ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে খুলে দেয়া হলো সকল কারখানা

কামরান রেজা চৌধুরী
2021.07.30
ঢাকা
ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে খুলে দেয়া হলো সকল কারখানা ঢাকার অদূরে সাভারের এক গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করছেন একজন নারী শ্রমিক। ২২ নভেম্বর ২০১৯।
[সাবরিনা ইয়াসমীন/বেনারনিউজ]

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তৈরি পোশাক কারখানাসহ দেশের সকল শিল্প ও কলকারখানা খুলে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। 

চলমান লকডাউনের মধ্যে পহেলা আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী সকল শিল্প ও কারখানা খোলার ব্যাপারে শুক্রবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। 

কলকারখানা খুলে দেবার দাবিতে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সাথে দেখা করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 

তাঁদের দাবির ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করে এব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবেন। সেই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার কলকারখানা খোলার এই ঘোষণা দেয়া হলো। 

এর আগে গত ২৭ জুলাই সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে চলমান লকডাউনের আওতার বাইরে কলকারখানা রাখার অনুরোধ নাকচ করে দেয়া হয়। 

ব্যবসায়ীরা কারখানা খুলে দেবার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান লকডাউন আরো ১০ দিন বাড়ানোর পক্ষে অধিদপ্তর। 

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বেনারকে বলেন, “আমাদের কারখানা চালাতে কোনো অসুবিধা হবে না। কারণ আমাদের অধিকাংশ কর্মী ঢাকায় আছেন। তাছাড়া, আমাদের কারখানায় পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়। আমরা মাস্ক ছাড়া কাউকে কারখানায় কাজ করার অনুমতি দিই না।” 

ইতোমধ্যে কারখানাগুলোতে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকার আমাদের টিকা সরবরাহ করলে আমাদের কর্মীদের খুব সহজেই টিকা দিতে পারব।” 

“কলকারখানার কর্মীরা সকল স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রস্তুত। তাঁরা চান কারখানা রক্ষা করতে। চাকুরি বাঁচাতে। আমার মনে হয় সকল কলকারখানায় বেশ ভালোভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়,” বেনারকে বলেন রপ্তানিমুখী জুতা তৈরির প্রতিষ্ঠান ফ্রেমহাউসের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন রিপন। 

তিনি বলেন, “কারখানা খুলে দেয়া না হলে দেশের অর্থনীতি মারাত্মক সমস্যায় পড়ত। আমাদের মতো অনেকের ক্রয়াদেশ বাতিল হতো। আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।” 

লকডাউন বাড়ানোর পক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

এদিকে চলমান লকডাউন আরো ১০ দিন বাড়ানোর পক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পহেলা জুলাই থেকে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। মাঝখানে কোরবানি ঈদের সময় আটদিনের জন্য লকডাউন শিথিল করে ২৩ জুলাই আবার দুই সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়, যা শেষ হবে ৫ আগস্ট।

তবে লকডাউন চালু থাকলেও সংক্রমণের হার কমছে না। গত সপ্তাহ জুড়ে করোনাভাইরাসের আনুষ্ঠানিক সংক্রমণ হার পরীক্ষা করা নমুনার শতকরা ৩০ ভাগের বেশি।

শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২১২ জন নতুন করে প্রাণ হারিয়েছেন। শনাক্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৮৬২ জন।

এপর্যন্ত বাংলাদেশে ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪১৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এই ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ২০ হাজার ৪৬৭ জনের।

শুক্রবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ সাংবাদিকদের জানান, “যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, আমরা কীভাবে এই সংক্রমণ সামাল দেবো? রোগীদের জায়গা দেবো কোথায়?” 

তিনি বলেন, সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে সেই ধারা অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। অবস্থা খুবই খারাপ হতে পারে।

এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে আরো ১০ দিনের জন্য বিধিনিষেধ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। 

তবে লকডাউনের সময় বাড়ানো কোনো সমাধান নয় বলে বেনারকে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি সরকারের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির একজন সদস্য। 

তিনি শুক্রবার বেনারকে বলেন, “সত্যি কথা হলো, মানুষ লকডাউন মানছে না। মানবে না। কারণ তাদের পেটে ক্ষুধা। লকডাউন কোনো সমাধান নয়। এই সংক্রমণ কমাতে হলে টিকা দিতে হবে এবং মাস্ক পরিধান করতে হবে এবং সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।” 

অধ্যাপক নজরুল বলেন, “আমি মনে করি কলকারখানা খুলে দেয়া একটি ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ গরিব মানুষদের দিকটিও দেখতে হবে। কারখানাগুলো যদি স্বাস্থ্যবিধি মানানোর পাশাপাশি তাদের কর্মীদের টিকা দেয়া চালিয়ে যেতে পারে তাহলে কারখানা খুলে দিতে আমি কোনো সমস্যা দেখি না।” 

তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচিত হাসপাতালে যাতে মানুষ চিকিৎসা পায়, অক্সিজেন পায় সেদিকে নজর দেয়া। শুধু লকডাউনের দিকে তাদের বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। লকডাউনের সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নয়।”

“সরকার লকডাউন বলবত করতে যে সময়, শ্রম ও সম্পদ ব্যয় করেছে সেগুলো যদি জনগণকে মাস্ক পরিধান করতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বিনিয়োগ করতো তাহলে আমাদের সংক্রমণ অনেকাংশে কমে যেত,” বলেন অধ্যাপক নজরুল।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।