পদ্মা সেতু: বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ ড. ইউনূসের প্রত্যাখ্যান
2022.06.30
ঢাকা

গত কয়েক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের টানা সমালোচনার মুখে এক বিবৃতিতে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের পেছনে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
বুধবার রাতে ইউনূস সেন্টার থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূস তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো খণ্ডনের পাশাপাশি পদ্মা সেতু নির্মাণকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করে তাঁকে এবং দেশের সকল মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।
তবে ওই বিবৃতিকে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা’ এবং সত্যের ‘অপলাপ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে মন্ত্রী বলেন, “ড. ইউনূস সাহেব হিলারি ক্লিনটনের সাথে বিশেষ সখ্য থাকার সুবাদে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের ক্ষেত্রে যে মূল কুশীলবের ভূমিকা পালন করেছিলেন, সেটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট, দেশ-বিদেশে সবাই সেটি জানে।”
গত ২৫ জুন নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলা হচ্ছে, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এই সেতু। দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে এই সেতু প্রকল্প থেকে অর্থায়ন বাতিল করেছিল বিশ্ব ব্যাংক। যদিও কানাডার আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হয়নি।
২০১২ সালে অর্থায়ন বাতিলের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীরা এর পেছনে ড. ইউনূসকে দায়ী করে আসছিলেন।
বুধবার রাতে ইউনূস সেন্টারের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের পেছনে নিজের সম্পৃক্তার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী।
বাংলাদেশের সকল মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টির কোনো প্রশ্নই আসে না বলে জানান তিনি।
“প্রফেসর ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তা একটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র কাহিনী। দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধে বিশ্ব ব্যাংকের সতর্ক সংকেতের ঘটনা একই সময়ে ঘটেছিল,” বলা হয় বিবৃতিতে।
একই সময়ে চলমান দুটি বিষয়কে মিশিয়ে একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন কাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছে দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন যে, প্রফেসর ইউনূস হিলারি ক্লিনটনের সাথে চক্রান্ত করে বিশ্ব ব্যাংকের উপর চাপ সৃষ্টি করায় পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।”
“প্রফেসর ইউনূস পদ্মা সেতু বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো সংস্থা বা ব্যক্তির কাছে কখনও কোনো অভিযোগ বা অনুযোগ জানাননি। সুতরাং বিষয়টি নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত,” বলা হয় বিবৃতিতে।
ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদান প্রসঙ্গে
ড.ইউনূস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদান হিসেবে তিন লাখ ডলার দিয়েছন বলে সরকারের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হয় সে প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রফেসর ইউনূস কখনোই ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে কোনো অংকের অনুদান দেননি। অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গে
বয়স কভার করেনা তবুও ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকতে চেয়েছিলেন বলে সরকারের দিক থেকে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সে বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “একটি আলাদা আইনের মাধ্যমে” গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, ফলে অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এর সাথে এর পার্থক্য আছে।
“গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয় এর পরিচালনা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত শর্তে একটি চুক্তির অধীনে। এই নিয়োগের জন্য কোনো বয়সসীমা আইনে বা পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে উল্লেখ ছিল না,” জানানো হয় বিবৃতিতে।
এতে বলা হয়, প্রফেসর ইউনূস ৬০ বছর বয়সে পদার্পণ করলে তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একজন নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করতে পরিচালনা পরিষদকে অনুরোধ করেন।
তবে “পরিচালনা পরিষদ অন্য কোনোরূপ সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকেই দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেন।”
পরিচালনা পরিষদ তাঁর চলমান নিয়োগের মেয়াদ শেষ হবার পর তাঁকেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পুনঃনিয়োগ প্রদান করে, যখন তাঁর বয়স হয় ৬১ বছর ৬ মাস।
বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নিয়মিত পরিদর্শন প্রতিবেদনগুলোর একটিতে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিলে গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়টি ব্যাখ্যা করে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরবর্তী প্রতিবেদনে এ বিষয়ে আর কোনো পর্যবেক্ষণ করা হয়নি বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।
২০০৭-০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া জেলে থাকা অবস্থায় ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন ড. ইউনূস। যদিও ওই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। তবু দেশের রাজনীতিতে ‘মাইনাস-টু’ অর্থাৎ শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার একটি ষড়যন্ত্রের কথা রাজনীতিতে ব্যাপকভাবে আলোচিত। সেই প্রক্রিয়ায় ড. ইউনূসসহ কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও পত্রিকার সম্পাদক জড়িত ছিলেন বলে রাজনৈতিক নেতারা প্রায়ই অভিযোগ তুলে থাকেন।