করোনার টিকা: সেরামের দ্বিগুণ দাম নিচ্ছে চীনের সিনোফার্ম

জেসমিন পাপড়ি
2021.05.27
করোনার টিকা: সেরামের দ্বিগুণ দাম নিচ্ছে চীনের সিনোফার্ম ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নিচ্ছেন এক ব্যক্তি। ১২ এপ্রিল ২০২১।
[বেনারনিউজ]

করোনাভাইরাসের টিকা সংকট মোকাবেলায় এবার ভারত থেকে কেনা টিকার দ্বিগুণ দামে চীন থেকে টিকা নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

ফেব্রুয়ারির পর ভারত থেকে কোনো টিকা আসেনি। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার চীনের সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

“প্রতি ডোজের দাম ১০ ডলার করে দেড় কোটি ডোজ টিকার মোট দাম পড়বে ১৫ কোটি ডলার,” সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আক্তার।

চীন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সরাসরি চুক্তির আওতায় জুন থেকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে আগামী তিন মাসে এই টিকাগুলো আসবে বলে জানান তিনি।

এর আগে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মার মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার মূল্য কমিশনসহ ছিল প্রতি ডোজ পাঁচ ডলার।

একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি বায়োএনটেকের তৈরি করোনা টিকা দেশে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসের মোট চারটি টিকা অনুমোদন দেওয়া হলো। 

চাহিদার মুখে বেশি দামি হলেও টিকা কেনাকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সারা বিশ্বেই চাহিদার তুলনায় করোনাভাইরাস টিকার উৎপাদন অনেক কম বলে জানান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন।

তিনি বলেন, অনেক দেশ আগাম টিকা কিনেও সরবরাহ পাচ্ছে না, এমন অবস্থায় “জনগণকে টিকা দেওয়া প্রথম অগ্রাধিকার” বিবেচনা করে সরকার দ্রুততম সময়ে যেখান থেকে পাচ্ছে টিকা নিয়ে আসছে, যা ইতিবাচক।

“যত দ্রুত আমরা অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পারব তত দ্রুত করোনায় মৃতের সংখ্যা কমে আসবে,” বলেন বলেন ড. মুশতাক। 

চীনের টিকা দেওয়া শুরু

চীন থেকে উপহার হিসেবে মে মাসের ১২ তারিখে বাংলাদেশে আসে পাঁচ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা। বাংলাদেশকে আরো ৬ লাখ ডোজ উপহার দেবার ঘোষণাও দিয়েছে দেশটি।

গত মঙ্গলবার ৫০১ জন মেডিক্যাল শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে সিনোফার্মের এই টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের কারও মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।

দশ দিন পর্যন্ত তাঁদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জুন-জুলাই নাগাদ সিনোফার্মের প্রথম ডোজের টিকাদান কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।

এর আগে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক বাংলাদেশে তাঁদের টিকার পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছিল, যা পরবর্তীতে হয়নি।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের কোনো টিকারই পরীক্ষা হয়নি। 

ফাইজারের টিকা অনুমোদন

ডিসেম্বরে বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টিকা এবং এপ্রিলের শেষ দিকে রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি এবং চীনের সিনোফার্মের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।

চতুর্থ টিকা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি বায়োএনটেকের তৈরি টিকা বৃহস্পতিবার অনুমোদন দেয়া হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে আগামী রোববার এই টিকার প্রায় এক লাখ ডোজ দেশে আসছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তাঁরা জানান, অনুমোদন দেয়া অন্য তিনটির মতো এই টিকাও দুই ডোজ করে নিতে হবে। প্রথম ডোজ দেওয়ার ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে।

এই টিকা ১২ বছর বা তার বেশি বয়সীদের দেওয়া যাবে। 

টিকার মজুদ শেষ পর্যায়ে

বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মার মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে কেনা যুক্তরাজ্য-সুইডেন উদ্ভাবিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকার মাধ্যমে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশে শুরু হয় গণটিকাদান কর্মসূচি। 

গত বছর ডিসেম্বরে সেরাম থেকে মোট তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করে বাংলাদেশ। জুনের মধ্যে সবগুলো টিকা সরবরাহের কথা থাকলেও ভারতে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭০ লাখ টিকা পাঠানোর পর আর কোনো চালান পাঠায়নি সেরাম।

এর বাইরে ভারত থেকে উপহার হিসেবে বাংলাদেশ পেয়েছে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা।

সরবরাহ না থাকায় নতুনদের টিকাদান বন্ধ করে শুধু প্রথম ডোজ নেয়া লোকজনকে বর্তমানে টিকাটির দ্বিতীয় ডোজ দিচ্ছে সরকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে টিকার কোর্স শেষ করেছেন ৪০ লাখ ৮৪ হাজারের কিছু বেশি মানুষ। অন্যদিকে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজারের বেশি।

বাংলাদেশের হাতে পাওয়া অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার মোট এক কোটি ৩ লাখ টিকার মধ্যে সব মিলে টিকা দেয়া হয়েছে ৯৯ লাখের বেশি। ফলে এই টিকার নতুন চালান না আসলে ১৩ লাখের বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

তবে সবাইকে অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়ে গত ২৫ মে নিয়মিত বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, “প্রথম ডোজের ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।”

তিনি বলেন, “সরকার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে চেষ্টা করছে এই টিকা সংগ্রহ করতে। আমরা আশাবাদী, এই টিকা সংগ্রহ হবে এবং দ্বিতীয় ডোজ সবাই পেয়ে যাবেন।”

প্রথম ডোজ দেয়া সবার দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করার জন্য ভারতের সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের কাছে অন্তত ২০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার টেকা দেবার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। ওইসব দেশে এই টিকার কিছু বাড়তি মজুত রয়েছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সাত লাখ, ৯৪ হাজার ৯৮৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৪৮০ জনের। 

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ কোটি ৮৫ লাখ ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ, মারা গেছেন ৩৫ লাখের বেশি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।