রাজনীতিতে স্কাইপে বিতর্ক, বন্ধ রাখার অভিযোগ

জেসমিন পাপড়ি
2018.11.20
ঢাকা
181120_Skype_story_1000.jpg গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ২০ নভেম্বর ২০১৮।
[নিউজরুম ফটো]

লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান স্কাইপে ব্যবহার করে দলীয় প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর ইন্টারনেটভিত্তিক এই যোগাযোগ মাধ্যমটি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিএনপি অভিযোগ করেছে, সরকার তারেক রহমান কর্তৃক প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া ঠেকাতে গত সোমবার স্কাইপে বন্ধ করে দিয়েছে।

তবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) স্কাইপে বন্ধ করার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা কারিগরি ত্রুটির কারণে হতে পারে। যদিও ব্যবহারকারীরা বলছেন, গত দুদিন ধরে দেশের অনেক স্থানেই স্কাইপে ব্যবহার করা যাচ্ছিল না।

এদিকে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে স্কাইপে খুলে দেওয়া হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সেক্রেটারি জেনারেল এমদাদুল হক।

“গতকাল (সোমবার) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে স্কাইপে বন্ধ করার জন্য বিটিআরসির চিঠি পাই। আর আজ (মঙ্গলবার) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আবার ওপেন (উন্মুক্ত) করে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা পেয়েছি। এরপরেই স্কাইপে খুলে দেওয়া হয়,” বেনারকে বলেন ইমদাদুল হক।

ইমেইলের মাধ্যমে এসব নির্দেশনা বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতির পর সরকারের এ ধরনের আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত বলছেন বিশ্লেষকেরা।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “এখন যারা অতি উৎসাহী হয়ে এসব করছে, তারা কিন্তু কারোই উপকার করছে না। যারা মনে করছে এটা করে তাদের উপকার হবে, তা মোটেই নয়। এটা করে তাদের ক্ষতিই হবে।”

তিনি বলেন, “বহু তরুণেরা আশাহত হবে। যেটা মঙ্গলকর নয়। এই সার্বিক বিষয়টা আসলে ইলেকশন কমিশনকে দেখতে হবে।”

দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছর এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলায় যাবজ্জীবন সাজার দণ্ডপ্রাপ্ত তারেকের লন্ডন থেকে স্কাইপে এই সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ সরকারি দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনের কাছে এ নিয়ে অভিযোগও দিয়েছে দলটি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, একজন দণ্ডিত আসামি এভাবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন না। তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের বক্তৃতা–বিবৃতি প্রচারে নিষেধজ্ঞা আরোপ করেছে উচ্চ আদালত।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট এই আদেশ কার্যকর করতে তথ্য সচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে নির্দেশ দেয়।

সরকারি দলের এই অভিযোগ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন রোববার কমিশনের সভা ডাকে। কমিশনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, বিদেশে অবস্থান করায় তারেক রহমান সম্পর্ক কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার কমিশনের নেই। এরপর সোমবার রাতে বাংলাদেশে স্কাইপে বন্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

অন্য মাধ্যমে সংযুক্ত তারেক

এদিকে স্কাইপে সংযোগ না পেলেও ইন্টারনেটে অন্য অ্যাপের ভিডিও কলের মাধ্যমে তৃতীয় দিনের মতো প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন তিন মামলায় দণ্ডিত তারেক।

“স্কাইপে লাইন শুধু নয়, গুলশান কার্যালয়ের ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আজও আমাদের মনোনয়নপ্রার্থীদের সাক্ষাৎকার ছিল, তখন উনি (তারেক জিয়া) পিভিআরে (অন্য অ্যাপ) কথা বলেছেন। স্কাইপেতে কথা বলতে পারেননি,” বেনারকে বলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।

তিনি বলেন, “সরকার অনেক বাধা বিপত্তি দেবে। তাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই আমরা আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুত আছি। এটাই আমাদের আন্দোলন।”

তবে মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বেনারকে বলেন, “আমার তো মনে হয় স্কাইপে খোলা আছে। সকালে ১০-১১টার সময় শুনছিলাম কোনো কোনো জায়গায় সচল কোনো জায়গায় অচল। এতক্ষণে আশা করি সেটা ঠিক হয়ে গেছে। আমি এখনো চেক করতে পারিনি।”

“আমরা তো আসলে স্কাইপে বন্ধ করিনি। কোনো টেকনিক্যাল কারণে হয়তোবা আপ-ডাউন ছিল,” বলেন তিনি।

বিএনপি কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারে লন্ডন থেকে তারেক রহমানের যুক্ত হওয়া বন্ধ করতেই স্কাইপে বন্ধ করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর উল্লেখ করলে জহুরুল হক বলেন, “স্কাইপে বন্ধ করে কী লাভ হবে বলুন? হোয়াটস আপ, ভাইবারে কি কথা বলবে না?”

মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য গঠিত বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ড চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। বুধবার চতুর্থ এবং শেষ দিনের মতো মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেবে দলটি।

এর আগে গত ১৮ ও ১৯ নভেম্বর দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এই বোর্ডে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী রয়েছেন।

তারেক রহমানও লন্ডন থেকে স্কাইপে যুক্ত হয়ে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেন।

দণ্ডিত একজন পলাতক আসামির এভাবে মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রোববারেই নির্বাচন কমিশনে (ইসি) লিখিত অভিযোগ জানায়।

তবে নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে কিছু করতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর সোমবার রাতে বাংলাদেশে স্কাইপে বন্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

তারেক রহমান কর্তৃক প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া ঠেকাতে সরকার স্কাইপে বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেনারকে বলেন, “সরকার ভয় পেয়েছে। এ কারণেই তারেক রহমানকে দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে স্কাইপে বন্ধ করেছে।”

“পাশাপাশি তফসিল ঘোষণার পরও বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, নির্যাতন চালানো হচ্ছে,” অভিযোগ করেন তিনি।

শহীদউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আমরা এখনো চাচ্ছি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার সেটা নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে গ্রহণ করবেন। এখন পর্যন্ত এখানে যথেষ্ট পরিমাণে ত্রুটি আছে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।