী বছরের ২২ থেকে ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ১৫৪তম অধিবেশনে ডব্লিওএইচও নির্বাহী বোর্ডে অনুমোদনের জন্য তাঁর মনোনয়ন জমা দেওয়া হবে। অনুমোদনের পর ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন সায়মা।

বুধবার এক ফেসবুক পোস্টে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, আগামী পাঁচ বছরের জন্য ৮-২ ভোটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সায়মা ওয়াজেদ।

সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান পদে মনোনয়নকে “খুবই সুখবর” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

বুধবার ঢাকায় নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “আমরা অনেক দিন ধরেই এ নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলাম।”

সায়মা আগামী পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এই পদে সায়মা ওয়াজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নেপালের শম্ভু প্রসাদ আচার্য।

ভারতীয় গণমাধ্যম দ্যা ওয়্যার-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অঞ্চল বাংলাদেশ, ভুটান, কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং পূর্ব তিমুর নিয়ে গঠিত।

মিয়ানমার ভোট দেওয়ার যোগ্য ছিল না।

ডব্লিউএইচও আঞ্চলিক প্রধান হিসেবে সায়মা ওয়াজেদই হবেন প্রথম বাংলাদেশি যিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হলেন।

ভোটদান শেষে সায়মা ওয়াজেদ নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে বলেছেন, “আমি একটি স্বাস্থ্যকর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া গড়ে তোলার জন্য উন্মুখ।”

মনোনয়ন নিয়ে বিতর্ক

ডব্লিওএইচও-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনে লড়াই করার সময় কোনো পোর্টফোলিও না থাকার পরও প্রধানমন্ত্রী মায়ের সঙ্গে জি-২০ সম্মেলনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সায়মা ওয়াজেদ অংশ নেওয়ার পর বিতর্কের সূত্রপাত হয়।

স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেট।

এসব বিতর্কের মধ্যেই বুধবার ভারতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হন অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সায়মা ওয়াজেদ, যিনি এর আগেও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় অটিজম বিশেষজ্ঞ এবং পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

৪৯ বছর বয়সী সায়মা ওয়াজেদের কাছে পরাজিত ৬৫ বছর বয়সী শম্ভু প্রসাদ আচার্য ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব স্বাস্থ্যের অধ্যাপক এবং তিন দশকেরও বেশি সময় ডব্লিউএইচও-এর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

দ্য ল্যানসেট সায়মার প্রার্থিতা বিতর্ক নিয়ে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, ডব্লিউএইচও-এর তিনটি আঞ্চলিক পদের জন্য বর্তমানে অন্য যে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাঁদের প্রত্যেকেরই পিএইচডি অথবা একটি মেডিকেল ডিগ্রী রয়েছে।

সায়মা ওয়াজেদের মনোনয়নের ফলে স্বজনপ্রীতি হয়েছে দাবি করে দ্য ল্যানসেটের একটি সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, “এই ধরনের উদাহরণ ডব্লিউএইচও’র নেতাদের সততার প্রতি আস্থা নষ্ট করে।”

এই বিতর্কের সময় সায়মা ওয়াজেদ একটি ব্লগ পোস্টে, তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের সমালোচনাকে “পুরুষতান্ত্রিক” হিসেবে অভিহিত করেছেন।

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের ফিনান্সিয়াল টাইমসকে সায়মা বলেন, “আমি জানি না আমার যোগ্যতা নিয়ে কেন এত প্রশ্ন আসে! এটা শুধুমাত্র আমি একজন মুসলিম নারী হওয়ার কারণে, নাকি আমার মা একজন রাজনীতিবিদ হওয়ার কারণে! তবে আমি এই ধরনের সমালোচনায় অভ্যস্ত।”

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসসে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, সায়মা ওয়াজেদ ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল মনস্তত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের কাছ থেকে শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।