নির্বাচন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন
2024.09.11
ঢাকা
নির্বাচন ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একমাস উপলক্ষে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা জানান তিনি।
“আমরা যেহেতু জনগণের ভোটাধিকার ও জনগণের মালিকানায় বিশ্বাস করি, সেহেতু নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়নে আমাদের সংস্কার ভাবনায় গুরুত্ব পেয়েছে,” জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের কথা আমরা ভাবছি।”
ড. ইউনুসের ঘোষণা অনুযায়ী, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বদিউল আলম মজুমদার। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করা এই ব্যক্তি নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক।
পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সাবেক জনপ্রশাসন সচিব সফর রাজ হোসেন।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান।
দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। তিনি সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।
এছাড়া সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক।
এই সংস্কার কমিশনগুলো গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে বদিউল আলম বেনারকে বলেন, “নির্বাচন ব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা চেষ্টা করব আমাদের অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যথাযথ ভূমিকা রাখার।”
প্রধান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে নিজেদের করণীয় ঠিক করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এই কাজগুলো অনেক এবং নানা অংশীজনের মতামতের বিষয় আছে। আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই কাজ করার চেষ্টা করব।”
“আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব আমি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করব,” বলে বেনারকে জানান সফর রাজ হোসেন।
এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশন প্রধানদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করা হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসব কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা করেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমরা সংস্কার চাই। আমাদের একান্ত অনুরোধ, আমাদের উপর যে সংস্কারের গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই দায়িত্ব দিয়ে আপনারা দর্শকের গ্যালারিতে চলে যাবেন না। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা একসঙ্গে সংস্কার করব।”
আমাদের সফল হতেই হবে
প্রাথমিকভাবে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পরবর্তীতে ছাত্র-জনতার বৃহৎ আন্দোলনে পরিণত হয়ে টানা ৩৬ দিনের আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান হাসিনা।
ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে প্রায় সাত’শ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছে ১৮ হাজারের বেশি।
এর পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক ইউনূস।
দায়িত্ব গ্রহণের এক মাস তিন দিনের মাথায় এসে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে যে স্বপ্ন নিয়ে এই সরকার গঠিত হয়েছে সেই কাজ “বড়ো কঠিন” হিসেবে উল্লেখ করে ড. ইউনুস বলেন, “কিন্তু জাতি হিসেবে এবার ব্যর্থ হওয়ার কোনো অবকাশ আমাদের নেই। আমাদের সফল হতেই হবে। এই সাফল্য আপনাদের কারণেই আসবে।”
সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ও বিভিন্ন স্থানে বেআইনি আক্রমণের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে ইউনূস বলেন, “আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কেউ সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে আমরা তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব।”
“আমরা একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোন কাজ কেউ কোনো ভাবেই করবেন না,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম ও মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ইতোমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি করে ড. ইউনূস বলেন, “আমরা সবাইকে বলে দিয়েছি, আপনারা মন খুলে আমাদের সমালোচনা করেন। আমরা সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”