ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচারে সরকারি দল, বিরোধীদের অসহযোগের ডাক

কামরান রেজা চৌধুরী ও অয়ন আমান
2023.12.20
ঢাকা
ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচারে সরকারি দল, বিরোধীদের অসহযোগের ডাক সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্বাচনী জনসভায় ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পতাকা নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচছা জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০ ডিসেম্বর ২০২৩।
সৌজন্যে:পিআইডি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর দিন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে ভোট বর্জন করা বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।  

বুধবার সকালে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহ পরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  এ দিন সিলেটে একটি নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন তিনি।

একই দিন বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন ভোট বর্জন করা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

“নির্বাচনের নামে বানর খেলায় যাবেন না; ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। নির্বাচনে কারা এমপি হবেন সেই তালিকা তৈরি হয়ে গেছে,” বলেন তিনি।

এই বক্তব্যের ঘন্টখানেক পর সিলেটের নির্বাচনী জনসভায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “এখন বলে অসহযোগ আন্দোলন করবে। হায়রে আল্লাহ, বানরে সংগীত গায়, শিলা ভাসে জলে, সে রকম হলো না? এরা নাকি অসহযোগ আন্দোলন করবে। ঢাল নেই, তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দার। তারা কিসের অসহযোগ করবে?”

বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী

বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে দেশবাসীর কাছে তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকায়’ ভোট চেয়েছেন।

তিনি বুধবার বিকেলে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায়  দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আগামী নির্বাচনে আমরা যাদের নৌকা মার্কার প্রার্থী দিয়েছি তাদেরকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।  আপনাদের কাছে সেটাই আমার আহ্বান।”

‘অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না,’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মানুষের জীবন কেড়ে নেবে, মানুষকে ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস কোথা থেকে পায়!

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই লন্ডনে বসে হুকুম দেয়, আর কতগুলো লোক এখানে আগুন নিয়ে খেলে।  আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পোড়ে, এটা তাদের মনে রাখা উচিত।  তারা মনে করেছে, অগ্নিসংযোগের কয়েকটি ঘটনা ঘটালেই সরকার পড়ে যাবে।  অত সহজ না।

সহিংসতা যাতে না হয়: বিশেষজ্ঞ মত

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “এক দল এই নির্বাচনের পক্ষে, আরেক দল বিপক্ষে।  উভয় পক্ষেরই সে অধিকার আছে।  তারা তাদের কর্মসূচি তারা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতেই পারে।”

তিনি আরও বলেন, “কোনোভাবেই যেন সহিংসতা সৃষ্টি না হয়।  কোনোভাবেই যেন এর মাধ্যমে আইন ভঙ্গ করা না হয়, সেটি নাগরিক প্রত্যাশা।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বেনারকে বলেন, “যে প্রক্রিয়ায় বিএনপি অসহযোগের ডাক দিয়েছে এটা মূলত ভোটদানে মানুষকে সরাসরি বাধা দেয়া, নিরুৎসাহিত করা। এটা বিএনপি করতে পারে না।”

“বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিএনপির নির্বাচনে যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে দৃশ্যত কোনো আইনগত বাধা ছিলো না। নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের স্পিরিটকে আন্দোলনের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করে কোনো ফায়দা হবে না। এতে করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হয়তো আরও স্ট্রিমরোলার চালাবে সরকার,” বলেন তিনি।

কিংস পার্টি চলে গেল আড়ালে

কিংস পার্টিগুলোকে দূরে ঠেলে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে সরকারি দল।

আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জানিয়েছিলেন, বিএনপির অনেক নেতা দল ছেড়ে ২০২৩ সালে নিবন্ধন পাওয়া দল তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিতে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন। কিন্তু সেটি হয়নি।

সরকারের সমর্থন থাকার পরও তিন দলের একটিও মোট সংসদীয় আসনের অর্ধেক আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি।

নির্বাচন কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন কিংস পার্টির মধ্যে তৃণমূল বিএনপি সর্বোচ্চ ১৩৩টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দিয়েছে যথাক্রমে ৭৯ এবং ৫৪ আসনে নিজস্ব প্রার্থী দিয়েছে।

‘কিংস পার্টি’ হিসাবে রাজনৈতিক মহলে পরিচিত এসব রাজনৈতিক দল বিএনপির উল্লেখযোগ্য নেতাদের দলছুটও করতে পারেনি।

এমন প্রেক্ষাপটে পুরানো রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৪ দলের সাথে আসন ভাগাভাগি করেই নির্বাচনে আছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এই প্রক্রিয়ায় তিনটি নতুন দল উপেক্ষিত হয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) নেতৃত্বে আছেন বিএনপির সাবেক সংসদ-সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। নির্বাচন বয়কটের হুমকি দিলেও তিনি ফরিদপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করছেন।

২০২৩ সালে নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপির যার নেতৃত্বে আছেন বিএনপির নেতা শমশের মবিন চৌধুরী ও নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতা তৈমুর আলম খন্দকার।  এই দুই নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহন করছেন।

দল কেন সকল আসনে প্রার্থী দিতে পারলো না এমন প্রশ্নের জবাবে তৃণমূল বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমান বুধবার বেনারকে বলেন, “আমরা প্রার্থী দিতে পারিনি আমাদের নেতৃত্বের দূর্বলতার কারণে।  বর্তমানে যাঁরা নেতৃত্বে আছেন তাঁরা কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না।।”

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির দপ্তর সম্পাদক মো. ইব্রাহিম মিয়া বুধবার বেনারকে বলেন, “আমাদেরকে আপনারা কিংস পার্টি বলছেন।  কিংস পার্টি বলে কোন পার্টি আমরা করি না। সরকারের সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ নাই। আমরা মাইজভান্ডার দরবার শরীফের লোক।  বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় আমাদের লোক আছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের দল নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পেয়েছে মাত্র তিনমাস আগে। নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই।  অনেকে ঠিক মতো কাগজ জমা দিতে পারেনি।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বুধবার বেনারকে বলেন, “২০০৭-০৮ সালেও সরকারি মদদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা চলে। তবে সেটি সফল হয়নি। এবারও কিংস পার্টি দিয়ে বিএনপি ভাঙ্গার চেষ্টা চালানো হয়েছে। লাভ হয়নি।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী দল হিসাবে বিএনপির মধ্যে এমন ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে যা ভাঙ্গা খুবই কঠিন।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।