কারা আছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে, কার কী দায়িত্ব

অয়ন আমান ও সুদীপ্ত সালাম
2024.08.08
ঢাকা
কারা আছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে, কার কী দায়িত্ব বঙ্গভবনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সংগঠক আসিফ মাহমুদ (বামে) ও নাহিদ ইসলাম। ৮ আগস্ট ২০২৪। [রয়টার্স]
[এপি]

আপডেট: ৯ আগস্ট ২০২৪। ইস্টার্ন সময় দুপুর ১২:০৫

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চাপে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার তিন দিনের মাথায় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে গঠিত হলো বাংলাদেশের ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনের দরবার হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এদিন প্রধান উপদেষ্টাসহ মোট ১৪ জন শপথ গ্রহণ করেন, ঢাকার বাইরে থাকায় বাকি তিন জন পরবর্তীতে শপথ নেবেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা সবাই মন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন।

এই সরকারের সদস্য হিসেবে এক দিকে যেমন রয়েছেন ছাত্র সমাজের তরুণ প্রতিনিধিরা, তেমনি রয়েছেন প্রবীণ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ। উপদেষ্টা পরিষদে নারী সদস্যের সংখ্যা চার।

“এই সরকারের সবচেয়ে নতুন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে ২৫ থেকে ৮৫ বছর বয়স পর্যন্ত সবার অংশগ্রহণ রয়েছে, সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে,” শপথ নেবার পর বঙ্গভবনের দরবার হলে এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বেনারকে বলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম তরুণ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

“বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই যে ডায়নামিক একটা সরকার আমরা গঠন করতে পেরেছি, এটি বাংলাদেশকে একটি নতুন বাংলাদেশ-রূপে আবির্ভূত করতে সহযোগিতা করবে,” বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আসিফ। 

b96b42f9-ad37-48d5-ba9e-ecd7adb953f9.jpg
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে জনগণের প্রত্যাশার সরকার গঠনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলোতে আঁকা নতুন একটি দেয়ালচিত্রের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক তরুণ। ৮ জুলাই ২০২৪। [মো: হাসান/বেনারনিউজ]।

উপদেষ্টাদের পরিচয়

প্রধান উপদেষ্টা: ড. মুহাম্মদ ইউনূস, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা।

নতুন সরকারের মধ্যে উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ একজন অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়েরও অধ্যাপক। 

ড. আসিফ নজরুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক, ঔপন্যাসিক, কলামিস্ট, রাজনৈতিক ভাষ্যকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহায়কের ভূমিকা রাখেন।

আদিলুর রহমান খান, মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একজন আইনজীবী এবং সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।

এএফ হাসান আরিফ, বাংলাদেশের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ২০০৭-০৮ সালে ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।

তৌহিদ হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, একজন আইনজীবী এবং পরিবেশবিদ। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের একজন কর্মী। তিনি ২০০৯ সালে গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

শারমিন মুর্শিদ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ গ্রুপ ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

ফারুক-ই-আজম, একজন মুক্তিযোদ্ধা যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য চতুর্থ সর্বোচ্চ বীরত্ব পুরস্কার- বীর প্রতীক পদবিতে ভূষিত হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় একমাত্র সমন্বিত যুদ্ধাভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর উপঅধিনায়ক।

এম সাখাওয়াত হোসেন, নির্বাচন ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। 

সুপ্রদীপ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান, মেক্সিকো সিটিতে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত।

বিধান রঞ্জন রায়, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন পরিচালক ও অধ্যাপক।

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, একজন ইসলামিক স্কলার এবং হেফাজতে ইসলামের সাবেক নায়েব-ই-আমীর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা।

ফরিদা আখতার, লেখক ও গবেষক। নীতি ও কর্ম গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ফর ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (উবিনীগ) এর প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক। গণ বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ছাত্রী থাকার সময় অধ্যাপক ইউনূসকে সরাসরি শিক্ষক হিসাবে পেয়েছিলেন।

নূরজাহান বেগম, গ্রামীণ শিক্ষার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ২০১০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান, তার আগে ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার জোবরা গ্রামে যখন গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প শুরু করেন তখন ছিলেন অধ্যাপক ইউনূসের প্রথম দিকের অন্যতম সহযোগী।

মোঃ নাহিদ ইসলাম, এবং ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বাংলাদেশে ইতিহাসে কোনো অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়া সর্বকনিষ্ঠ সদস্য।

ঢাকা শহরের বাসিন্দা নাহিদ ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র। কুমিল্লার মুরাদনগরের বাসিন্দা আসিফ মাহমুদও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্বের স্নাতকোত্তর ছাত্র।

এই দুই ছাত্রনেতা কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন যা আওয়ামী লীগের পতন নিশ্চিতে ভূমিকা রাখে। তাঁদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের মুখেই শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে পদত্যাগ করে পালিয়ে যান।

জুলাই থেকে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় যেখানে পাঁচ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।

নাহিদ গত এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সদস্য সচিব এবং আসিফ এই সংগঠনের ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক।

collage 3(1).jpg
[কোলাজ: সুদীপ্ত সালাম/বেনারনিউজ]

কার কী দায়িত্ব?

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুক্রবার উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করেছেন বলে মন্ত্রিপরিষদের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

এতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, খাদ্য, নৌ-পরিবহন, কৃষি, ভূমি, রেলপথ, জনপ্রশাসন, পানিসম্পদ, সংস্কৃতি, ও বাণিজ্যসহ মোট ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব পালন করবেন। মন্ত্রিপরিষদ ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগও থাকবে তাঁর দায়িত্বে।

অন্যদের মধ্যে সালেহ উদ্দিন আহমেদ অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, আসিফ নজরুল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আদিলুর রহমান খান শিল্প মন্ত্রণালয়, হাসান আরিফ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, শারমীন এস মুরশিদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, এম. সাখাওয়াত হোসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন ধর্ম মন্ত্রণালয়, ফরিদা আখতার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নুরজাহান বেগম স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মো. নাহিদ ইসলাম ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। 

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে অন্য যেসব মন্ত্রণালয় থাকবে তা হলো, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।