সংসদ শুরুর দিনেই বিরোধীদের কালো পতাকা মিছিলে পুলিশের বাধা

অয়ন আমান
2024.01.30
ঢাকা
সংসদ শুরুর দিনেই বিরোধীদের কালো পতাকা মিছিলে পুলিশের বাধা
[সনি রামানী/বেনারনিউজ]

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের শুরুর দিনেই বিএনপিসহ বিরোধী দলের কালো পতাকা মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। বিএনপি জানিয়েছে, এদিন সারা দেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করার কথা ছিলো বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর।

এদিকে উত্তরা এলাকায় বিএনপির উদ্যোগে কালো পতাকা মিছিল শুরুর আগেই পুলিশ দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানকে আটক করে। পরে তাঁকে ছেড়েও দেয়া হয়।

এর আগে মঈন খান বলেন, “যতক্ষণ না আমাদের আদর্শ পালিত হচ্ছে এবং এই উদ্দেশ্য সাধন হচ্ছে, আমরা রাজপথে আছি, আমরা রাজপথে থাকব। ”

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, “বিএনপির পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা মিছিলে হামলা, নিপীড়ন ও নির্যাতন চালিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।  এতে আহত হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী।  গ্রেপ্তার হওয়া অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীর মুক্তি দাবি করছি। ”

রিজভী আরও বলেন, “কোনো উসকানি ছাড়াই পুলিশ মঈন খানের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে এবং ধাক্কা দিয়ে জিপে উঠিয়ে নিয়ে যায়। ''

''পরে তাঁকে ছেড়ে দিলেও তাঁর সঙ্গে আটক অন্য নেতা-কর্মীদের এখনো ছেড়ে দেয়নি,” বলেন তিনি।

কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান।

তিনি বেনারকে বলেন, “আমার সামনে দিয়ে ১৭ জনকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

মতিঝিলের পীরজঙ্গি মাজার মোড়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে পুলিশি বাধার অভিযোগ তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “মিছিল-মিটিং, শোভাযাত্রা গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার।  আমরা নিয়ম মেনে পুলিশ কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছি, অবহিত করেছি, সাতটি স্থানে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কালো পতাকা মিছিল করব।  কিন্তু পুলিশ আমাদের সবখানে বাধা দিয়েছে।”

বাধার মুখে শরিকরাও

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে এদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর তোপখানা রোড এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীরা।

এর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “এই সরকারের সঙ্গে কোনো ভালো মানুষ নেই। যে প্রতিবাদের মিছিলগুলো শুরু হয়েছে, এই মিছিল একদিন জনবিস্ফোরণে পরিণত হবে।  সরকার যতই বড়াই করুক, পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।”

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. ফারুক হোসেন বেনারকে বলেন, “কোথাও কাউকে বাধা দেওয়া বা আটক করা হয়নি এবং কোনো মামলাও হয়নি। যেসব স্থানে তাঁদের কর্মসূচি ছিল, সেসব স্থানে তাঁরা কর্মসূচি করেছেন।”

ঢাকার বাইরে পুলিশের বাধা

পুলিশের কারণে বরিশাল নগরীর বেশ কিছু এলাকায় কালো পতাকা মিছিল করা যায়নি বলে সাংবাদিকদের জানান মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক।

পটুয়াখালীতে বিএনপি কালো পতাকা মিছিল বের করলে পুলিশের লাঠিচার্জে দলটির অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দ্য ডেইলি স্টারের খবরে বলা হয়েছে। 

ঝিনাইদহে পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়েছে বিএনপির কালো পতাকা মিছিল। 

মানিকগঞ্জে বিএনপি মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। 

নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি মহানগর শাখার নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করলে পুলিশ ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেয়।

জিএম কাদেরের সংশয়

সংসদের প্রথম অধিবেশনেই জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা জিএম কাদের বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ কখনো নিখুঁতভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে না, এমন আশঙ্কা অবাস্তব নয়।   এই সংসদ জাতিকে কতটুকু প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে।

“এ সংসদে সম্পূর্ণ জাতিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। বর্তমান সংসদ জাতিকে কতটুকু প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হবে, তা আশঙ্কার বিষয়।  ভালোভাবে বললে বলতে হবে বিতর্কের বিষয়। দুই অংশের কর্মকাণ্ডের ব্যবধান কমাতে পারলে; অর্থাৎ সরকার ও বিরোধীদের সংসদ কর্মকাণ্ডের ব্যবধান যতটা কমবে, সংসদ ততটুকু কার্যকর হিসেবে গণ্য হবে,” বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনে ঘোষিত ২৯৮ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে ২২২টি আসনে, জাতীয় পার্টি (জাপা) ১১ আসনে এবং জাসদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি একটি করে আসনে জয়ী হয়েছে।

আর ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “তারা (স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য) আওয়ামী লীগই থাকতে চায়।  তবে তারা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারবে।  এই একটা বিষয় আমাদের সংসদ নেতা, দলের সভাপতি পরিষ্কারভাবে বলেছেন।”

রাষ্ট্রপতির ভাষণ: সতর্ক থাকার আহ্বান

সংবিধান অনুযায়ী সংসদের প্রথম অধিবেশনের ভাষণে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “ভবিষ্যতে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে।  এ জন্য আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।  ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে সেদিকে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমাল ও জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

“নির্বাচনকে ঘিরে একটি মহল সহিংসতা ও সংঘাত সৃষ্টি করে গণতন্ত্রের শান্ত-স্নিগ্ধ যাত্রাপথে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়েছিল।  তাদের গণতন্ত্রবিরোধী ও সহিংস কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে জনগণকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রাখলেও গণতন্ত্রের শাণিত চেতনা ভোটারদের ভোটদান থেকে বিরত রাখতে পারেনি,” বলেন তিনি।

সাহাবুদ্দিন বলেন, “ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সহিংসতা ও নৈরাজ্যের পথ পরিহার করে সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে অহিংস পন্থায় গঠনমূলক কর্মসূচি পালন করবে।  সরকারও এ ক্ষেত্রে সংযত আচরণ করবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।”

ভাষণের আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নতুন স্পিকার হিসেবে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে শপথ পাঠ করান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।