সরকারের অনুমোদন: দেশেই তৈরি হবে চীন-রাশিয়ার করোনা টিকা
2021.04.28
ঢাকা
ভারত থেকে টিকা প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা মোকাবেলায় চীন ও রাশিয়ার দুটি করোনাভাইরাস টিকা বাংলাদেশে উৎপাদনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
বুধবার অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে বেনারকে জানান ওই বৈঠকের সভাপতি অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম. মুস্তাফা কামাল।
“ভারত থেকে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে,” জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “বিকল্প হিসাবে চীন ও রাশিয়ার টিকা বাংলাদেশে উৎপাদন সংক্রান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব আমরা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছি।”
“তবে তার অর্থ এই নয় যে, আমাদের প্রথম সোর্স অর্থাৎ ভারত থেকে টিকা আনার বিষয়টি বন্ধ করে দিচ্ছি,” যোগ করেন তিনি।
দেশের বেশ কয়েকটি ওষুধ প্রতিষ্ঠানের “ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে” বলে জানালেও কোন্ কোন কোম্পানি টিকাগুলো উৎপাদন করবে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
“আমি মনে করি এই টিকা উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা সরকারি তত্ত্বাবধানে হতে হবে। কারণ আমরা প্রথম পর্যায়ে যে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করি, সেখানে কোনো মানুষের কোনো অভিযোগ ছিল না,” বলেন অর্থমন্ত্রী।
দেশে উৎপাদনের জন্য বুধবার অনুমোদন দেওয়া টিকা দুটি হচ্ছে চীনের সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুটনিক টিকা।
কবে নাগাদ টিকা দুটির উৎপাদন শুরু হতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বুধবার বেনারকে বলেন, “প্রথমে আমরা তাদের কাছ থেকে টিকা কিনে আমাদের দেশে কর্মসূচি পরিচালনা করব।”
“এরপর তাদের সাথে আলোচনা করে কীভাবে টিকা প্রস্তুত করা যায় এবং কোন কোন কোম্পানির সক্ষমতা আছে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন করা হবে। এর জন্য কিছু দিন তো সময় লাগবে,” বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান এর আগে বেনারকে জানান, চীনের সিনোফার্মের টিকা এপ্রিলের শেষের দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাবে বলে বাংলাদেশকে অবহিত করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হন গত বছর ৮ মার্চ। ১৮ মার্চ এই রোগে প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়।
গত বছর বাংলাদেশে করোনাভাইরাস টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল করতে প্রস্তাব দেয় চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানি ও ভারতের ভারত বায়োটেক। তবে শেষ পর্যন্ত সেই ট্রায়ালগুলো হয়নি।
পরে যুক্তরাজ্য-সুইডেনের যৌথ উদ্যোগে উদ্ভাবিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার করোনাভাইরাস টিকার জন্য ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের সাথে চুক্তি করে সরকার ও সরবরাহকারী বেসরকারি কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা।
চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা দেয়ার কথা সেরাম ইন্সটিটিউটের।
জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি দুদফায় ৭০ লাখ টিকা সরবরাহ করে সেরাম। এর বাইরে তিন দফায় আরো ৩৩ লাখ টিকা বাংলাদেশকে উপহার দেয় ভারত সরকার।
এই মজুত দিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশে শুরু হয় করোনাভাইরাসের গণটিকা কর্মসূচি। এখন পর্যন্ত ৫৮ লাখের বেশি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন।
প্রত্যেকের জন্য দুটি করে ডোজ হিসাবে মোট এক কোটি ১৬ লাখ টিকা প্রয়োজন, যা থেকে বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ টিকা কম রয়েছে সরকারের হাতে।
মার্চ ও এপ্রিলে কোনো টিকা পাঠায়নি সেরাম ইন্সটিটিউট। বুধবার এক বিবৃতিতে সরবরাহকারী বেক্সিমকো ফার্মা জানিয়েছে সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে টিকা পেতে কিছুটা বিলম্ব হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সাত লাখ, ৫৪ হাজার ৬১৪ জন, মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ৩০৫ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ কোটি ৯০ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ৩১ লাখ ৪১ হাজারের বেশি।
করোনা আক্রান্ত খালেদা জিয়া হাসপাতালে
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ১০ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাঁর গুলশানের বাসার আরো নয়জন সহকারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।
তবে খালেদা জিয়া অথবা বাসার সহকারীদের সবার শারীরিক অবস্থা ভালো।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মঙ্গলবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে বুধবার বেনারকে জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “ম্যাডামের কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তিনি ভালো আছেন। ডাক্তাররা তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্টগুলো পরীক্ষা করে দেখবেন তিনি বাসায় ফিরে আসবেন, না কি সেখানেই থাকবেন।”
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির অভিযোগে কারারুদ্ধ হন বেগম খালেদা জিয়া। দুর্নীতির দুটি মামলায় তাঁর ১৭ বছর কারাদণ্ড হয়, যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মামলাগুলো রাজনৈতিক।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে পারিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাঁর কারাদণ্ড স্থগিত করে সরকার।
তবে শর্ত অনুযায়ী, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না, রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারবেন না। তারপর থেকে তিনি গুলশানের ফিরোজা নামের একটি বাসায় মোটামুটি একাই বসবাস করছেন।
প্রবৃদ্ধি একভাগ কমতে পারে: এডিবি
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গত বছর ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে আসে।
করোনা পরিস্থিতি উন্নতির সাথে সাথে দেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেতে থাকে। চলতি মার্চ থেকে আবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ৫ মার্চ থেকে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।
তবে অর্থনীতি চালু রাখতে তৈরি পোশাক খাতসহ দেশের বিভিন্ন খাতের জন্য নামমাত্র সুদে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার।
চলমান লকডাউনের মধ্যেই বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে কিছুটা ইতিবাচক পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
বুধবার প্রতিষ্ঠানটির এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২১ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এডিবির বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন পারকাশ বলেন, রেমিটেন্স প্রবাহ, প্রণোদনা প্যাকেজ ও বিশ্ব বাণিজ্যের স্বাভাবিকতার ওপর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে।
তিনি বলেন, রেমিটেন্স, রপ্তানি ও অন্যান্য নির্দেশকের উচ্চহারের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায়। বর্তমান অর্থ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক আট হবে বলে এর আগে পূর্বাভাস দিয়েছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।
“তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে ওই প্রবৃদ্ধি শতকরা একভাগ কমতে পারে,” বলেন মনমোহন।
তিনি বলেন, বর্তমান অর্থ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে সর্বোচ্চ ছয় ভাগ।