শরণার্থী প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়াকে স্থগিত করার আহবান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো

সুনীল বড়ুয়া এবং জেসমিন পাপড়ি
2019.08.21
কক্সবাজার, ঢাকা
শরণার্থী প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়াকে স্থগিত করার আহবান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা তরুণ মোহাম্মদ শফিক কুতুপালং ক্যাম্পে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। জুলাই ২৩, ২০১৯।
এএফপি

''স্বেচ্ছা, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ '' প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত; রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর দ্বিতীয় উদ্যোগটিকে স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

গত শুক্রবার বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার জানিয়েছিলো, দু বছর আগে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রথম প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে তারা কাজ করছেন।

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নীপিড়নমূলক অভিযানের ফলে ২০১৭ সালের আগস্টের পর প্রায় সাড়ে সাত লাখ শরণার্থী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। যদিও আলোচিত প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।

হিউম‌্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) - এর সাউথ এশিয়া ডিরেক্টর মিনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, '' রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ব্যাপারে বাংলাদেশ উদারতা দেখিয়েছে। যদিও  শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিত কঠিন- তবুও নিরাপদ বোধ না করা পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থী ফিরে যাবার ব্যাপারে আগ্রহী হবে না।''

এদিকে গত মঙ্গলবার তালিকাভুক্তদের মধ্যে মাত্র  ২১ জন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) এবং বাংলাদেশের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) প্রতিনিধিদের কাছে ফিরে যাবার ব্যাপারে তাদের মতামত জানিয়েছেন।

মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে গত শুক্রবার মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ থে এক প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলেন যে, দুই প্রতিবেশি দেশ আগামী ২২ তারিখে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। এর পরই প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে কাজ শুরু হয়।

এদিকে ২২ আগস্ট ২০১৯ তারিখে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এক স্বাক্ষরিত এবং আঙ্গুলের ছাপ সম্বলিত এক  বিবৃতিতে বলা হয়েছে,  গত সপ্তাহে ক্যাম্প ২৪, ২৬ এবং ২৭ থেকে ৩,৪৫০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের  ইউএনএইচসিআর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তালিকায় থাকা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন হবে।  কীভাবে এই গোপন তালিকা তৈরি হলো এবং আমাদের নাম কেন তাতে যুক্ত হলো- এটা নিয়ে আমরা চিন্তিত। আমরা কখনোই স্বেচ্ছায় যাবার জন্য এই তালিকায় আমাদের নাম লেখাই নি।

''মিয়ানমার সরকার আমাদের ধর্ষণ ও হত্যা বরেছে। কাজেই আমাদের নিরাপত্তা দরকার। নিরাপত্তা ছাড়া আমরা কখনোই ফেরত যাবো না। '' নসিমা, ক্যাম্প ২৬ এর শরণার্থী এই কথা তাঁর বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।

মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে, যেকোনো আশু প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়াকে স্থগিত করা। আজ মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস অপর এক বিবৃতিতে এমনটি বলেছে। তারা বলেন, কর্তৃপক্ষের উচিত হবে, শরণার্থীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং মিয়ানমারে তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। এবং তাদের সাথে অর্থপূর্ণ আলোচনার মাধ‌্যমে শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি দেখা।

'' এখন প্রত্যাবর্তন হবে বিপদজনক এবং হঠকারি '' বলেন, ম্যাথিউ স্মিথ, সিইও, ফোর্টিফাই রাইটস।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাউথ এশিয়া ডিরেক্টর মিনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, শরণার্থী ফেরত পাঠানোর এই বিপদজনক দ্রুত পদক্ষেপের সাথে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়া উচিত হবে না, যেখানে পরিস্থিতি এমন যে, তারা আবারো পালাতে বাধ্য হতে পারে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।