শুনানির দিন শহিদুল আলমের জামিন বিরোধিতার ব্যাখ্যা দেবে সরকার

কামরান রেজা চৌধুরী
2018.10.16
ঢাকা
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
181016_SHAHIDUL_1000.jpg শহিদুল আলমের মুক্তির দাবিতে ক্যামেরা হাতে আলোকচিত্রীদের প্রতিবাদ। ১৬ অক্টোবর ২০১৮।
বেনারনিউজ

আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে কেন জামিন দেওয়া হবে না তার কারণ জানাতে সরকারকে হাই কোর্টের বেঁধে দেওয়া সময় পার হয়ে গেলেও “আমাদের বিচার ব্যবস্থায় রুলের জবাব লিখিতভাবে জানানোর প্রয়োজন নেই” বলে মন্তব্য করেছেন সরকার পক্ষের আইনজীবী।

“যেদিন শুনানি হবে সেদিনই আমরা কেন তাঁর জামিনের বিরোধিতা করছি তা আদালতে মৌখিকভাবে জানানো হবে,” বেনারকে বলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ্।

শহিদুল আলমের কারামুক্তির দাবিতে মঙ্গলবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যামেরা হাতে মানববন্ধন করেছেন তাঁর সহকর্মী ও ছাত্র-ছাত্রীরা। তাঁরা শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে ‘মিথ্যা’ আখ্যা দিয়ে তাঁর মুক্তি দাবি করেছেন।

এদিকে শহিদুল আলমের পঞ্চম জামিনের আবেদন শুনানি আগামী রোববার অনুষ্ঠিত হবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

তিনি বলেন, “ওই দিন গত ৮ অক্টোবর হাইকোর্ট কর্তৃক সরকারকে দেয়া ‘শহিদুলকে কেন জামিন দেয়া হবে না’ রুলের জবাব দেবে রাষ্ট্রের পক্ষ।”

“যদি আগামী রোববার শুনানি হয়, তবে সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল নিজেই আদালতে উপস্থিত হয়ে রাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরবেন,” বলেন ড. বশির।

গত ৫ আগস্ট গ্রেপ্তারের পর থেকে জামিন প্রশ্নে নিম্ন আদালতে তিনবার ও হাইকোর্টে দুইবার শুনানি অনুষ্ঠিত হলেও জামিন মেলেনি দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলমের।

গত ৮ অক্টোবর বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুজিবুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শহিদুল আলমকে কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানাতে সরকারের ওপর রুল জারি করে।

জবাব দিতে সরকারকে সাত দিন সময় বেঁধে দিয়েছিল আদালত, যার সময়সীমা গত সোমবার পার হয়ে গেছে।

সরকার পক্ষের ব্যাখ্যা

শহিদুল আলমের জামিন বিরোধিতার কারণ হিসেবে ড. বশির বেনারকে বলেন, “তিনি যে ধরনের অপরাধ করেছেন সেটা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। যেহেতু ‍তিনি অনলাইনে অপরাধ করেছেন তাই তাঁর অপপ্রচারের অপরাধ আমলে নিয়ে পুলিশ ৫৭ ধারায় মামলা করেছে।”

ড. বশিরের মতে, “তাঁর জামিনের বিরোধিতার কারণ হলো: তিনি যে অপরাধ করেছেন সেই অপরাধের সাজা ১৪ বছর জেল এবং এক কোটি টাকা জরিমানা। আমরা আশা করছি তার ১৪ বছর সাজা হবে।”

তিনি বলেন, “নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলাকালে শহিদুল আলম ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া সংবাদ প্রচার করে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালান। এর উদ্দেশ্য ছিল সরকারের পতন ঘটানো।”

“তাঁর অপরাধের তুলনায় শহিদুলের জেল খাটার সময় খুবই কম। তিনি তো ১৪ মাসও জেল খাটেননি। তাই আমরা তাঁর জামিনের বিরোধিতা করি,” বলেন ড. বশির।

গত শুক্রবার প্রকাশিত রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহিদুল আলমকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে উল্লেখ করেন।

সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউইয়র্ক গিয়ে রয়টার্সকে দেয়া ওই সাক্ষাতকারে শহিদুল আলম সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছেন অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর মায়ের মামা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে শহিদুল আলমের স্ত্রী অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ বেনারকে এক ই-মেইলে জানান, “পুলিশ শহিদুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তদন্ত করছে, এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা মন্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকলেই ভালো। তদন্তকাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত না হওয়ার বা বিচারবিভাগ প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা জন্মায়।”

এর আগে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুর সঙ্গে শহিদুলকে জড়ানোর নিন্দা করেছেন দৃক গ্যালারির পরিচালক সায়দিয়া গুলরুখ।

তিনি বেনারকে বলেন, “১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দৃক। এরপর নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে নিজস্ব অর্থায়নে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আর্কাইভ তৈরির কাজ শুরু করে শহিদুলের নেতৃত্বের দৃক। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ‘দ্য বার্থ প্যাংস অফ অ্যা নেশন’ তৈরি করেন।”

“শহিদুল আলম বহু আগে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ শুরু করেন নিজ উদ্যোগে। সেই কাজ এখনো চলছে,” বলেন সায়দিয়া।

আলোকচিত্রীদের প্রতিবাদ

দৃকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পাঠশালার পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, মঙ্গলবার ‘শহিদুল আলমের মুক্তির দাবিতে আলোকচিত্রবৃন্দ’ ব্যানারে আলোকচিত্রী, এ্যাক্টিভিস্ট ও লেখকরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এক প্রতিবাদ অনুষ্ঠান করেন।

এছাড়া প্রতিবাদ সভায় ‘অবিলম্বে শহিদুল আলমের মুক্তি চাই’, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা চাই’, সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন’, ‘গ্রেফতার নির্যাতন বন্ধ করো’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড হাতে নাগরিকরাও প্রতিবাদ জানান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।