নভেম্বর থেকে স্কুল শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদান শুরু
2021.10.28
ঢাকা
নভেম্বর মাসের শুরু থেকে দেশে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু করবে বাংলাদেশ। দুসপ্তা আগে মানিকগঞ্জে শ’খানেক শিক্ষার্থীকে টিকা দিয়ে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় নিয়মিত টিকা কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের কয়েকটি স্কুলে ১২০ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে করোনা টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। সেসব শিক্ষার্থী সুস্থ আছে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।
“মানিকগঞ্জে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী যে ১২০ জন শিক্ষার্থীর করোনার টিকা দেওয়া হয়েছিল, তাদের আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম। তাদের কারো কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তারা সবাই সুস্থ আছে,” বৃহস্পতিবার বেনারকে বলেন রোবেদ আমিন।
“সুতরাং স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার কার্যক্রম শুরুতে কোনো অসুবিধা নেই বলে মনে করছি আমরা,” বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হয়েছিল মানিকগঞ্জের শিক্ষার্থীদের। এই টিকা দিয়েই শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের ঢাকার ১২টি কেন্দ্রে স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে এবং পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলায় তা সম্প্রসারণ করা হবে বলে জানান তিনি। এর পাশাপাশি দৈনিক টিকা কার্যক্রমও চলমান থাকবে।
“এই শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি প্রায় শেষ দিকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের তালিকা পাওয়ার পর নিবন্ধনের জন্য তা আইসিটি মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে,” বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
“আশা করছি, স্কুলের ছেলেমেয়েদের ১ তারিখ (নভেম্বর) থেকে টিকা দিতে পারব,” জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতি দিন ৪০ হাজার শিশুকে টিকা দিতে পারবে।”
হিমাঙ্কের নিচে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ফাইজারের টিকা সংরক্ষণ করতে হয়। তাই এ টিকা সংরক্ষণ করতে আল্ট্রা কোল্ড ফ্রিজারের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া পরিবহনের জন্য থার্মাল শিপিং কনটেইনার বা আল্ট্রা ফ্রিজার ভ্যান লাগে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ঢাকায় স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের টিকা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত ১২টি কেন্দ্র শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
সারা দেশের স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকাদান কবে শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রতিটি জেলায় শিশুদের টিকা দেওয়া হবে। সেজন্য যেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ নেই, সেখানে তা করতে বলা হয়েছে।”
“আমরা প্রত্যেকটি জেলায় টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। একটু সময় নিয়ে সারা দেশেই শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে,” বলেন তিনি।
টিকা মজুদ ও প্রাপ্তি সাপেক্ষে এই টিকাদান চলতে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, “টিকা আমাদের কাছে যথেষ্ট আছে এবং আসছেও।”
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ফাইজার-বায়োএনকেটের ৭০ লাখের বেশি ডোজ টিকা পেয়েছে, যার পুরোটাই এসেছে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। নভেম্বরে আরো ৩৫ লাখ ডোজ টিকা আসবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার আসা সিনোফার্মের ৫৫ লাখ টিকাসহ দেশে মোট টিকা মজুদের পরিমাণ দুই কোটি বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশ মারা গেছেন ২৭ হাজার ৮৪১ জন, এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৫৫৩।
বিশ্বব্যাংক এবং আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটার চলতি সপ্তাহের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ করোনার সম্পূর্ণ ডোজ টিকা পেয়েছেন। টিকা দেওয়ার হারে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে সপ্তম অবস্থানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পরের দেশটি আফগানিস্তান।