অর্থের লোভেই ঢাকায় চীনা নাগরিককে হত্যা: পুলিশ
2019.12.18
ঢাকা

অর্থ লুট করতেই দুজন নিরাপত্তাকর্মী মিলে ঢাকার বনানীতে চীনা নাগরিক গাউজিয়াং হুইকে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহের মাথায় আব্দুর রউফ (২৬) ও এনামুল হক (২৭) নামে দুজনকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন। মঙ্গলবার রাতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের স্ত্রী লিও হুই, তাঁদের দুই সন্তান ও ঢাকায় চীনা দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ইয়াং জিপিং উপস্থিত ছিলেন। লিও হুই সংবাদ সম্মেলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্বামীর জন্য কান্নাকাটি করেন।
পুলিশ জানায়, আটকৃতরা ওই বিদেশি নাগরিককে হত্যার পরে তাঁর বাসা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।
গ্রেপ্তার হওয়া দুই নিরাপত্তাকর্মী সুবাস্তু হাউজিং কোম্পানির বিভিন্ন ভবনে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। গাউজিয়াং হুই যে ভবনে বাস করতেন সেই ভবনেও কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁরা।
গত বুধবার রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে ওই চীনা নাগরিকের মাটিচাপা দেওয়া লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত গাউজিয়াং হুই (৪৭) পেশায় একজন ব্যবসায়ী। পদ্মা সেতু ও পায়রা বন্দর নির্মাণকাজে পাথর সরবরাহ করতেন তিনি। বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের ৮২ নম্বর ভবনের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন তিনি।
লাশ উদ্ধারের পর ১১ ডিসেম্বর রাতে নিহতের বন্ধু জাঙ শান-হং অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে বনানী থানায় গিয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চীনা দূতাবাসের পলিটিক্যাল ডেস্কের প্রধান ভেরা হু বেনারকে বলেন, “বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। দূতাবাসের কনস্যুলার সেকশন এ বিষয়ে পুলিশের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।”
গ্রেপ্তার এড়াতে কৌশল
পুলিশ কর্মকর্তা বাতেন বলেন, এই দুই নিরাপত্তা কর্মী প্রথম দিন থেকেই খুব কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। হত্যা করেও তাঁরা পালাননি। কারণ, তাঁরা না পালিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বাতেনের দাবি, অল্প সময়ে বেশি অর্থের লোভে দুই নিরাপত্তারক্ষী মিলে গাউজিয়াং হুইকে হত্যা করেছেন।
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, রউফ ইনামুলকে গাউজিয়াং বড় ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছিলেন। তিনি অনেক টাকাপয়সা নিয়ে চলাফেরা করেন। নিজের ফ্ল্যাটে থাকেনও একা। তাঁকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিতে পারলে জীবনে কিছু করা যাবে।
“এরপর তাঁরা দুজন গাউজিয়াংকে হত্যার পরিকল্পনা করেন,” বলেন আব্দুল বাতেন।
যেভাবে মারা হয় গাউজিয়াংকে
আব্দুল বাতেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, হত্যার তিন দিন আগেও একবার একই উদ্দেশ্যে গাউজিয়াং হুইয়ের বাসায় যান দুই নিরাপত্তারক্ষী রউফ ও এনামুল। তবে সেদিন কলিং বেল চাপলেও কেউ সাড়া দেয়নি। পরে ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আবারও তাঁরা ওই বাসায় যান। এদিন কলিং বেল চাপলে গাউজিয়াং হুই দরজা খোলেন।
গাউজিয়াং তাঁদের চিনতে পারেননি। তিনি বাংলা ও ইংরেজি ভাষা জানতেন না। ফলে ইশারায় তাঁরা কী চান জানতে চাইলে এনামুল ‘ওয়াটার’ ‘ওয়াটার’ বলে ইঙ্গিত করেন। বাসার একটু ভেতরে ঢুকলে এনামুল ও রউফ গামছা দিয়ে গাউজিয়াংয়ের গলায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। মাত্র দু-তিন মিনিটের মধ্যে গাউজিয়াংয়ের মৃত্যু নিশ্চিত করে তাঁর ল্যাপটপ, তিন লাখ ৪৯ হাজার টাকা নিয়ে যান তাঁরা।
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বাতেন বলেন, “টাকা ভাগাভাগির পর এনামুল আরেকটি বাড়িতে তার দায়িত্বে চলে যায়। রউফ ওই বাড়িতে গিয়ে নতুন ডিউটিতে আসা আরেক নিরাপত্তাকর্মী জয়নন্দকে বিষয়টি জানিয়ে সহায়তা চায়।”
“কিন্তু জয়নন্দ রাজি না হওয়ায় রাত ১১টার দিকে রউফ একাই গাউজিয়াংয়ের মৃতদেহ লিফট দিয়ে নামিয়ে বাড়ির পেছনে মাটি খুঁড়ে পুতে রাখে,” বলেন তিনি।
আব্দুল বাতেন বলেন, “এই হত্যা মামলার তদন্তে চীনা ব্যক্তির ব্যবসায়ী দিক, অন্য কারো সম্পর্ক আছে কিনা- এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে সব ধরনের তথ্য মিলিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরেই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
চার দিনের রিমান্ডে দুই নিরাপত্তারক্ষী
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া রউফ ও এনামুলকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম তোফাজ্জেল হোসেন তাঁদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে বেনারকে নিশ্চিত করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুল হক।
অন্যদিকে গাউজিয়াংয়ের লাশ উদ্ধারের পর বাড়ি থেকে নিহতের গাড়ি চালকসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়। তবে তাঁদের কাউকে এখন পর্যন্ত আটক দেখায়নি পুলিশ।