আপত্তিকর ও অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি: আইনমন্ত্রী
2017.08.10
ঢাকা
সুপ্রিম কোর্ট বিচারকদের সংসদের মাধ্যমে অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দশ দিনের মাথায় সরকারের পক্ষ থেকে রায়ের আপত্তিকর বক্তব্যগুলো বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার মন্তব্যে সরকার ‘দুঃখিত’। রায়টিকে আইনগতভাবেই মোকাবেলা করে আপত্তিকর মন্তব্য এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে এই রায় রিভিউ করার বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
“তাই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যে, আমাদের নিরীক্ষায় মাননীয় প্রধান বিচারপতির রায়ে যে সব আপত্তিকর এবং অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য আছে সেগুলো এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগ আমরা নেবো,” বলেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি রায়ে মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন বেশ কিছু আপত্তিকর ও অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করেছেন বলেও জানান আনিসুল হক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিচার বিভাগ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে, যা দেশের জন্য শুভকর নয়।
গত ১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট বিচারকদের প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মাধ্যমে অপসারণের ক্ষমতা দিয়ে পাশ করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে।
এই রায়ের পর প্রধান বিরোধীদল বিএনপি সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে।
“মাননীয় প্রধান বিচারপতি তাঁর রায়ে অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা যেটা, এই মামলার সাথে একদমই সম্পর্কিত না—সেরকম বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি জাতীয় সংসদ সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন এবং এই প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন,” আনিসুল হক বলেন।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, ওই সকল রাজনৈতিক প্রশ্ন আদালত কর্তৃক বিচার্য বিষয় হতে পারে না... আমরা তাঁর এই বক্তব্যে দুঃখিত।”
তবে এই রায়ের কোনো অংশ বাদ দিতে হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করতে হবে বলে বেনারকে জানান সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ।
“আর রিভিউ আবেদনের পর আপিল বিভাগ যে রায় দেবে তা সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক। দুই পক্ষেরই উচিত একে অপরকে শ্রদ্ধা রেখে কাজ করা,” ব্যারিস্টার শফিক বলেন।
তবে সরকার মামলার রায় রিভিউ আবেদন করবে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু বলেননি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দীন আহমেদ বেনারকে বলেন, সরকারকে অবশ্যই মামলার রায় রিভিউয়ের জন্য আপিল করতে হবে।
“তবে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিচার বিভাগ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। রাষ্ট্রের দুটি অঙ্গের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান দেশের জন্য ভালো নয়,” বলেন প্রফেসর নিজাম।
“আমাদের বিবেচনায় ষোড়শ সংশোধনী দ্বারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরও সুদৃঢ় এবং স্বচ্ছ হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমরা গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করার, গণতন্ত্রের মৌলিক মন্ত্র চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স পদ্ধতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ষোড়শ সংশোধনী পাস করি,” আইনমন্ত্রী বলেন।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, ১৯৭২ সালে গণপরিষদ কর্তৃক প্রণীত মূল সংবিধান যেটাকে বুকে ধারণ করে জন্ম নিয়েছে সেটা অসাংবিধানিক হতে পারে না।”
১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়। তবে ১৯৭৭ সালে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান সংসদের সেই ক্ষমতা বাদ দিয়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রবর্তন করেন।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আইন পাশ হয়। এ বছর ৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তা বাতিল করে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করে।