আবরার হত্যা: ২৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করল বুয়েট
2019.11.22
ঢাকা
![191122_BUET_expels_26_students_1000.jpg 191122_BUET_expels_26_students_1000.jpg](https://bendev.benarnews.org/bengali/news/bdbuet-11222019123815.html/191122_BUET_expels_26_students_1000.jpg/@@images/ffdf6883-6944-49d2-a075-baa28ab9c555.jpeg)
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৬ জন শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ।
আলোচিত এই হত্যার ঘটনায় বুয়েটের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিন এই সিদ্ধান্ত নেয়।
বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, “তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি হাতে পাওয়ার পরে ডিসিপ্লিনারি বোর্ড তিন দিন ধরে বৈঠক করে। তদন্ত প্রতিবেদিনটি পুঙ্খানুপুঙ্খুভাবে বিশ্লেষণ করার পরে বৃহস্পতিবার রাতে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
আজীবন বহিস্কৃত ২৬ ছাত্রের মধ্যে ২৫ জন আবরার হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্রের আসামি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এর বাইরে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটুকেও আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ।
ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওই ২৬ জনের বাইরে আরও ছয় ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে কমিটি।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, চূড়ান্ত বিচারে যদি আবরার হত্যাকাণ্ডে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে বুয়েটকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ কায়কোবাদ বেনারকে বলেন, “২৬ জনই আবরারকে হত্যা করেছে এটা মনে হয় না। যাদের নামে চার্জশিট গঠন করা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত যদি দেখা যায় এদের মধ্যে কেউ কেউ নিরাপরাধ, তাহলে বুয়েটকে সেটা মেনে নিতে হবে।”
“আদালতের কথা না মেনে কোনো উপায় থাকবে না,” বলেন তিনি।
তবে চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আলী আর রাজী মনে করেন, “আদালতের বিচারের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিচারের কোনো সম্পর্ক নেই।”
তিনি বেনারকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তদন্তে যদি প্রমাণ হয় তার শিক্ষার্থীরা অপরাধে জড়িত তাহলে এর জন্য বিধিমালা আছে। আবরার হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে গুরুতর অপরাধ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে বিচারের নিজস্ব ক্ষমতা রাখে।”
তবে এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় তার বিধি মোতাবেক কাজটি করেছে কিনা তা আদালত দেখতে পারে বলে জানান আলী রাজী।
আবরার হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি শামীম বিল্লাহ’র দাদা আতিয়ার রহমান সরদার বেনারকে বলেন, আমার নাতি সরাসরি হত্যায় জড়িত ছিল না। শুধু বড় ভাইদের নির্দেশ মেনে আবরারকে ধরাধরি করে নিচে নামিয়ে আনে।”
“অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় না নিয়ে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করল বুয়েট। বিচারে সে নির্দোষ প্রমাণিত হলেও এ সিদ্ধান্ত তার জীবনকে শেষ করে দেবে। বুয়েট প্রশাসনকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানাই,” বলেন তিনি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তারা কবে ক্লাস বা পরীক্ষায় ফিরবে সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয় বুয়েট প্রশাসন।
মিজানুর রহমান বলেন, “সর্বশেষ তাদের তিনটি দাবি ছিল। এখন পর্যন্ত আমরা একটি মেনেছি। এখন পর্যন্ত তারা আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। আশা করি হয়তো আগামীকাল তারা কিছু জানাবে। আমরা তাদের জন্য অপেক্ষা করছি।”
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর নির্যাতনে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যু হয়।
এই হত্যার প্রতিবাদে দেশের প্রথম সারির এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রথমে ক্যাম্পাসে আন্দোলনে নামে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ১০ দফা দাবি মানার আশ্বাস দিলে গত ১৫ অক্টোবর মাঠের আন্দোলন থেকে সরে আসে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। তবে মামলার অভিযোগপত্র ও অন্য দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দেন তাঁরা।
এদিকে আবরার হত্যাকাণ্ডের মামলায় পাঁচ সপ্তাহের তদন্তে গত ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পরদিন ১৪ নভেম্বর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তিনটি দাবি বাস্তবায়ন হলে তাঁরা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন।
তাঁদের সেই তিন দাবির অন্যতম ছিল অভিযোগপত্রে নাম আসা ছাত্রদের বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে। অন্য দুটো দাবি হলো, আগের র্যাগের ঘটনায় অভিযুক্তদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া এবং আন্দোলনের মুখে বুয়েট কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করলেও সে নিয়ম ভাঙার শাস্তির নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্সে যুক্ত করা।
শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরার সিদ্ধান্ত হয়নি
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন শুক্রবার বেনারকে বলেন, বৃহস্পতিবার ২৬ জনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করার যে সিদ্ধান্ত বুয়েট কর্তৃপক্ষ নিয়েছে তা আমরা জেনেছি। ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত শিগগিরই জানানো হবে।
“আসলে আমাদের শেষ তিনটি দাবির প্রথমটি মানা হয়েছে। এখনো দুটি বাকি। আমাদের ক্লাস নয়, পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। সবাই মিলে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাইকে জানানো হবে,” বলছিলেন আন্দোলনকারীদের একজন।
তবে বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বেনারকে বলেন, “আসলে তাদের যেসব দাবি, তা মানা কিছুটা সময়ের ব্যাপার। আমরা তিন সপ্তাহ সময় চেয়েছিলাম। দু সপ্তাহের মধ্যে প্রথম দাবি মানা হয়েছে।”
“বাকি দুটো দাবির বিষয়েও কাজ করছি। শিক্ষার্থীরা যদি প্রশাসনের কার্যক্রম চলার মধ্যে পরীক্ষায় রাজি হয় তাহলে আমরা একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং ডেকে সেটা করতে পারি। আমরা শিক্ষার্থীদের অপেক্ষায় রয়েছি,” বলেন তিনি।