চীন থেকে করোনাভাইরাস টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন
2021.05.19
ঢাকা
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা সংকট মোকাবেলায় বুধবার চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের তৈরি এক কোটি ডোজ টিকা কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
তবে চীনের সাথে এ বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষার চুক্তি থাকায় টিকাগুলোর মূল্য জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বুধবার অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম. মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় টিকা কেনার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার।
কত ডোজ টিকার জন্য এই অনুমোদন, কবে নাগাদ টিকাগুলো আসবে অথবা টিকাগুলোর মূল্য কত পড়বে সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
তবে চীন থেকে টিকা কেনা বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রস্তাবের ওপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামতের একটি কপি বেনারের হাতে এসেছে।
গত ১৬ মে তারিখে লেখা ওই মতামতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে সিনোফার্মের এক কোটি ডোজ টিকা কেনা যেতে পারে, যার পরিমাণ ভবিষ্যতে বাড়ানো যাবে।
বেসরকারি পর্যায়ের পরিবর্তে সরকারি পর্যায়ে ক্রয় চুক্তি হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে মতামত দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, টিকাগুলোর মূল্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগরে সচিবের নেতৃত্বে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি চূড়ান্ত করবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী টিকাগুলো মোট তিন কিস্তিতে আনা যেতে পারে জানিয়ে অর্থমন্ত্রণালয় বলেছে টিকা বহনের খরচ ও শুল্ক বাংলাদেশ সরকার বহন করবে।
চলতি মাসের “শেষের দিকে” টিকাগুলো কেনার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বুধবার বেনারকে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তবে প্রতি ডোজ টিকার দাম কত হবে এ ব্যাপারে কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সেটা বলা যাবে না। কারণ আমরা চীনের সাথে একটি নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করেছি।”
এদিকে চীন থেকে উপহার হিসেবে মে মাসের ১২ তারিখে আসা পাঁচ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা চলতি মাসের ২৫ তারিখ থেকে দেয়া শুরু হবে বলে জানান তিনি।
ওই টিকাগুলো মেডিকেল শিক্ষার্থী, নার্সিং শিক্ষার্থী এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের দেওয়া হবে বলে এর আগে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মার মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে কেনা যুক্তরাজ্য-সুইডেন উদ্ভাবিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার মাধ্যমে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে শুরু হয় গণটিকাদান কর্মসূচি।
গত বছর ডিসেম্বরে সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে মোট তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭০ লাখ টিকা সরবরাহের পর আর কোনো চালান পাঠায়নি সেরাম।
এর বাইরে ভারত থেকে উপহার হিসেবে বাংলাদেশ পেয়েছে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা।
টিকার সরবরাহ না থাকায় নতুনদের টিকাদান বন্ধ করে শুধু প্রথম ডোজ নেয়া লোকজনকে বর্তমানে টিকাটির দ্বিতীয় ডোজ দিচ্ছে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে টিকার কোর্স শেষ করেছেন ৩৮ লাখ ২০ হাজারের কিছু বেশি মানুষ। অন্যদিকে প্রথম ডোজ নিয়েছেন প্রায় ৫৮ লাখ ২০ হাজার।
ফলে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টিকার নতুন চালান না আসলে ১৩ লাখের বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
এই পরিস্থিতিতে, এপ্রিলের শেষ দিকে রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি এবং চীনের সিনোফার্মের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় সরকার। গত ৭ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) সিনোফার্মের টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
তবে প্রথম ডোজ হিসেবে যারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টিকা নিয়েছেন তাঁদেরকে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া যাবে কি না সে বিষয়ে নির্দিষ্ট গবেষণা না থাকায় চীনের টিকাগুলো শুধু নতুন গ্রহীতাদেরকেই দেয়া হবে বলে এর আগে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
“যারা সিনোফার্মের টিকা নেবেন তারা শুধু সিনোফার্মের টিকাই নেবেন,” বুধবার বেনারকে বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
১৩ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজের অনিশ্চয়তা কাটেনি
ভারত থেকে টিকার চালান না আসার কারণেই “চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা কেনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে” বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জুনের প্রথম সপ্তাহে জাতিসংঘের কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় এক লাখ ছয় হাজার ডোজ ফাইজার টিকা বাংলাদেশে আসবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া “অন্তত আমাদের দ্বিতীয় ডোজের জন্য প্রয়োজনীয় টিকা” দিতে সেরামকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এদিকে যারা প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন তাঁদের সবার দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করতে মঙ্গলবার ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করকে টেলিফোন করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে. আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যবহৃত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টিকা বাংলাদেশ যাতে পায় সে ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করতে জয়শঙ্করকে অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের মজুতে থাকা বাড়তি ছয় কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা অন্য দেশগুলোর ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেয়া হবে বলে সম্প্রতি ঘোষণা দেয় দেশটি। এর মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টিকাও রয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে মে মাসের শুরুতে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারের সঙ্গে এক বৈঠকে ওই টিকাগুলো থেকে জরুরি ভিত্তিতে এক থেকে দুই কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশকে দেবার অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় “বাংলাদেশে লকডাউন কার্যকর হচ্ছে না” মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “টিকার কোনো বিকল্প নেই।”
“তাই, যত দ্রুত সম্ভব টিকা সংগ্রহ করে মানুষকে টিকা দিতে হবে। সরকার যেখান থেকে হোক টিকা সংগ্রহ করুক,” বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সাত লাখ, ৮৩ হাজার ৭৩৭ জন, মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ২৪৮ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ কোটি ৪৪ লাখ ২৩ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ৩৪ লাখ আট হাজারের বেশি।