করোনাভাইরাস: এ মাসেই শুরু হবে রোহিঙ্গাদের টিকাদান কর্মসূচি

সুনীল বড়ুয়া ও জেসমিন পাপড়ি
2021.03.19
কক্সবাজার ও ঢাকা
করোনাভাইরাস: এ মাসেই শুরু হবে রোহিঙ্গাদের টিকাদান কর্মসূচি কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ঘরে ফিরছেন রোহিঙ্গারা। ১৫ অক্টোবর ২০২০।
[এএফপি]

চলতি মাসেই সোয়া লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য করোনাভাইরাস টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এদিকে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি বাংলাদেশির টিকাদান নিশ্চিত করতে ৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা ঘোষণা করেছে বিশ্ব ব্যাংক।

“চলতি মাসের শেষে অথবা এপ্রিলের শুরুতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কোভিড-১৯ টিকাদান শুরু করা সম্ভব হবে। তার আগে ২৭ মার্চ টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণ শেষ হবে,” শুক্রবার বেনারকে জানান কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের (আরআরআরসি) স্বাস্থ্য সমন্বয়ক ডা. আবু তোহা। 

আরআরআরসি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বসবাসরত নিবন্ধিত প্রায় সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ৪০ বছরের বেশি বয়স ১ লাখ ২৭ হাজার রোহিঙ্গার। প্রথম ধাপে তাঁদেরকে টিকা দেওয়া হবে বলে বেনারকে জানান ডা. আবু তোহা। 

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর প্রায় সাড়ে আট লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। নতুন ও পুরনো মিলে বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাস করছেন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। 

এদের মধ্যে থেকে প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গাকে সম্প্রতি নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। 

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের (১) চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মো. রফিক বেনারকে বলেন, “এর আগে আমাদের হাম-রুবেলা, পোলিওসহ বিভিন্ন রোগের টিকা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি করোনার টিকাও আমাদের দেওয়া হবে।” 

তবে “আমাদের অবস্থান নো মেনস ল্যান্ডে হওয়াতে আমরা অনেক সুযোগ-সুবিধা দেরিতে পাই,” বলে বেনারকে জানান বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম কোনার পাড়ার শূন্যরেখায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নেতা (মাঝি) দিল মোহাম্মদ। 

তিনি বলেন,“করোনা সংক্রমণ যেহেতু আবারও বাড়ছে, আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের এ টিকা দেওয়া হোক।” 

এ পর্যন্ত মোট ৪৩৫ জন রোহিঙ্গা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে বেনারকে জানান ডা. আবু তোহা। এখন পর্যন্ত এই রোগে ১০ জন শরণার্থী মারা গেছেন বলে জানান তিনি। 

“রোহিঙ্গা শিবিরে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। যে কারণে শিবিরগুলো এতটা ঘন বসতি হওয়া সত্ত্বেও সেখানে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হয়েছে,” বেনারকে বলেন কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান। 

কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সৌনম বড়ুয়া বেনারকে বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলার ৬৯ হাজার ৫২৯ জনকে করোনার টিকা দেয়া হয়েছে। 

“স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ শেষ হলেই” সরকারি উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের টিকা দেওয়া শুরু হবে বলে জানান সিভিল সার্জন।  

বিশ্বব্যাংকের ঋণে সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের টিকা

করোনাভাইরাসের টিকাদান সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় বিশ্ব ব্যাংক।

এই অর্থায়ন করবে বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ)। ঋণ শোধ করতে ৩০ বছর সময় পাবে বাংলাদেশ।

এই ঋণের আওতায় দেশের ৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য অগ্রাধিকার পাবে জানিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এই অর্থায়ন প্রথম পর্যায়ে দেশের ৪০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের প্রাথমিক অগ্রাধিকার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।”

টিকা কেনাসহ টিকাদান কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ এবং টিকা সংরক্ষণের মান বাড়াতে এই তহবিল ব্যবহার হবে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। 

বিশ্বব্যাংকের এই সহায়তাকে স্বাগত জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য অনুবিভাগ) কাজী জেবুন্নেছা বেগম বেনারকে বলেন, “কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমাদের অনেক ধরনের সহায়তা দরকার।”

“দেশের অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার” লক্ষ্য নিয়ে সরকার এই খাতকে বর্তমানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বহির্বিশ্ব থেকে পাওয়া সব ধরনের সহায়তাই গ্রহণ করছে বাংলাদেশ। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার ৮৩৮ জন, মৃত্যু হয়েছে আট হাজার ৬৪২ জনের।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ কোটি ২০ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ২৬ লাখ ৯৫ হাজারের বেশি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।