শহিদুল আলম মুক্তি পাবেন, ‘যদি না রাষ্ট্রপক্ষ আর বিরোধিতা করে’
2018.11.19
ঢাকা
সরকার আর বিরোধিতা না করলে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে ‘সরকার-বিরোধী আন্দোলনে’ রূপ দেওয়ার অভিযোগে আটক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে সোমবার চেম্বার জজ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
দুপুরে চেম্বার জজ আদালতে শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিনিধি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং শহিদুল আলমের আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন। তবে শুনানি হয়নি।
এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বেনারকে বলেন, “আজ চেম্বার আদালতের কার্য তালিকায় শহিদুলের বিষয়টি আসেনি। যদি আগামীকাল আসে তাহলে আমরা আমাদের যুক্তি উপস্থাপন করব।”
আগামীকাল কার্যতালিকায় আসবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, “দেখা যাক আসে কি না। আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বেনারকে বলেন, “শহিদুল আলমের জামিন আবেদন নিম্ন আদালতে পাঠানো হয়েছে সোমবার বিকালে।”
তিনি বলেন, “যদি রাষ্ট্র চেম্বার আদালতে আর বিরোধিতা না করে তাহলে শহিদুল আলম আগামীকাল মুক্তি পেতে পারেন। মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালত থেকে মুক্তির আদেশ জেলগেটে গেলেই শহিদুল আলম মুক্তি পাবেন আশা রাখি।”
শহিদুলের স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ বেনারকে বলেন, “আগামীকাল শহিদুলের মুক্তির আদেশ নিম্ন আদালত থেকে জেলগেটে যাবে বলে আশা করছি।”
গত ৫ আগস্ট থেকে ছয়বার চেষ্টার পর বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট থেকে জামিন দেওয়া হয় শহিদুল আলমকে।
অ্যাটর্নি জেনারেল তখন বলেছিলেন, রোববার রাষ্ট্রপক্ষ শহিদুলের জামিন আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করবে। তবে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে আবেদনটি করা হয় সোমবার সকালে।
আইনানুযায়ী, রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি করার যোগ্য কি না, তা ম্যূলায়ন করতে চেম্বার জজ আদালতে পাঠানো হয়।
শহিদুলের আরেক আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, “যেহেতু রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা করেনি তাই, এখন পর্যন্ত হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ বহাল রয়েছে। শহিদুলের মুক্তি পেতে কোনো আইনি বাধা নেই।”
২৯ জুলাই ঢাকার শহিদ রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাস চাপায় নিহত হলে সারা দেশে শুরু হয় নিরাপদ সড়ক আন্দোলন।
স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকেরা রাস্তায় নেমে আসলে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কারণে সাত দিনের বেশি সময় ধরে অচল হয়ে যায় সারা দেশ।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামাতের সশস্ত্র কর্মীরা ছাত্র-ছাত্রীর বেশে নাশকতা করছিল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে কোমলমতি শিশুদের সরকার বিরোধী আন্দোলনের দিকে ধাবিত করা হচ্ছিল বলে সরকার অভিযোগ করে।
পুলিশ বলছে, পেশায় আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক শহিদুল আলম এই আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন এবং তিনি আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন সময় ফেসবুক লাইভে এসে ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে ‘উসকানি’ দেন।
আল-জাজিরা টেলিভিশনের সাথে এক সরাসরি সাক্ষাৎকারে শহিদুল নিরাপদ আন্দোলনকে সরকারের কর্মকাণ্ডের সাথে মিশিয়ে বক্তব্য দেন।
তিনি আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘অনির্বাচিত’ বলে মন্তব্য করেন এবং বলেন, বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।
তাঁর এই বক্তব্যকে পছন্দ করেনি সরকার। গত ৫ আগস্ট তাঁকে ধানমন্ডির বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ।
অনলাইনে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে উসকে দেয়ার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারায় মামলা করে পুলিশ।
পরদিন তাঁকে মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করা হলে, আদালত তাঁর জামিন আবেদন বাতিল করে সাত দিনের পুলিশি রিমান্ডে পাঠিয়ে দেয়।
রিমান্ড শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর থেকে নিম্ন আদালতে তিনবার ও হাইকোর্টে কমপক্ষে তিনবার চেষ্টার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন মেলে শহিদুল আলমের।