সমাবেশের অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি নেতাদের সাক্ষাৎ
2018.03.27
ঢাকা
বারবার চেয়েও ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি না পেয়ে জন্য শেষ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতারা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কোনো মন্ত্রীর সঙ্গে সংসদের বাইরে থাকা দলটির নেতাদের এটাই প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নেতৃত্ব দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সঙ্গে ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
“২৯ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতির ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনারকে বারবার অনুরোধ করেও সাড়া না পেয়ে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এসেছি,” বৈঠক শেষ সাংবাদিকদের বলেন নজরুল ইসলাম।
বিএনপি নেতারা যখন সমাবেশ করা নিয়ে সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করছেন, এর পরদিনই মঙ্গলবার কারাগারে থাকা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদন গ্রহণযোগ্যতার শুনানি হবে হাইকোর্টে। এ ছাড়া এদিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে বিশেষ আদালত-৫-এ হাজির করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
আশা নিয়ে অপেক্ষমাণ বিএনপি
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিটের এই বৈঠক আন্তরিকতাপূর্ণ ছিল জানালেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমাবেশের করার বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, “সমাবেশের অনুমতি দেওয়া না দেওয়া, পিছিয়ে দেওয়া কিংবা স্থান পরিবর্তন করতে বলা—এর সবকিছুই নির্ভর করছে পুলিশের ওপর।”
তিনি বলেন, “বিএনপিকে সভা-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, এই অভিযোগ সঠিক নয়। কয়েক দিন আগেও তারা খুলনায় সমাবেশ করেছে।”
প্রসঙ্গত, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে আগামী ২৯ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চেয়ে গত ১৯ মার্চ ঢাকা মহানগর পুলিশ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। তবে এখনো সমাবেশের অনুমতি পায়নি দলটি। এর আগে ১২ মার্চ একই স্থানে সমাবেশের অনুমতি চাইলেও জননিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে সেবারও অনুমতি দেয়নি পুলিশ।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে দায়িত্ব পালনকারী জাতীয় পার্টিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে অনুমতি দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাৎক্ষণিক ফল না পেলেও আগামী ২৯ মার্চ সমাবেশের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি।
প্রতিনিধি দলের নেতা নজরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “আমরা অনুমতির অপেক্ষায় থাকব। অতীত তিক্ত অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও আমরা আশাবাদী থাকতে চাই। যে পর্যন্ত না ইতিবাচক ফল পাই, সে পর্যন্ত খুব বেশি পাওয়ার কোনো কারণ দেখি না।”
বৈঠকের ব্যাপারে তিনি বলেন, “মন্ত্রী বলেছেন, সভা করার ব্যাপারে সাধারণত কোনো আপত্তি নেই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আজই উনি কথা বলে আমাদের জানাবেন। আমরা অপেক্ষা করব তার কথার জন্য।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাড়া ইতিবাচক বলেই মনে করেন তিনি।
নির্ভর করছে পুলিশের ওপর
ডিএমপি সূত্র বলছে, ২৯ মার্চ রাজধানীতে বিএনপি সমাবেশ করতে পারবে কিনা তা নির্ভর করছে গোয়েন্দা তথ্যের ওপর। আর অনুমতি পেলেও প্রয়োজনে প্রয়োজনে সময় ও জায়গার পরিবর্তন হতে পারে। বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ডিএমপি’র একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, “কালকের (বুধবার) আগে সিদ্ধান্ত পাবেন না। মন্ত্রীর কথাতেই তো সব আছে।”
অরাজকতা হতে পারে এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিএনপিকে ছোট সমাবেশের অনুমতি দিলেও বড় সমাবেশের অনুমতি দেয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, “ডিএমপি কমিশনারের কাছে নিশ্চয়ই কোনো গোয়েন্দা তথ্য ছিল সে জন্য তিনি তাদের (বিএনপিকে) বারণ করেছেন। সমাবেশ যাতে নিরাপদে করতে পারেন সে জন্য আমাদের কমিশনারেরও কিছু দায়িত্বে রয়েছে। সে জন্য হয়তো কমিশনার অন্যদিন বা অন্য কোনো স্থানে সমাবেশ করতে বলেছেন।”
তিনি বলেন, “তারা আমাদের বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য বলেছেন। আমি নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানতে চাইব অসুবিধা কোথায় কিংবা কোনো ধরনের অসুবিধা আছে কি না?”
খালেদার সাজা বৃদ্ধির আবেদনের শুনানি বুধবার
এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে উচ্চ আদালতে দুদক যে আবেদন করেছে বুধবার সেটির গ্রহণযোগ্যতার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছর এবং তারেক রহমানসহ পাঁচজনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয় বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত। রায়ের পর থেকে কারাগারে আছেন খালেদা। রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে করা তার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। এরপরেই খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ বৃদ্ধি চেয়ে গত ২৫ মার্চ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করে দুদক।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বেনারকে জানান, “খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে করা আবেদনটি মঙ্গলবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেটি বুধবার কার্যতালিকায় আসবে বলে জানিয়েছেন আদালত। এদিন আবেদনটির গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি হবে।”
এই মামলার সহযোগী আসামিদের ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলেও প্রধান আসামি খালেদা জিয়াকে দেওয়া পাঁচ বছর দেওয়া হয়েছে। মূলত আবেদনে বিচারিক আদালতের এই সাজা অপর্যাপ্ত বলে তা বৃদ্ধি চেয়ে খালেদা জিয়ার সাজা কেন বৃদ্ধি করা হবে না—এ মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।
আদালতে আনা হতে পারে খালেদাকে
এদিকে প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর বুধবার আবারও আলোচিত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য বুধ এবং বৃহস্পতিবার দিন ধার্য আছে।
এ উপলক্ষে এদিন খালেদা জিয়াকে বিশেষ আদালত-৫-এ হাজির করা হতে পারে। আদালতের হাজিরা পরোয়ানা অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ফলে গত ৫ ফেব্রুয়ারি নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে যাওয়ার প্রায় সাত সপ্তাহ পর প্রথমবারের মতো বাইরে আসতে পারেন খালেদা।
এর আগে গত ১৩ মার্চ এই শুনানিতে মামলার পরবর্তী তারিখে খালেদা জিয়াকে হাজির করার জন্য হাজিরা পরোয়ানা (প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট বা পি ডব্লিউ) জারির প্রার্থনা করে রাষ্ট্রপক্ষ। যদিও আসামি পক্ষ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ তামিল না হওয়া পর্যন্ত চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাজিরা পরোয়ানা না জারি করে মামলার তারিখ এক মাস পিছিয়ে দেওয়া এবং ওই সময় পর্যন্ত খালেদার জামিন বহাল রাখার আবেদন করে।
সেদিন আদালত ২৮-২৯ মার্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন এবং ওই তারিখে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করার জন্য পি ডব্লিউ জারি করা হবে বলে জানান। সে অনুযায়ী আদালতের জারি করা পি ডব্লিউ কারাগারে গেছে বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে।