করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ রেকর্ড: আক্রান্ত ১৫ হাজারের বেশি, মারা গেছেন প্রায় আড়াইশ’

কামরান রেজা চৌধুরী
2021.07.26
ঢাকা
করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ রেকর্ড: আক্রান্ত ১৫ হাজারের বেশি, মারা গেছেন প্রায় আড়াইশ’ করোনায় আক্রান্ত এক রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন স্বজনরা। ২৪ জুলাই ২০২১।
[বেনারনিউজ]

ঈদের আগে লকডাউন শিথিল করে গণপরিবহন চালু এবং পশুর হাট বসালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা যে আশঙ্কা করেছিলেন তা-ই সত্য হতে চলেছে।

কোরবানি ঈদের পাঁচ দিনের মাথায় সোমবার করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ সংক্রমণ এবং সর্বোচ্চ মৃত্যুর কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৫ হাজার ১৯২ জন নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, একই সময়ে এই রোগে ২৪৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত বছর ৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ঘোষণার পর থেকে সোমবার একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ লাখ, ৭৯ হাজার ৭৫৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৯ হাজার ৫২১ জনের। 

টিকা জোরদার করা হচ্ছে

করোনা মহামারি ঠেকাতে চীন, ভারত ও রাশিয়ার পর এবার মার্কিন টিকা কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

ইতিমধ্যেই আমেরিকার জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির এক ডোজের সাত কোটি টিকার ক্রয়াদেশ দেয়া হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি জানান, সরবরাহ নিশ্চিত হলে এই টিকা দিয়ে সাত কোটি মানুষকে টিকা দেয়া সম্ভব হবে, যা সরকারের টিকা লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৫০ ভাগ।

এই টিকার চালান আগামী বছর মার্চ থেকে জুনের মধ্যে আসা শুরু হবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জ্যৈষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস.এম. আলমগীর। 

তবে প্রতিটি টিকা কত দামে কেনা হবে তা মন্ত্রী ও ড. আলমগীর জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

“আমাদের লক্ষ‍্য হলো, ১৪ কোটি মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া। অন্যথায় এই মহামারি আমাদের দেশ থেকে যাবে না। ১৪ কোটি মানুষকে টিকা দিতে আমরা ২১ কোটি ৩০ লাখ টিকা সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছি,” বেনারকে বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

জাতিসংঘের কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় ৬ কোটি ৮০ লাখ টিকা পাওয়া যাবে, যা দিয়ে তিন কোটি ৪০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া যাবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “চীন ও ভারত থেকে তিন কোটি করে ছয় কোটি এবং রাশিয়া থেকে এক কোটি টিকার আদেশ দিয়েছি।”

এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানি থেকে সাত কোটি টিকা কেনার আদেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এগুলো এক ডোজের টিকা। এগুলো দিয়ে সাত কোটি মানুষকে টিকা দেয়া যাবে।”

“এ ছাড়াও অন্যান্য সোর্স থেকে আমরা টিকা সংগ্রহ করছি। আমাদের লক্ষ্য হলো, আগস্ট থেকে প্রতি মাসে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়া,” বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। 

চীন-ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে

দুই ডোজের টিকার চেয়ে জনসনের এক ডোজের টিকা বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

“এর মাধ্যমে টিকার জন্য ভারত ও চীনের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমে আসবে,” বেনারকে বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম।

“সাত কোটি ডোজ দিয়ে আমরা সাত কোটি মানুষকে টিকা দিতে পারব,” জানিয়ে তিনি বলেন, “ভারত তিন কোটি টিকা দেবার চুক্তি করেও টিকা সরবরাহ করল না। ফলে আমাদের ১৫ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। জনসনের টিকায় সেই অবস্থায় পড়তে হবে না।”

“তবে, আমাদের উচিত এই টিকাগুলো আমাদের জনগোষ্ঠীকে কতটুকু সুরক্ষা দিচ্ছে, সেটি পরীক্ষা করে দেখা,” বলেন অধ্যাপক নজরুল।

“বর্তমানে গ্রামগঞ্জে ঘরে ঘরে জ্বর, শ্বাসকষ্ট। কেউ করোনা পরীক্ষা করছে না। অনেকেই মারা যাচ্ছে বিনা চিকিৎসায়,” জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সাবেক পাবলিক অ্যানালিস্ট ড. আবু মো. বকর সিদ্দিক বেনারকে বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে টিকার কোনো বিকল্প নেই।” 

প্রতিমাসে এক কোটি টিকা!

আগস্টের মাঝামাঝি থেকে প্রতি মাসে এক কোটি টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। 

টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে সুরক্ষা অ্যাপ ছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখালেই টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগস্টের মাঝামাঝি কোভ্যাক্সের আওতায় প্রায় তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা আসার কথা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, সোমবার পর্যন্ত ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ৩৭২ জন মানুষ প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন, ৪৩ লাখ পাঁচ হাজার ৯৬৫ জন। 

ভারত থেকে কেনা এবং উপহার হিসাবে পাওয়া অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্র্যাজেনেকার কোভিশিল্ড দিয়ে ২৭ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে টিকা কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশ। তবে মার্চ মাস থেকে ভারত টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দিলে টিকা প্রদান বন্ধ হয়ে যায়।

পরে চীনা সিনোফার্মের টিকা দিয়ে পুনরায় টিকা কার্যক্রম শুরু কর করা হয়। চীন উপহার হিসাবে ১১ লাখ এবং কেনা ২০ লাখ টিকা সরবরাহ করেছে।

ক্রমান্বয়ে কোভ্যাক্সের আওতায় মার্কিন কোম্পানির ফাইজারের এক লাখ, মডার্নার ২৫ লাখ এবং জাপান থেকে প্রায় আড়াই লাখ টিকা বাংলাদেশে এসেছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।