শহিদুল আলমকে কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেবার নির্দেশ

পুলক ঘটক
2018.09.05
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
180905_Shahidul_Alam-1000.JPG ঢাকায় ‘গণতন্ত্রের জন্য লড়াই’ শিরোনামে দৃক আয়োজিত শহিদুল আলমের ছবি প্রদর্শনীর প্রাঙ্গনে তাঁর মুক্তি দাবি করা ব্যানার। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
সৌজন্যে: দৃক

জামিন দিতে দুই বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ বিব্রত হওয়ার পরদিন প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলমকে জেলখানায় প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। দীর্ঘ এক মাস ড. আলম কারাগারে আছেন।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালত এর আগে ২৭ আগস্ট একই রকম আদেশ দিয়েছিলেন। সেই আদেশটি এত দিন যাবৎ বাস্তবায়ন না হওয়ায় বুধবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শহিদুল আলমের স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ।

আবেদনটি শুনানির পর বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ কারাবিধি অনুযায়ী তাঁকে ডিভিশন (প্রথম শ্রেণির মর্যাদা) দেওয়ার নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ তাঁর জামিন আবেদন শুনানিতে বিব্রতবোধ করার পর এই আদেশ এলো।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. সারা হোসেন ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

শুনানিকালে শহিদুল আলমকে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা না দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে মাহবুবে আলম বলেন, “তিনি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন।”

এর বিপরীতে আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, “সামাজিক অবস্থান বা শিক্ষাগত যোগ্যতার কারণে ড. শহিদুল আলমকে প্রথম শ্রেণির বন্দী হিসেবে গণ্য করা উচিত।”

“কারাবিধি অনুযায়ী বিচারাধীন কারাবন্দীদের দুই ধরনের শ্রেণিতে রাখা হয়। প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণি। আদালত তাঁকে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দিতে আদেশ দিয়েছেন,” সাংবাদিকদের বলেন সারা হোসেন।

হাইকোর্টে আবেদন করার প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে শহিদুলের আরেক আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বেনারকে বলেন, “মহানগর হাকিম আদালত জেল কোড অনুযায়ী তাঁকে প্রথম শ্রেণির বন্দী হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বিশেষ মর্যাদা অনুমোদনের জন্য আদেশের কপিটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠিয়ে দেয় জেল কর্তৃপক্ষ। সেটি এখনো জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেই ঝুলে আছে। ফলে কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পাননি শহিদুল আলম।”

“এই বিলম্বের কারণে আমরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করি। হাইকোর্ট আবেদন গ্রহণ করে তাঁকে অবিলম্বে মর্যাদা প্রদানের আদেশ দিয়েছে,” জানান তিনি।

হাইকোর্টের উক্ত আদেশের অনুলিপি বেনার পেয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, “উল্লেখিত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কিংবা অন্য যে কোনো মামলায় কারাবন্দী থাকাকালে পরবর্তী আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত শহিদুল আলমকে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দিতে হবে।”

স্বরাষ্ট্রসচিব, মহা কারা পরিদর্শক, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপারিনটেনডেন্ট এবং জেলারকে এই আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

হাইকোর্টের আদেশটি তাৎক্ষণিকভাবে তামিল করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর আলম বুধবার বিকেলে বেনারকে বলেন, “আমরা আদেশটি এখনো হাতে পাইনি। আদেশ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ ৫ আগস্ট রাতে তুলে নিয়ে যায় দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা ড. শহিদুল আলমকে। পরদিন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ফেসবুকের মাধ্যমে ‘উসকানিমূলক ও মিথ্যা’ প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে ড. শহিদুলের বিরুদ্ধে।

গত ৬ আগস্ট শহিদুল আলমের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ড শেষে গত ১২ আগস্ট তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। এ মামলায় আগামী ১১ সেপ্টেম্বর মহানগর দায়রা জজ আদালতে তাঁর জামিন শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে।

নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন নিষ্পত্তি হতে বিলম্ব হওয়ায় ২৮ আগস্ট হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেছিলেন শহিদুল আলমের আইনজীবীরা। কিন্তু হাইকোর্টও এখন পর্যন্ত জামিন আবেদনটি নিষ্পত্তি করেনি।

একজন বিচারপতি বিব্রতবোধ করায় হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ শুনানিতে অপারগতা জানিয়ে সিদ্ধান্তের জন্য গত মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি অপর একটি বেঞ্চকে এই জামিন আদালত নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেবেন।

“বুধবার পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি জামিন আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য নতুন কোনো বেঞ্চকে দায়িত্ব দেননি,” বেনারকে জানান শহিদুলের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।