এক সপ্তাহ পেছাল নির্বাচন, দেশজুড়ে ভোট উৎসবের আমেজ

পুলক ঘটক
2018.11.12
ঢাকা
এক সপ্তাহ পেছাল নির্বাচন, দেশজুড়ে            ভোট উৎসবের আমেজ ধানমন্ডিতে আওয়ামীলীগ অফিসের সামনে উৎসবমুখর নেতাকর্মীদের ভীড়। ঢাকা ১২ নভেম্বর ২০১৮।
ছবি: বেনারনিউজ

বিরোধী দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নতুন তফসিল অনুযায়ী ভোট গ্রহণের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর এবং মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ আশা করেছিলাম এবং তা হয়েছে। এ জন্য দলগুলোকে অভিনন্দন জানাই। ঐক্য ফ্রন্টসহ বিরোধী দলগুলো পুনঃতফসিলের আবেদন জানিয়েছিল, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পুনঃতফসিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

সিইসি বলেন,“এটা নির্বাচন কমিশনের জন্য স্বস্তির বিষয় যে বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।”

নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে প্রায় সকল রাজনৈতিক দল। তবে ঐক্যফ্রন্টের কেউ এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলেনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘নির্বাচনের তারিখ এক সপ্তাহ পেছানোর সিদ্ধান্তকে আওয়ামী লীগ সমর্থন করে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার শুধু নির্বাচন কমিশনের। এখানে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই।”

তবে তিনি বলেন, “নির্বাচনের তারিখ না পেছালেও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসত, এটা আমরা জানতাম।… তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

নির্বাচনী উৎসব

বিরোধী দলের দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্ত আসার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে সামগ্রিক চালচিত্র। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলের কার্যালয়ের সামনে চলছে মনোনয়ন পত্র কেনার উৎসব। একতরফা নয়, বরং শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে প্রার্থীরা।

“বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগেরদিনই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানালেও নির্বাচনের তারিখ পেছানো নিয়ে বিষয়টি জেদাজেদির পর্যায়ে যায় কিনা –এ রকম একটা শঙ্কা ছিল। এখন সেটা কেটে গেছে বলেই মনে হচ্ছ,” বেনারকে বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল।

তিনি বলেন, “সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক, মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের পছন্দের দল ও প্রার্থীকে ভোট দিতে পারুক, এটাই আমরা দেখতে চাই। সর্বোপরি একটা সুস্থ গণতান্ত্রিক চর্চার পরিবেশ তৈরি হওয়া দরকার।”

বিএনপি নির্বাচনে আসায় জয়ের ব্যাপারে শঙ্কিত নন জানিয়ে সিরাজগঞ্জ-২ (কামারখন্দ-সদর আংশিক) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাবিবে মিল্লাত বেনারকে বলেছেন, “আমরা বিএনপিকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ধরে নিয়েই আগে থেকে প্রস্তুত অছি।”

নির্বাচনে বিএনপি’র জয়ের ব্যাপারে শতভাগ সিলেটের মেয়র এবং বিএনপি’র মনোনয়ন প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। বেনারকে তিনি বলেছেন, “মানুষ যদি স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় তাহলে ভোটের বাক্স ধানের শিষ উপচে পরবে।”

 

আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের চিত্র

শুক্রবার মনোনয়ন ফরম বিতরণ কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই মিছিলের পর মিছিল এসে ঠেকছে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ের সামনে। কর্মী সমর্থকেরা ব্যান্ডদলসহ ড্রাম ও মাদল বাজিয়ে উৎসব করছেন এবং তাদের পছন্দের নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি দাবি জানাচ্ছেন।

এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী জোট, বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট এবং আওয়ামীলীগৈর নেতৃত্বাধীন ১৪ দল এক সঙ্গে নির্বাচন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। দলগুলোর মধ্যে আসন বণ্টনের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আওয়ামী লীগ চারদিনে বিক্রি করেছে ৪০২৩ টি মনোনয়ন ফরম। বিএনপি সোমবার প্রথম দিনে বিক্রি করেছে ১৩২৬টি ফরম।

সোমবার মনোনয়নপত্র বিক্রির চতুর্থ দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১৪ নভেম্বর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু হবে। সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবেন।”

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ”এবার দলের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে বোর্ড বিচার-বিশ্লেষণ করে দেবে। প্রার্থীদের যোগ্যতা নির্ধারণে কয়েকটি সার্ভে করা হয়েছে। বিদেশি সংস্থাও সার্ভে করে তথ্য আপডেট করে দিয়েছে।”

আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়া মানেই বিজয়ী—এটা ভ্রান্ত ধারণা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “কিছু কিছু পত্রিকায় এসেছে আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়া মানেই বিজয়ী। যারা এটা মনে করেন তারা বড়মাপের ভুল করছেন।”

বিএনপি কার্যালয়ের চিত্র

এর আগে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয় মনোনয়ন বিক্রি নিয়ে কোলাহল মুখর থাকলেও নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে ছিল সুনসান নিরবতা। তবে সোমবার সকাল থেকে হাজার হাজার সমর্থক পরিবৃত হয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র কিনতে শুরু করেন বিএনপি নেতারা।

ফলে দীর্ঘ ১০ বছর পর নির্বাচনী আমেজে জমে উঠেছে বিএনপি কার্যালয়। দলের চেয়ারপার্সন কারাবন্দী খালেদা জিয়ার জন্য মনোনয়নপত্র ক্রয়ের মধ্যদিয়ে সকালে ফরম বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

খালেদা জিয়ার জন্য ফেনী এবং বগুড়ার মোট তিনটি আসনে মনোনয়ন পত্র কেনা হয়েছে। তবে আদালতে দন্ডিত হওয়ায় তার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা অনিশ্চিত।

মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম শুরুর পর মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত কিছুই নাই। আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার চলছে। আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি। এসব বন্ধ করা না হলে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি না হলে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই পুনর্বিবেচনা করব।”

তিনি বলেন, “নির্বাচনে আমরা অংশ নিচ্ছি এ জন্য যে, এর মধ্য দিয়ে আমরা স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে চাই; গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই। খালেদা জিয়াসহ গণতন্ত্রকামী হাজার হাজার নেতা-কর্মী আজ বন্দী। তাদের মুক্তির দাবিতে আমরা এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।”

দুপুরে বিএনপির পাঁচ নেতা-মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও মির্জা আব্বাস- কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন।

নির্বাচনকালীন সরকার

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকার শুরু হয়ে গেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

তফসিল ঘোষণার পর সোমবার মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক শেষে সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে  সচিব বলেন, “তফসিল ঘোষণার সময় থেকেই নির্বাচনকালীন সরকার শুরু হয়ে গেছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১৮’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শফিউল আলম বলেন, “নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা আইনের খসড়া উত্থাপন ও বিশেষ প্রয়োজন হলে তাতে নীতিগত অনুমোদন দিতে পারবে, এ ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বিধি-নিষেধ নেই।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।