শহিদুল আলমের জামিন আবেদন বাতিল
2018.09.11
ঢাকা
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলাকালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আন্দোলন উসকে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের জামিন আবেদন মঙ্গলবার বাতিল করেছে নিম্ন আদালত।
এর আগে হাইকোর্ট শহিদুল আলমের জামিন শুনতে বিব্রত বোধ করে। তাঁর আইনজীবীরা বলছেন, তাঁরা পুনরায় হাইকোর্টে আবেদন করবেন। হাইকোর্ট আবার জামিন আবেদন করতে আইনগত কোনো বাধা নেই।
গত ৫ আগস্ট রাতে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে ডিবি পুলিশ শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় সামাজিক যোগাযোগ ও ডিজিটাল মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করার অভিযোগ আনা হয়।
পরদিন শহিদুল আলমকে সাত দিনের পুলিশি রিমান্ডে রাখার আদেশ দেয় আদালত। রিমান্ড শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নিম্ন আদালতে ব্যর্থ হয়ে গত ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে জামিন নিতে আবেদন করেন শহিদুল আলমের আইনজীবিরা। তবে ৪ সেপ্টেম্বর শহিদুল আলমের জামিন আবেদন শুনতে বিব্রত বোধ করে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আরেকটি বেঞ্চে মামলাটির শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানান তাঁর আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আবেদনটি শুনানির জন্য অন্য একটি বেঞ্চ গঠন করে দেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার শুনানি শেষে জামিন না দিয়ে মঙ্গলবারের মধ্যে শহিদুলের জামিনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে নিম্ন আদালতকে আদেশ দেয় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। সেই অনুসারে মঙ্গলবার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েস শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে দেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ্ আবু।
আইনজীবী সারা হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, শহিদুল আলমের জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন জানাবেন।
তবে শহিদুলের জামিন বাতিল হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে আব্দুল্লাহ্ আবু বেনারকে বলেন, “শহিদুল রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করেছেন।”
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য প্রকাশ বিশ্বাস বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একাধিকবার জামিন চাইতে কোনো নিষেধ নেই। শহিদুল আলম হাইকোর্ট আবার জামিন চাইতে পারেন। তবে, কবে নাগাদ জামিন শুনানি হতে পারে তা সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার।”
পুলিশ বলছে, গত ২৯ জুলাই থেকে শুরু হওয়া নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে উসকানি দিয়েছেন শহিদুল আলম। তিনি নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “শহিদুল আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়ার পাশাপাশি আল-জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি আমাদের সরকারকে অবৈধ বলেছেন।”
মন্ত্রী বলেন, “যে কেউ সরকারের সমালোচনা করতেই পারে। তাই বলে মিথ্যা তথ্য দেওয়া আইনসিদ্ধ নয়। সে কারণে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ তদন্ত করে দেখবে, চার্জশিট দেবে। আইনগতভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।”
তবে কবে নাগাদ পুলিশ তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দেবে সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি মন্ত্রী।
মন্ত্রীর এই অভিযোগের বিপরীতে শহিদুলের স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ বেনারকে বলেন, “শহিদুলের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে এবং এর স্বপক্ষে যেসব প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে লিংক দেওয়া হয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে দেওয়া হয়নি। তার বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।” তিনি বলেন, তাঁর স্বামীর সকল পোস্ট সবাই দেখতে পারেন।
রেহনুমা আহমেদ আরও বলেন, “নিরাপদ সড়কের দাবি রাজনৈতিক দাবিতে পরিণত হয়। শহিদুল সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে, একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে নিরাপদ সড়ক নিয়ে কথা বলেছেন। সে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়। সুতরাং, শহিদুল সরকার বিরোধী আন্দোলনকে উসকে দিতে আল-জাজিরায় বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলেছেন—এ কথা ঠিক নয়।”
তিনি বলেন, “জামিনের ব্যাপারে শহিদুলের প্রতি ‘আন ফেয়ার ট্রিটমেন্ট’ (অন্যায় ব্যবহার) করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘ দিনের সমস্যা।”
তাঁর মতে, “শহিদুলের প্রতি যা করা হচ্ছে, তা সকলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এটা কারও জন্যই ভালো উদাহরণ নয়।”
এদিকে শহিদুল আলমকে জামিন না দেওয়ার ঘটনাকে ‘ন্যায় বিচারের নিষ্ঠুর অবমাননা” বলে মন্তব্য করে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে অবিলম্বে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।